সোমবার, ০৭ আগস্ট, ২০১৭, ১১:৩৪:৩৪

সিদ্দিকুরকে চোখ দান করতে চান জাহাঙ্গীর

 সিদ্দিকুরকে চোখ দান করতে চান জাহাঙ্গীর

নিউজ ডেস্ক: সিদ্দিকুরকে চোখ দানে প্রস্তুত জাহাঙ্গীর‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’- এই কথাটি সত্য প্রমাণ করতে চান জাহাঙ্গীর কবির নামের এক শিক্ষার্থী। সে তার একটি চোখ দান করতে চান তার আরেক শিক্ষার্থী ভাই সিদ্দিকুরকে। বহুল আলোচিত শাহবাগে পুলিশের টিয়ারশেলের আঘাতে চোখ হারানো তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমানকে নিজের একটি চোখ দান করতে চান জাহাঙ্গীর কবীর। তিনি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে অবস্থিত আলহাজ্ব মকবুল হোসেন কলেজের বিএসএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

জাহাঙ্গীর কবীর জানান, জন্মের পর থেকে সিদ্দিকুর তার চোখ দিয়ে পৃথিবীর আলো দেখেছে। বাবা, মা, ভাই বোন সকলকেই সে অবলোকন করে আসছিল। হঠাৎ এক দুর্ঘটনায় তার চোখের আলো চিরতরে হারিয়ে ফেলবে, কোন কিছুই সে দেখতে পারবেনা সেটা আমি মেনে নিতে পারছিনা। আমি অনেক ভেবে-চিন্তে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যদি রেটিনা প্রতিস্থাপনে সিদ্দিকুরের চোখের আলো ফিরে পায় তাহলে আমি আমার একটি চোখ দান করব।

তিনি জানান, যদি একটা চোখে সিদ্দিকুর দেখতে পায় তার বাকি জীবনটা একটা পথে থাকবে। যদি একেবারে না দেখে তাহলে জীবনের কোনো মানেই থাকবে না। আমি আমার পরিবারকে আমি ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছি। পরিবার প্রথমে রাজি না হলেও আমি পরে বুঝিয়ে রাজি করিয়েছি। আমার বন্ধু-বান্ধবরাও অনেকে বারণ করেছে। আমি তাদের বুঝিয়েছি যে, আমি এক চোখ দিয়েও চলতে পারব।

জাহাঙ্গীর কবির জানান, আমি আমার মা বলেছি যদি এখন দেশে যুদ্ধ লেগে যায় তাহলে আমি নির্দ্বিধায় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করব। আর এতে আমি মারা ও যেতে পারি তোমরা ভেবে নাও যাও যে, যুদ্ধে আমার একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। ইতিমধ্যেই সিদ্দিকুরের বন্ধুদের সঙ্গে তার চোখ দানের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।

জাহাঙ্গীর কবীর জানান, একচোখ দিয়ে দিলে আমার সমস্যা হবে না। গত দু’দিন থেকে একচোখে দেখার প্র্যাকটিস করছি। ফেইসবুক স্ট্যাটাসটি দেয়ার আগে আমি তিন ঘণ্টা এক চোখ বন্ধ করে শুধুমাত্র অন্য চোখ দিয়ে হেঁটেছি, কাজ করেছি। দেখেছিলাম, একচোখে মানুষ কতটুকু দেখে। যদিও একটু সমস্যা হয় তারপরেও আমি চলতে পারব, সে আত্মবিশ্বাস আমার আছে।
সিদ্দিকুরের সহপাঠী শেখ ফরিদ জানান, আমরা বিষয়টি ইতিমধ্যে জেনেছি। জাহাঙ্গীর কবিরের সাথে আমরা কথাও বলেছি। তিনি আমাদের জানিয়েছেন যদি রেটিনা প্রতিস্থাপনে সিদ্দিকুরের চোখের আলো ফিরে পায় তাহলে তিনি একটি চোখ দান করবেন।

এর আগে গত ১ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুকে নিজের আইডিতে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এ ইচ্ছার কথা জানান জাহাঙ্গীর। স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘দৃষ্টির জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ। আমার বিনীত নিবেদন। দৃষ্টি হারানো সিদ্দিকুরের জন্য আমার একটি চোখ দান করতে চাই। তবুও আলোর মিছিলে যোগ দিয়ে চিরতরে অন্ধত্ব বরণ করার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাক একটি স্বপ্নবাজ তরুণ। সরকার এবং তার পরিবার আগ্রহ প্রকাশ করলে আমি আমার একটি চোখ উৎসর্গ করতে চাই। সিদ্দিকুরের পরিচিতজন, বন্ধুবান্ধবদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি আমার চোখের বার্তাটি তার কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য।

জাহাঙ্গীর কবীরের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার অরণখোলা ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া গ্রামে। তার বাবা দুই বছর আগে মারা গেছেন। সাত ভাই-বোনের পরিবারের মধ্যে তিনি তৃতীয়। পড়াশোনার পাশাপাশি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরী করেন।

বর্তমানে সিদ্দিকুর ভারতের চেন্নাইয়ের শংকর নেত্রালয়ে চিকিৎসাধীন আছে। ইতিমধ্যে তার চোখের অপারেশন হয়েছে। শংকর নেত্রালয়ের চিকিৎসক লিঙ্গম গোপাল এই অপারেশন করেন। সিদ্দিকুর মানসিকভাবে সুস্থ ও শক্ত আছেন ও সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। সিদ্দিকুরের সঙ্গে রয়েছেন তার বড়ভাই নওয়াব আলী ও জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুল আহসান মেনন।
৬ আগস্ট ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে