মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৩:১২:৩৩

যে দিকে তাকিয়ে আছে বিএনপি

যে দিকে তাকিয়ে আছে বিএনপি

নজরুল ইসলাম : বিএনপির সবার নজর এখন লন্ডনের দিকে। দলের নেতাকর্মীদের বেশিরভাগ আলোচনাই হচ্ছে খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর ঘিরে। লন্ডন সফরকে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে দলের নেতাকর্মীরা। আজ রাত সাড়ে ৯টায় লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ছেন তিনি।

দলীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই দলের মধ্যে আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বৈঠক। ওই বৈঠকেই মহাসচিব নির্বাচনসহ দলের সাংগঠনিক বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হবে বলে নেতাকর্মীদের ধারণা। অবশেষে তাদের প্রত্যাশিত সে বৈঠক হতে চলেছে। এ ছাড়াও যুক্তরাজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গেও খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ হওয়ার কথা রয়েছে।

খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর প্রসঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান প্রতিবেদককে বলেন, চেয়ারপারসনের এ সফরকে আমি এভাবে মূল্যায়ন করতে চাই, তা হচ্ছে- কলা বেচা ও রথ দেখার মতো। আমাদের দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগে থেকেই লন্ডনে রয়েছেন, আর দলীয়প্রধান চিকিৎসার জন্য সেখানে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে দেশের চলমান রাজনীতি ও দলের সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে, সিদ্ধান্ত হবে এটাই স্বাভাবিক। এছাড়া কূটনীতিক দিক দিয়েও গুরত্বপূর্ণ এ সফর।

জানা গেছে, লন্ডন ছাড়াও তিনি ইউরোপের কয়েকটি দেশে যেতে পারেন। এ সফরে খালেদা জিয়া বিএনপির অবস্থান তুলে ধরবেন। বিশেষ করে বিএনপি একটি প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল সেটাই বোঝানোর চেষ্টা করা হবে। এছাড়া ক্ষমতায় গেলে কোনো প্রতিহিংসার রাজনীতি ও জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয়া হবে এ সফরে।

তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের দাবি, দলের চেয়ারপারসন তার চোখের চিকিৎসা করাবেন এবং কিছুদিন সেখানে অবস্থানরত বড় ছেলে তারেক রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাবেন। দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, এটা খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সফর। তবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দুজন রাজনৈতিক নেতা। সেখানে রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা হবে না- তা বলা যাবে না।

দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খালেদা জিয়ার এ সফরের মধ্যদিয়ে ঝুলে থাকা সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হবে। যার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে- খালেদা জিয়া কারাবন্দি হলে কিভাবে দল চলবে, দলের মহাসচিব নির্বাচন, জাতীয় কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ, দলের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন, ঢাকা মহানগর কমিটি গঠন। দলের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন ও ঢাকা মহানগর কমিটি (উত্তর ও দক্ষিণ) ভাগ করা সংক্রান্ত একটি খসড়া খালেদা জিয়া নিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানা গেছে।

দলীয় সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকে দলছুট নেতাদের দলে আনার বিষয়েও আলোচনা হবে। বিশেষ করে এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ ও বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট ডা. অধ্যাপক বি. চৌধুরীর বিষয়ে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে সামনের দিকে চলতে চান খালেদা জিয়া। ইতিমধ্যে তাদের সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ড. এমাজউদ্দীন আহমদ কথা বলেছেন- যা বিএনপি চেয়ারপারসনকে অবহিত করা হয়েছে।

এ ছাড়াও খালেদা জিয়ার এ সফরে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠনের বিষয়েও সিদ্ধান্ত হবে। বিশেষ করে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, ওলামা দল, মহিলা দল, জাসাস, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দলের মেয়াদোত্তীর্ণ- এসব কমিটি নিয়ে আলোচনা হবে।

জানা গেছে, অঙ্গ সংগঠনের বাইরেও আন্দোলনে বিএনপির কোন নেতার কি ভূমিকা ছিল, কারা দলের নির্ধারিত মাসিক চাঁদা দেননি, কেন্দ্রীয় কোন কোন নেতা কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়ার পর একটা মিটিংয়েও ছিলেন না এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন না তাদের একটি তালিকা করা হয়েছে। তবে ওই তালিকায় কারা কারা আছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি।

এ সফরে খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী হিসেবে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা এবিএম আবদুস সাত্তার ও তার গৃহকর্মী। বিএনপির একাধিক নেতা জানান, মালয়েশিয়া থেকে কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি, তার দুই মেয়ে জাহিয়া রহমান ও জাফিয়া রহমানও লন্ডনে যাবেন।
২০০৬ সালের পর লন্ডনে খালেদা জিয়ার এটি দ্বিতীয় সফর। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে দেশে ফেরার পথে তারেক রহমানকে দেখতে তিনি লন্ডন গিয়েছিলেন।

আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে বিএনপি চেয়ারপারসন দেশে ফিরবেন বলে জানা গেছে। খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহানসহ কয়েকজনকে দলের সার্বিক বিষয় দেখভাল করতে নির্দেশনা দিয়ে যেতে পারেন বলে একটি সূত্র জানায়।-যুগান্তর
১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে