রবিবার, ০৭ মে, ২০১৭, ১১:৫৩:৪৬

বিএনপি অফিসে ‘ইন্দুর’ ধরার কল দরকার

বিএনপি অফিসে ‘ইন্দুর’ ধরার কল দরকার

কাজী সিরাজ : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং মাঠের প্রকৃত বিরোধী দল বিএনপি দেশের প্রধান প্রধান দুই রাজনৈতিক দল— আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বীও বটে। পরবর্তী নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ‘ঘণ্টা’ বেজেছে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে।

জাঁকজমকপূর্ণ সেই সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে দলনেত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত নেতাদের পরবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই-পৌনে দুই বছর আগে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলাটাকে তাত্পর্যপূর্ণ বলেই ব্যাখ্যা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আর একটি প্রেরণাদায়ক কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। স্পষ্ট করে তিনি বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হোক তা আমি চাই না। ’

এ বক্তব্যের অন্তর্নিহিত রাজনৈতিক তাত্পর্যও অপরিসীম। প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তার দলের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন এবং ‘নৌকায়’ ভোট দেওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন। গত এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে ধানমন্ডিতে দলের নির্বাচনী অফিসও খোলা হয়েছে। দুটি বিষয় পরিষ্কার হয়েছে যে, দেশে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের স্বপ্ন জাতিকে দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সংসদের মেয়াদ অবসানের ৯০ দিন আগে বা নির্ধারিত সময়ের বেশ কিছু আগেই হতে পারে পরবর্তী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

তা না হলে এত আগে শাসক দলের নির্বাচনী তোড়জোড়ের প্রয়োজন ছিল না। লীগ সরকারের মন্ত্রী-মিনিস্টাররা নির্বাচনের সময় এবং নির্বাচনে কে এলো-না এলো তা নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যপূর্ণ বক্তব্য দিলেও তা তাদের দলীয় বক্তব্য বলে মনে হয় না। এতে জনমনে বিস্ময় জাগা স্বাভাবিক যে, এ ধরনের হাল্কা-চটুল মন্তব্যকারী মন্ত্রী-মিনিস্টাররা দলের নীতিনির্ধারণী কমিটি-সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হওয়া সত্ত্বেও দলের প্রকৃত অবস্থান সম্পর্কে কী করে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে চলেছেন!

এর অর্থ এভাবেই করা যায় যে, শাসকলীগ মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চা নেই। নীতিনির্ধারণী কমিটির সদস্যরাও জানেন না দল কী করবে! তারা অন্ধকারে ঢিল ছুড়ছেন। প্রধানমন্ত্রীর অ্যাকশন দলের সিদ্ধান্ত ও কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও নেতা-মন্ত্রীদের বক্তব্য তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটা অবশ্য আমাদের দেশের প্রধান সব রাজনৈতিক দলেরই অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের সংকট ও সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলার বহিঃপ্রকাশ।

নির্বাচনের কথা বিএনপিও বলছে। তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি শর্তযুক্ত করছে। শর্তের ব্যাপারে আবার স্থির থাকছে না। তবে যে দাবিতে তারা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে সেই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে এসেছে তারা। এখন নির্বাচনকালে একটি সহায়ক সরকার চায়। মাঝে মাঝে কেউ আবার নির্দলীয় সরকারের কথাও বলেন। যাই বলা হোক না কেন, বিএনপি এবার নির্বাচনে থাকছে এটা বোঝা যায়। একটা কথা তাদের সিনিয়র দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বলছেন যে, এবার আর কাউকে আনচ্যালেঞ্জড যেতে দেওয়া হবে না।

পর্যবেক্ষকদের ধারণা, এবার নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে তেমন বড় আকারের কোনো সংকট সৃষ্টি হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একবার নয়, একাধিকবার বলেছেন আগামী নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হোক তা তিনি চান না। যৌক্তিক কোনো কারণ দেখিয়ে যদি বিএনপি নির্বাচনে না আসে অপরদিকে সরকারের কোনো কোনো নীতিনির্ধারক যেভাবে বলছেন যে, ‘কারও জন্য নির্বাচন বসে থাকবে না, অর্থাৎ বিএনপিকে বাইরে রেখেই আগামী নির্বাচনও সেরে ফেলা হবে’, তাহলে সে নির্বাচন প্রশ্নহীন হবে কী করে? আমরা এই ধারণা অটুট রাখতে চাই যে, প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন তা ‘মীন’ করেছেন।

অর্থাৎ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন তিনি নিশ্চিত করবেন। তাই নিশ্চয়ই বিএনপি যাতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সে জন্য যা যৌক্তিক প্রয়োজন তা তিনি করবেন। নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নটির মীমাংসা হয়ে গেলে সমস্যা অনেকটাই মিটে যাবে। এটা প্রধানমন্ত্রী বোঝেন না তা ভাবার কোনো কারণ নেই। বিএনপি নেতাদের উপলব্ধি করা উচিত এ ইস্যুটির মীমাংসা নিশ্চয়ই করবেন প্রধানমন্ত্রী। তা না হলে গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও প্রশ্নহীন নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি তিনি পূরণ করবেন কী করে? ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল। প্রথমে না হলেও অপরিহার্যতা উপলব্ধি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেষ অবধি নির্বাচনকালে ‘সর্বদলীয় সরকার’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

রাজনৈতিক মহলে তখন খবর ছড়িয়েছিল যে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে। জোটভুক্ত একটি দলের বাধার কারণে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করে ফেলে দলটি। এমন খবরও ছিল যে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যখন নেওয়া হয় তখন ৩০০ আসনে প্রার্থী মনোনয়ন ও মনোনয়নপত্র দাখিলের কাজ সুচারুভাবে সম্পন্ন করার সময় না থাকায় ভিন্ন দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেত্রীর মাধ্যমে সময় বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়। সে চেষ্টা আর সফল হয়নি। তখন আবার শাসকলীগ ভয় পাচ্ছিল, বিএনপি নির্বাচনে এসে গেলে নির্বাচনী ফলাফল সরকারের প্রতিকূলে চলে যেতে পারে। তাই শেষ পর্যন্ত একতরফা নির্বাচনের সুযোগটা কাজে লাগায় সরকার।

সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব এবং পছন্দের মন্ত্রণালয় বেছে নেওয়ার ‘অফার’ অগ্রাহ্য করে বিএনপি ভুল করেছিল বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। নেতৃত্বের ভুলের খেসারত এখন দিচ্ছে দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী। জেল-জুলুম, মামলা-মোকদ্দমা এখন তাদের নিত্যসঙ্গী। বিরোধী দলে থাকলেও এমন বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ত না দলটি। এবার সরকারের ওপর অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটা চাপ নানা মহল থেকে আছে বলে মনে হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল দেশে-বিদেশে সর্বত্র।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহ, জাতিসংঘ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা সে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য বিবেচনা করেনি। প্রকাশ্যেই তারা তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে এবং বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দ্রুত অনুষ্ঠানের জন্য পরামর্শ দিয়ে আসছিল তারা। তাদের অবস্থান এখনো টলেনি। রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক বজায় রাখলেও উন্নয়ন ও বিনিয়োগে যে সহযোগিতা বাংলাদেশ পেতে পারত, গত সোয়া তিন বছরে বাংলাদেশ তা পায়নি। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ শক্তি ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে জাতীয় লক্ষ্য অর্জন করতে হলে উন্নয়ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম বন্ধুরাষ্ট্রের কার্যকর সহযোগিতা দরকার।

অভ্যন্তরীণ সম্পদ ও সামর্থ্য দিয়ে আমরা আমাদের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সক্ষমতা এখনো অর্জন করিনি তা স্বীকার করা দোষের কিছু নয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তো আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। যে সাহায্য-সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন তা নিশ্চিত করার জন্য দেশে একটি জবাবদিহিতামূলক প্রকৃত গণপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার অপরিহার্য। একটি অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই তেমন একটি সরকার উপহার দিতে পারে, যে সরকারের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা আমাদের জাতীয় মর্যাদাও অনেক উন্নত স্তরে পৌঁছে দেবে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও তা উপলব্ধি করছেন বলে ধারণা করা যায় একটি প্রশ্নহীন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যাপারে তার দৃঢ় অবস্থান দেখে।

তাই ধরে নেওয়া যায়, ‘সর্বদলীয়’ নামে হোক না অন্য কোনো নামে হোক, নির্বাচনকালীন একটি গ্রহণযোগ্য সরকারের ফর্মুলা তিনি বের করবেন। কোন মন্ত্রী, কোন লীগ নেতা বা জোট নেতা কী বলছেন তাতে কিছু যাবে-আসবে না। বিএনপিও নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে তাদের আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। তারা এখন আর নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাইছে না। নির্বাচনকালীন একটি সহায়ক সরকার চায় তারা। এটি একটি উত্তম প্রস্তাব। ক্ষমতা হারানোর পর এ পর্যন্ত এমন একটি উঁচুমানের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে বিএনপিকে আর দেখা যায়নি। সংবিধান সংশোধন করা ছাড়া আবার নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া এখন সম্ভব নয়।

যে সরকার নিজের ‘সাত-পাঁচ’ ভেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে তারা সে ব্যবস্থা আবার ফিরিয়ে আনবে এটা আশা করা যায় না। এটা করলে বিএনপিকে করতে হবে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। পর্যবেক্ষকদের মন্তব্য হচ্ছে, আগামী নির্বাচনে সংবিধান সংশোধন করার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বিজয়ী হলে বিএনপিও আর তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনবে না। তারাও নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার ওপর প্রভাব বিস্তারকারী অবস্থানে থাকার সুযোগ নিতে চাইবে। এই বাস্তবতায় সবার সমন্বয়ে একটি নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার দিকে এগোনো উভয়পক্ষের জন্যই মঙ্গলজনক। ‘কেউ হারলো না, কেউ জিতলো না’ এমন একটা ব্যাপার হবে।

সরকারি দলের কোনো কোনো ‘পণ্ডিত’ বলছেন, নির্বাচনকালীন কোনো সরকার ব্যবস্থা হলেও তাতে বিএনপিকে রাখার সুযোগ নেই যেহেতু তারা সংসদে নেই। এসব বাকাওয়াজ। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে রাজনৈতিক সমঝোতা অপরিহার্য হয়ে পড়লে পার্লামেন্টে সে ব্যবস্থা পাস করিয়ে নেওয়া যাবে অথবা ব্যবস্থাটি পরবর্তী সংসদের প্রথম অধিবেশনে অনুমোদন করিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হতে পারে পঞ্চম সংসদ নির্বাচনকালে বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের ক্ষেত্রে যেমনটি হয়েছিল। ব্যাপারটা নির্ভর করবে মূল দুই পক্ষের ব্যবস্থাটির অপরিহার্যতার উপলব্ধি, সদিচ্ছা ও সম্মতির ওপর। পরিস্থিতি এ বিষয়ে অনুকূল বলেই মনে হয়।

একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা ক্ষমতাসীন সরকারের জন্যও খুবই জরুরি; সেইফ এক্সিটের জন্যও এটা তাদের দরকার। আর ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মর্যাদা ও ভাবমূর্তি বিশ্বে পৌঁছে যাবে অনন্য এক উচ্চতায়। বিএনপির জন্যও এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা জরুরি। দলের ‘ভোটকারেন্সি’ বেগম খালেদা জিয়ার বয়স বেড়েছে। স্বাস্থ্যও ভালো নয়। পরবর্তী নির্বাচনে তার বয়স আরও পাঁচ বছর বাড়বে। তখন কি তিনি ভোটযুদ্ধে সেনাপতির দায়িত্ব পালনে সক্ষম থাকবেন? দলে রাজনৈতিক অবদান রাখার মতো যে কজন হাতেগোনা ব্যক্তি আছেন তাদের কারও কারও বয়স বেগম জিয়ার চেয়েও বেশি।

বিএনপির শতাধিক নির্বাচনে অংশগ্রহণেচ্ছুক ব্যক্তি আছেন যাদের বয়সও সত্তর প্লাস-মাইনাস। বিএনপি একেবারেই প্রবীণ নেতৃত্বশূন্য হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ কর্মী-ক্যাডারনির্ভর একটি সংগঠন। নানা বয়সের কমপক্ষে ১০০ জুনিয়র নেতা আছেন রাজনৈতিক অতীত অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ। শেখ হাসিনা এবং দলের সিনিয়র নেতাদের অবর্তমানেও নেতৃত্ব দেওয়ার লোক আওয়ামী লীগে আছে। সেভাবে নেতৃত্বও নির্মাণ করে রাখা হয়েছে। তাছাড়া দলটি ‘প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে গড়ে উঠেছে। বিএনপি এ ক্ষেত্রে বড়ই দুর্বল। বিএনপি বা তাদের কোনো মিত্র পক্ষ ক্ষমতায় যেতে না পারলে তারেক রহমানের দেশে আসাটাই অনিশ্চিত।

সে ক্ষেত্রে বেগম জিয়া এবং ৭৫ থেকে ৮০ বছর বয়সী কজন ছাড়া বিএনপির নেতৃত্ব দেবে কে? তেমন একটি নেতৃত্ব কাঠামো গড়ার কোনো চেষ্টাই দলটিতে লক্ষ্য করা যায়নি। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ভিত্তিই পায়নি দলটি। বংশধারার রাজনীতির এটা কুফল। অথচ দলটিতে রাজনৈতিক কেরিয়ার সমৃদ্ধ নবীন-মধ্যবয়সী রাজনৈতিক নেতা, সংগঠকের অভাব নেই। নেই শুধু তাদের মূল্য। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে দারুণভাবে কাজে লাগাতে পারে বিএনপি। ফলাফল যাই হোক দলটির সাংগঠনিকভাবে দাঁড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে।

‘নির্বাচনে যাব-যাব না’— এ ধরনের বায়বীয় অবস্থানে না থেকে বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা উচিত সর্বাগ্রে এবং তা এক্ষুনি। এরপর সরকার ব্যবস্থা নিয়ে নয়, (এ ব্যাপারে সংকট থাকবে না। সরকারের আগেকার প্রস্তাবিত সর্বদলীয় সরকার আর বিএনপির বর্তমান সহায়ক সরকারের মধ্যে দূরত্ব খুব বেশি নয়) বিএনপির উচিত তাদের সব বন্দী নেতার মুক্তি, নেতা-কর্মীদের সব মামলা প্রত্যাহার এবং গুম খুন বন্ধের দাবিতে আন্দোলন সৃষ্টি করা। সাহসী হওয়া।

এ ব্যাপারে অভ্যন্তরীণ জনমত গঠনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও মতামত গঠনে সচেষ্ট হওয়া। এসব কাজে দলের বিশ্বস্ত ও নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের ওপর নির্ভর করতে হবে, কর্মচারীদের ওপর নয়। তাদের সঙ্গে পার্টি চেয়ারপারসনের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডটা আদায় করে নিতে হবে। ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার অভিলাষী কোনো প্রশাসন-নির্ভর সরকার প্লেটে সাজিয়ে তা বিরোধী দলের কাছে পাঠিয়ে দেয় না। প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আর রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ৭০-৮০ জনের ‘মহাসমাবেশে’ লম্বা লম্বা কথা বলে বা বিরক্তিকর বিবৃতিসর্বস্ব রাজনীতি করে তা আদায় করা সম্ভব নয়।

মাঠে নামার সাহস দেখাতে হবে। খারাপ ‘আমলনামার’ কারণে যারা নামতে পারবে না তাদের ছাড়াই কিছু করার চিন্তা করতে হবে। এমপি-মন্ত্রী হওয়ার খায়েশ লালন করে জেলকে ভয় পেলে চলবে কেন? আর একটা জরুরি কাজ করতে হবে দলটিকে। বিএনপির ঘরে যে সব ‘ইন্দুর’ ঢুকেছে তা থেকে দলকে মুক্ত করতে হবে। ইন্দুর ধরার কল বসাতে হবে গুলশান-পল্টন অফিসে। তা না হলে এরা কুটকুট করে কাটতে কাটতে বিএনপি নামক গণনির্ভরতার ঘরটিই ধসিয়ে দেবে।  -বিডি প্রতিদিন

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।
৭ মে, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে