রবিবার, ১৪ মে, ২০১৭, ০১:১২:৫৫

রিমান্ডে মুখ খুলেছে সেই সাফাত ও সাদমান

রিমান্ডে মুখ খুলেছে সেই সাফাত ও সাদমান

নিউজ ডেস্ক : রাজধানীর বনানীর অভিজাত ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে সম্ভ্রমহানীর বিষয়টি কবুল করলেও ভিডিওচিত্র ধারণের বিষয়ে মুখ খুলছে না গ্রেফতার সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফ। এ বিষয়টির সুরাহার জন্য সাফাত আহমেদের বডিগার্ড আবুল কালাম আজাদ, গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও অপর আসামী নাঈম আশরাফকে প্রয়োজন বলছে পুলিশ।

তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এদের গ্রেফতার করতে পারলে অনেক অস্পষ্ট বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে। অন্যদিকে স্পর্শকাতর এ মামলার তদন্তের প্রয়োজনে দ্য রেইন ট্রি হোটেলের মালিক মাহির হারুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে এরই মধ্যে গতকাল মানবাধিকার কমিশনের একটি প্রতিনিধিদল এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি দল রেইন ট্রি হোটেল পরিদর্শন করেছে।

বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে সিলেটের পাঠানটুলা এলাকার একটি বাড়ি থেকে সাফাত ও সাকিফকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সাফাত আহমেদ আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে আর সাদমান সাকিফের বাবা রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার অভিজাত রেস্তোরাঁ ‘পিকাসো’ ভবনের মালিক। শুক্রবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক ইসমত আরা এমি গ্রেফতার দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সাফাতকে ছয় দিন এবং সাকিফকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন। তাদের মিন্টো রোডের ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

সূত্র বলছে, ২৮ মার্চ রেইন ট্রি হোটেলে সম্ভ্রমহানীর ঘটনার সময় উপস্থিত দুই ছাত্রীর বন্ধু শাহরিয়ার আহমেদকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। একপর্যায়ে শাহরিয়ার আহমেদকে সাফাতের মুখোমুখি করা হয়। শাহরিয়ার পুলিশকে বলেন, সাফাতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তার দুই বান্ধবীর আমন্ত্রণে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। ওই দিন সঙ্গে তার গার্লফ্রেন্ডও ছিল। সেদিন তার গার্লফ্রেন্ডকেও নির্যাতন করতে চেয়েছিল সাফাত ও নাঈম। এ ক্ষেত্রে বেশি আগ্রাসী ছিল নাঈম।

তিনি বলেন, ‘এ সময় আমি ও আমার বান্ধবী সাফাত ও নাঈমের পা জড়িয়ে ধরে তাকে নষ্ট না করতে অনুরোধ করি। সাফাত আমাদের অনুরোধে সাড়া দিয়েছিল বলে আমার গার্লফ্রেন্ডের সম্ভ্রমহানী হয়নি। তবে আমাকে বেধড়ক পিটিয়েছিল সাফাত, সাকিফ ও নাঈম। মাথায় পিস্তল ধরে উল্টাপাল্টা স্বীকারোক্তি আদায় করেছিল।’

একপর্যায়ে শাহরিয়ারকে সামনে রেখে সাফাত ও সাকিফকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শাহরিয়ারকে মারধরের বিষয়টি স্বীকার করে সাফাত। চাঞ্চল্যকর এই সম্ভ্রমহানীর মামলার চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত সহায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য ডিবির যুগ্ম-কমিশনার আবদুল বাতেন। গতরাতে তিনি বলেন, সম্ভ্রমহানীর ভিডিওচিত্রের ব্যাপারে মুখ খুলছে না গ্রেফতার দুজন। তবে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। তদন্তের প্রয়োজনে ঘটনার সঙ্গে বিভিন্নভাবে জড়িত রয়েছে এমন অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হতে পারে।

তিনি বলেন, এখনো ধরা পড়েনি এমন তিন আসামিকে গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ জন্য একাধিক টিম কাজ করছে। শিগগিরই হয়তো তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, কীভাবে ঘটনার সূত্রপাত, দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে ধর্ষকদের পরিচয় কীভাবে, হোটেলে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে কে আমন্ত্রণ করেছিল, সম্ভ্রমহানীর বিষয়টি কি তাদের পূর্বপরিকল্পিত, নাকি তাত্ক্ষণিক সিদ্ধান্ত, কেন সম্ভ্রমহানীর ভিডিওচিত্র ধারণ করা হয়, কে ভিডিও করেছিল, কার কী ভূমিকা ছিল এসব বিষয়ে গ্রেফতার দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর মধ্যে অনেক প্রশ্নেরই উত্তর দিয়েছে তারা। তবে অনেক কিছুই এড়িয়ে যাচ্ছে।

যেভাবে গ্রেফতার সাফাত-সাকিফ : বনানীতে সম্ভ্রমহানীর মামলা হওয়ার পর আত্মগোপনে চলে যায় পাঁচ আসামি। এর আগ পর্যন্ত পুলিশকে ম্যানেজ করে রাখে তারা। গণমাধ্যমে বিষয়টি ফলাও করে প্রকাশিত হলে আসামিদের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। যদিও তখন সফলতা আসেনি। পরে পুলিশ সদর দফতরের তত্ত্বাবধানে তাদের গ্রেফতারে একাধিক টিম কাজ শুরু করে। অন্যদিকে লোকচক্ষু থেকে নিজেদের আড়াল করতে সম্ভ্রমহানীর মামলার প্রধান আসামি সাফাত ও সাকিফ নিজেদের চেহারায়ও পরিবর্তন আনার চেষ্টা করে। তবে শেষরক্ষা হয়নি। তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভুক্তভোগীরা যেদিন বনানী থানায় তাদের সম্ভ্রমহানীর বিষয়ে অভিযোগ দেন, মূলত সেদিন থেকেই সাফাত আহমেদ ও সাদনান সাকিফ পালানোর প্রস্তুতি নিতে থাকে।

৮ মে তারা ঢাকা থেকে একটি প্রাইভেটকারে করে সিলেটে যায়। প্রথমে তারা সিলেটের দক্ষিণ সুরমার একটি রিসোর্টে ওঠার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে জালালাবাদ এলাকায় অবস্থিত এক লন্ডন প্রবাসীর বাড়িতে তারা আশ্রয় নেয়। ওই বাড়ি থেকেই বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দফতরের একটি বিশেষ টিম, ডিবি ও সিলেটের স্থানীয় পুলিশ গ্রেফতার করার পরপর কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদের নিয়ে ঢাকার নিয়ে আসা হয়।

আভিযানিক দলের এক সদস্য জানান, গ্রেফতারের আগে সাফাত ও সাকিফ তাদের মোবাইল ফোন ও অন্যান্য ডিভাইস বন্ধ রেখেছিল। তবে সাফাতের এক মামার মোবাইল ফোনে তাদের দুজনের ফোনালাপের প্রমাণ পাওয়া যায়। ওই মামাকে আটকের পরই সাফাত ও সাকিফের অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায়। সাফাতের মামা পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, ঘটনাটি শোনার পর প্রথমে ভাগ্নে ও তার বন্ধুকে সাহায্য করতে চাননি তিনি।

পরে রাজি হয়ে তার লন্ডন প্রবাসী বন্ধুর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। তার সম্মতিতে তাদের থাকার ব্যবস্থা করেন তিনি। তার অবর্তমানে বাড়িটি দেখাশোনা করতেন একজন তত্ত্বাবধায়ক। গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে সাফাত পালানোর বিষয়ে পুলিশকে জানিয়েছে, ঢাকা থেকে পালানোর পর তার গ্রামের বাড়ি সিলেটে এসে এক মামার সহযোগিতা নেয় সে। পরে ওই মামাই তার লন্ডন প্রবাসী এক বন্ধুর বাড়িতে তাদের থাকার ব্যবস্থা করেন।

ঢাকায় নিয়ে আসার পর ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে যুগ্ম-কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায় জানান, বাদীর আগ্রহে মামলাটি ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়। এরপর তারা প্রকৃত তদন্ত শুরু করেন। পাশাপাশি মামলাটির গুরুত্ব অনুধাবন ও সংবেদনশীলতার বিষয়টি বুঝতে পেরে পুলিশের চারটি টিম সমন্বয় করে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে গ্রেফতার অভিযান চালায় এবং আসামিদের ধরার জন্য তৎপরতা শুরু করে।

কৃষ্ণপদ বলেন, মামলার তথ্য প্রমাণ ও ফিজিক্যাল এভিডেন্স, ডিজিটাল ও মেডিকেল ফরেনসিক আমরা সংগ্রহ করেছি। এ মামলার তদন্ত কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে যাবে।

এজাহার ও ভিকটিমের জবানবন্দি : মামলার নথিসূত্রে জানা গেছে, ২৮ মার্চ বন্ধুর সঙ্গে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়ে রাজধানীর বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে সম্ভ্রমহানীর শিকার হন দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী। ওই ঘটনায় ৬ মে রাজধানীর বনানী থানায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে সম্ভ্রমহানীর মামলা করেন তারা। মামলার এক আসামি সাফাত আহমেদ, যার বাবা আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ। অন্য আসামিরা হলেন সাদমান সাকিফ, যিনি পিকাসো রেস্টুরেন্টের মালিক হোসেন জনি শিকদারের ছেলে। এ ছাড়া নাঈম আশরাফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও তার দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদও এ মামলার আসামি।

বৃহস্পতিবার সম্ভ্রমহানীর শিকার দুই ছাত্রী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। ঢাকা মহানগর হাকিম নুরুন্নাহার ইয়াসমিন তার খাসকামরায় তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন। আদালত সূত্রে জানা যায়, সম্ভ্রমহানীর শিকার দুই ছাত্রী ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।

জবানবন্দিতে দুই ছাত্রী জানান, ২৮ মার্চ বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিয়ে তাদের নেওয়া হয়। সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী তাদের বনানীর ২৭ নম্বর রোডের ওই হোটেলে নিয়ে যান। হোটেলে যাওয়ার আগে দুজনই জানতেন না সেখানে পার্টি হবে। এ সময় তাদের সঙ্গে শাহরিয়ার নামের এক বন্ধু ছিলেন। তাদের বলা হয়েছিল, এটা একটা বড় অনুষ্ঠান, অনেক লোকজন থাকবে। হোটেলে যাওয়ার পর সাফাত ও নাঈমের সঙ্গে তারা আরও দুই তরুণীকে দেখেন। সেখানে তারা ভদ্র কোনো লোককে দেখেননি। পরিবেশ ভালো না লাগায় শাহরিয়ারসহ দুই তরুণী চলে আসতে চেয়েছিলেন। তখন আসামিরা শাহরিয়ারের কাছ থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে নেয় এবং তাকে মারধর করে।

এরপর দুই তরুণীকে অস্ত্রের মুখে একটি কক্ষে নিয়ে যায়। সম্ভ্রমহানী করার সময় সাফাত তার গাড়িচালককে ভিডিওচিত্র ধারণ করতে বলে। আর নাঈম আশরাফ মারধর করে। তারা এ ঘটনা জানিয়ে দেবেন বলে জানান। এরপর আসামি সাফাত তার দেহরক্ষীকে ওই দুই তরুণীর বাসায় পাঠায় তথ্য সংগ্রহের জন্য। তারা এতে ভয় পেয়ে যান। লোকলজ্জার ভয় এবং মানসিকভাবে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন তারা। আসামিরা ভিডিওচিত্র বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। তাদের কথামতো না চললে কিংবা ২৮ মার্চের ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রথমে থানা পুলিশ মামলা নিতে অস্বীকার করে। আসামি ও আসামির পরিবার সম্ভ্রমহানীর ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।

এদিকে সম্ভ্রমহানীর অভিযোগে করা মামলায় ওই দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর পরনের কাপড়সহ আলামতের রাসায়নিক পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। এর আগে আলামত পরীক্ষার জন্য বনানী থানার পরিদর্শক আবদুল মতিনের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর হাকিম দেলোয়ার হোসেন এ আদেশ দেন।

দুই কমিটি : স্পর্শকাতর এ ঘটনায় ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে তদন্ত সহায়ক এবং পুলিশের গাফিলতি খতিয়ে দেখতে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত সহায়ক চার সদস্যের কমিটির প্রধান যুগ্ম-কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ডিসি (ডিবি উত্তর)  শেখ নাজমুল আলম, ডিসি গুলশান বিভাগ মোস্তাক আহমেদ, ডিসি উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ ফরিদা ইয়াসমিন।

এ ছাড়া এ ঘটনায় বনানী থানায় মামলা গ্রহণে গড়িমসি ও তরুণীদের হয়রানির অভিযোগ বিষয়েও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর প্রধান হলেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপারেশন অ্যান্ড ক্রাইম) মিজানুর রহমান। সদস্য হিসেবে রয়েছেন যুগ্ম- কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় ও যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন। তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা।

রেইন ট্রিতে মানবাধিকার কমিশন ও ডিএনসি : চাঞ্চল্যকর দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সম্ভ্রমহানীর ঘটনায় তদন্তে ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেল পরিদর্শন করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত দল এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি দল। মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত কমিটির প্রধান নজরুল ইসলাম ও সদস্য শরীফ উদ্দিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত হোটেলে অবস্থান করেন।

পরিদর্শন শেষে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কমিটির কার্যপরিধির একটা অংশ হিসেবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলা, যে কক্ষে সম্ভ্রমহানীর ঘটনার অভিযোগ তা আমরা পরিদর্শন করেছি, সিসিটিভি ক্যামেরা কোনটা কোথায় তা আমরা দেখেছি। সিকিউরিটি, ম্যানেজমেন্ট ও যারা খাবার পরিবেশন করেছেন এ রকম ৮-৯ জন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। ’

তিনি বলেন, ‘ভিকটিম ও অভিযুক্তরা এখানে এসেছিল। এখানে বুকিং দেওয়া, কখন আসছিল, তা শুনেছি। হোটেল কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা (অভিযুক্তরা) এখানে সাড়ে ৩টার দিকে এসেছিল। জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কথা বলে অভিযুক্তরা অতিথিসহ এসেছিল বলে আমরা পূর্ণ বিবরণ পেয়েছি। ’

সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সম্পর্কে কোনো তথ্য পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হোটেলে কর্তৃপক্ষ ২৮ দিনের বেশি সময়ের কোনো সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ রাখে না বলে জানিয়েছে। তাদের মতে, তারা হোটেলে ওই রাতে অস্বাভাবিক কিছু দেখেনি। আমরা সবটা পাওয়ার পর ও ভিকটিমদের সঙ্গে কথা বলার পর প্রতিবেদন দাখিল করব। নির্ধারিত ১৫ দিনের মধ্যেই প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। ’

বেলা সোয়া ১১টায় হোটেলটিতে অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি)। তবে হোটেলটিতে বেআইনি কিছু পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ডিএনসির গুলশান জোনের পরিদর্শক দলের নেতৃত্বে থাকা গুলশান জোনের পরিদর্শক ওবায়দুল কবীর।

বেলা সোয়া ১১টার দিকে হোটেলে ওবায়দুল কবীরের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের একটি দল অভিযান পরিচালনা করে। পরে ওবায়দুল কবীর বলেন, ‘অভিযানে আমরা হোটেলের সবকিছু তল্লাশি করেছি। তবে হোটেল থেকে বেআইনি কিছু পাইনি।’ অভিযান চালানোর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘কেবল এই হোটেল নয়, ঢাকা শহরের সব হোটেলেই নজরদারি বেড়েছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। ’

বেলা সোয়া ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার ও ইন্টারনাল অপারেশন এক্সিকিউটিভ ফারজান আরা রিমি। তিনি বলেন, ২৮ মার্চ ঘটনাটি ঘটলেও হোটেলটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয় ৯ এপ্রিল। ঘটনার দিন হোটেলের আর্চওয়ে কানেক্টেড না থাকায় আসামিরা মদ নিয়ে হোটেলে ঢুকেছিল কি না, তা বলতে পারছেন না।

তিনি বলেন, অভিযানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও মানবাধিকার কমিশন অস্বাভাবিক কিছু পায়নি। ঘটনার দিনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেদিন সাফাত, সাকিফ, নাঈমরা অস্ত্র ফ্রন্ট ডেস্কে জমা দিয়ে হোটেলে প্রবেশ করেছিল। ফলে সম্ভ্রমহানীর শিকার দুই তরুণী অস্ত্রের মুখে সম্ভ্রমহানীর যে অভিযোগ করেছে, তা মিথ্যা। হোটেলের প্রতিটি রুম সাউন্ডপ্রুফ। ফলে রুমের মধ্যে কেউ চিৎকার করলেও তা বাইরে থেকে শোনার উপায় নেই।

হোটেল কর্তৃপক্ষের প্রতি গাফিলতির যে অভিযোগ করেছেন দুই তরুণী, সে সম্পর্কে হোটেলের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল কি না, সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে রিমি বলেন, ‘এটা অনেক দিন আগের ঘটনা। এটা আমাদের মেমোরিতে নেই।’

অনেক দিন আগের ঘটনা হলেও এটা তো আলোচিত একটি ঘটনা। এটা হোটেল কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেছে কি না, সে প্রসঙ্গে রিমি আবারও বলেন, ‘এত দিন আগের ঘটনা আমাদের পক্ষে মনে করা সম্ভব না। এ ছাড়া ২৮ দিনের বেশি আমরা ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষণ করি না। ফলে ওই দিনের ঘটনা আমাদের পক্ষে বলা সম্ভব না।’ বিডি প্রতিদিন
১৪ মে, ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে