রবিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৭, ০১:৪৮:২৩

খালেদা জিয়ার লন্ডন মিশনের অন্তরালে কী?

খালেদা জিয়ার লন্ডন মিশনের অন্তরালে কী?

কাজী সিরাজ : শিডিউল ঘোষণার আগে একাদশ সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক বাগযুদ্ধ বেশ জমে উঠেছে এবং মানুষ তা উপভোগ করছে। প্রধান দুই পক্ষ যেভাবে কথাবার্তা বলছেন, তাতে যদি তারা অটল থাকেন তাহলে একটি অংশগ্রহণমূলক ও সর্বজনগ্রাহ্য নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় ঘনীভূত হতে থাকবে।

কিন্তু ক্ষমতাসীন লীগ সরকার কি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনের মতো আরেকটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের ঝুঁকি নিতে পারে? আবার সরকারি দলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ও মাঠের প্রকৃত বিরোধী দল বিএনপিও কী গত নির্বাচনের মতো আগামী নির্বাচনও বর্জন করার সর্বনাশা পক্ষে পা দিতে পারে?

প্রধান দুই দলের কেউই বিগত নির্বাচনে যে ভুল করেছে, আবারও সে ভুল করবে বলে মনে হয় না। এটা সবারই জানা যে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ৩০০ সরাসরি আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে কোনো নির্বাচন-ভোটাভুটিই হয়নি।

অথচ বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৫(২) অনুচ্ছেদে স্পষ্ট বলা আছে যে, ‘একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকাসমূহ হইতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আইনানুযায়ী নির্বাচিত তিনশত সদস্য লইয়া এবং এই অনুচ্ছেদের (৩) দফার কার্যকরতাকালে উক্ত দফায় বর্ণিত সদস্যদিগকে (সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য) লইয়া সংসদ গঠিত হইবে; সদস্যগণ সংসদ-সদস্য বলিয়া অভিহিত হইবেন।’

কিন্তু আমরা দেখলাম, ১৫৩ আসনে কোনো নির্বাচনই হয়নি। অত্যাশ্চর্য এক ‘সমঝোতার গণতন্ত্র’ দেখলাম আমরা, দেখলো দেশবাসী। জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসনগুলো সমঝোতার মাধ্যমে ভাগাভাগি করে নেওয়া হয়। এমনও বলা হয়েছিল, বিএনপি সমঝোতায় এলে তাদেরও কিছু আসন ছেড়ে দেওয়া হতো। ভাগ্যিস বিএনপি সম্মত হয়নি, তাহলে তো ৩০০ আসনে সবাই বিনাভোটে ‘অটো’ এমপি হয়ে যেতেন।

ব্যবস্থাটি অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশে ইহজিন্দেগিতে আর নির্বাচন হতো না এবং বাংলাদেশ বিশ্বে ‘সমঝোতার ভোটবিহীন সংসদের’ রোল মডেল হয়ে যেত। বলা হয়েছে (অবশ্যই ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে) নির্বাচনে আসা না আসা যে কোনো দলের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। কেউ নির্বাচনে না এলে তো জোর করে আনা যায় না। তাছাড়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারে সংবিধানে কোনো বাধা নেই। এর আগেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনেকের নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড আছে।

কিন্তু কত? ৩০০ আসনের মধ্যে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ১৫১ আসনের বেশি কবে বিনাভোটে ‘নির্বাচিত’ হয়েছেন? শাসক লীগ এক্ষেত্রে একটি ‘বিশ্বরেকর্ড’ করে ফেলেছে, যে রেকর্ড কেউ কখনো ভঙ্গ করতে পারবে না। নির্বাচন ছাড়াই যে ১৫৩টি আসন ভাগাভাগি করে নেওয়া হলো, ‘আমরা আর আমাদের মামুদের’ মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমেই যদি আপসে তা করা হতো তাহলেও সংবিধানের ৬৫(২) অনুচ্ছেদ মানা হয়েছে বলে দাবি করা যেত। সে ধৈর্যও ছিল না ক্ষমতাসীনদের।

নির্বাচনটি যদি সম্পন্ন করা না যেত তাহলে সাংবিধানিক শাসনের ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন হতো বলে আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দেন সরকারি দলের লোকেরা, মন্ত্রী-মিনিস্টাররা। কিন্তু নির্বাচন বর্জনকারীদের নির্বাচনে আনার দুটি সুযোগ তো ছিল; ১. নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় ও নির্বাচনের তারিখ কিছুটা পিছিয়ে দিয়ে বর্জনকারীদের ফিরে আসার সুযোগ দেওয়া, অন্তত দুই সপ্তাহ সময় নির্বাচন কমিশনের হাতে ছিল।

২. সংবিধান নির্দেশিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন সবাইকে নিয়ে করা না গেলে করণীয় সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা চাওয়া। টাঙ্গাইলে লতিফ সিদ্দিকীর শূন্য আসনে সংবিধান নির্দেশিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে না পেরে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা প্রার্থনা করা হয়েছিল এবং আদালতের নির্দেশে সেই উপ-নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয়েছে ঘোষিত তারিখের প্রায় এক বছর পর। গোটা সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি তো ছিল আরও গুরুত্বপূর্ণ। বিডি প্রতিদিন

এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে