বৃহস্পতিবার, ০৩ আগস্ট, ২০১৭, ১২:৩৯:২১

সৌদি থেকে সানিয়ার বাঁচার আকুতি ‘ওরা আমারে মেরে ফেলবে’

সৌদি থেকে সানিয়ার বাঁচার আকুতি ‘ওরা আমারে মেরে ফেলবে’

শুভ্র দেব : ‘আমার হাত পা পুড়িয়ে দিয়েছে। শরীরে গরম পানি ঢেলে পুরো শরীর ঝলসে দিয়েছে। ভাই তুই আমারে বাঁচা। তুই মতি মাঝির কাছে যা। ওরা আমারে মেরে ফেলবে।’ সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার সানিয়া খাতুন এভাবেই বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন তার ভাই শফিকের কাছে।

টাকার জন্য আটকে রেখে থাকে শারীরিক নির্যাতন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন নির্যাতিতার স্বামী ও তার  ছোট ভাই। ফরিদপুরের বোয়ালমারির চতরসেন পাড়ার গৃহবধূ সানিয়া খাতুন। ৩৫ বছর বয়সী সানিয়ার স্বামী নান্নু শেখ কৃষি কাজ করেন। অভাবের সংসারে অর্থের যোগান দিতে এলাকার মতি মাঝির মাধ্যমে পাড়ি জমান সৌদি আরবে। ২০ হাজার টাকা বেতনে গৃহকর্মীর চাকুরীতে চুক্তি হয়।

এজন্য দেশে কাউকে কোনো টাকা দিতে হবে না। সৌদি আরব পৌঁছে কাজে যোগদানের পর ২০ হাজার টাকা দিতে হবে। সেই মোতাবেক ২রা জুন কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে তিনি সৌদি গিয়ে পৌঁছান। কথামতো একটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজও দেয়া হয়। তিন দিন পর গৃহবধূ সানিয়া মোবাইল ফোনে স্বামী মো. নান্নু শেখকে ভালোভাবে পৌঁছানোর কথা ও কাজে যোগদানের কথা নিশ্চিত করেন। কিন্তু এর কিছুদিন পরই আরেকটি ফোন সব কিছু এলোমেলো করে দেয়।

এক মহিলা ফোন করে সানিয়ার ভাইকে জানায়, তার বোনের অবস্থা খুব খারাপ। তার উপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে গৃহকর্তা। হাত পা পুড়িয়ে দিয়েছে। শরীরে গরম পানি ঢেলেছে। সানিয়া এখন অনেকটা অসুস্থ। কথা বলতে পারছে না। পরে সেই মহিলার সাহায্যই সানিয়ার সঙ্গে কথা বলে তার ভাই। সানিয়া কথা বলতে পারছেন না। গলা ফুলে গেছে। মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। ভারি কণ্ঠে অনেক কষ্ট করে সানিয়া জানান তার উপর নির্যাতনের সব কাহিনী। এখন সানিয়াসহ আরো তিনজন বাংলাদেশি গৃহকর্মীকে একটি বদ্ধ আলো বাতাসহীন কক্ষে আটকে রাখা হয়েছে। মারধর করে দুই লাখ করে টাকা চাইছে। টাকা না দিলে মেরে ফেলবে বল তারা বলছে।

নির্যাতিতা গৃহবধূ সানিয়ার বরাত দিয়ে তার ছোট ভাই শফিক সাগর ও তার স্বামী নান্নু শেখ জানান, বোয়ালমারীর চতর সেন পাড়ায় তাদের বাড়ি। দীর্ঘদিন ধরে তারা সেখানেই বসবাস করছেন। তাদের প্রতিবেশী মতি মাঝি প্রায়ই বিদেশে লোক পাঠায়। সেই সুবাদেই মতি মাঝি সানিয়াকে বিদেশ পাঠানোর জন্য উঠে পড়ে লাগেন। বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে প্রতিনিয়ত সানিয়াকে প্রলুব্ধ করেন। একপর্যায়ে সানিয়া মতি মাঝির কথায় স্বামীর আপত্তি থাকা সত্ত্বেও বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেই মোতাবেক সানিয়া সৌদি আরবে চলে যান। কিন্তু সেখানে পৌঁছার পর তার উপর শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন।

এখন অনেকটা বাঁচা-মরার মধ্যেই দিন পার করছেন সানিয়া। মতি মাঝি ও ঢাকার ট্র্যাভেলস এজেন্সিতে একাধিকবার যোগাযোগ করে তারা সানিয়ার সঙ্গে কোন যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারছে না। আজকাল করতে করতে চলে গেছে অনেক দিন। এক ছেলে ও এক মেয়ের জননী সানিয়াকে সেখানে ছোট একটি বদ্ধ অন্ধকার ঘরে বাংলাদেশি  আরো তিনজন গৃহবধূর সঙ্গে রাখা হয়েছে। তাদের সঙ্গেও এরকম নির্যাতন করা হচ্ছে। টাকা না দিলে তাদের আরো নির্যাতন করা হবে।

তাদের প্রতিদিন সকালবেলা ছোট একটি রুটি দেয়া হয়। এছাড়া ২৪ ঘণ্টা আর কোনো খাবার দেয়া হয় না। শফিক সাগর জানান, তার বোন নির্যাতনের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কোন চিকিৎসা করানো দুরের কথা খাবার পর্যন্ত দিচ্ছেনা। বাড়িতে তার দুই সন্তান মাকে না পেয়ে কান্নাকাটি করছে। ঠিক মতো খাবার খাচ্ছে না। স্কুলেও যায় না তারা। তার স্বামী নান্নু মোল্লা মাস খানেক ধরে অসুস্থ।

অন্যদিকে স্ত্রীকে নির্যাতন করা হচ্ছে বিদেশে। এই চিন্তায় তিনি এখন অস্থির। নিজের স্ত্রীর উপর এরকম নির্যাতনের কথা মুখ ফুটে কাউকে বলতে পারছেন না। দালালদের কাছে অনেক কাকুতি মিনতি করে কোন লাভ হচ্ছে না। তারা শুধু তারিখ দিচ্ছে। শফিক সাগর আরো জানান, মিডিয়ায় খবর প্রচারের ভয়ে তারা কনফারেন্স কলে একবার তার বোনের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিয়েছে। তখন সানিয়া বলেছে, সে অনেক অসুস্থ। চিকিৎসা করিয়ে কাজে লাগাবে।

কিছুক্ষন পর নির্যাতিতা গৃহবধূর কাছে থাকা গোপন একটি মোবাইল ফোনে তিনি বোনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তখন সানিয়া বলেছেন, তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ভালো কথা বলানো হয়েছে। তারা প্রতিদিনই নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। এর আগে তাদের সঙ্গে থাকা সব কাগজপত্র মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য জিনিসপত্র জব্দ করা হয়েছে। এখন শুধু টাকার জন্য নির্যাতন করা হচ্ছে।

টাকা দিলেই কাজে লাগাবে বলে তারা বলছে। সেজন্য তারা সৌদির ২০ হাজার রিয়াল দাবি করছে। নির্যাতিতার ভাই শফিক সাগর আরো জানিয়েছেন  সোমবার থেকে তিনি আর তার বোনের কোন খবর পাওয়া যাচ্ছে না। এমজমিন
এমটিনিউজ/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে