মঙ্গলবার, ০৩ নভেম্বর, ২০১৫, ০২:১৬:৫৪

দুশ্চিন্তা ভর করেছে আওয়ামী লীগে

দুশ্চিন্তা ভর করেছে আওয়ামী লীগে

নিউজ ডেস্ক : বিচার চাই না_ এমন প্রতিক্রিয়া জানানো স্বজন হারানো মানুষের দল ভারী হতে থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। শনিবার শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের নিজ প্রকাশনা কার্যালয় জাগৃতিতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন। এর আগে একইদিন লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনা কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় গুরুতর আহত হন আরো তিনজন। ছেলে হারানোর পর দীপনের বাবা সাবেক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক প্রথম প্রতিক্রিয়ায় বলেন, 'বিচার হবে না। তাই বিচার চাই না।' এরপরই তাকে সমর্থন করে একই প্রতিক্রিয়া জানান গত ফেব্রুয়ারিতে আরেক সন্ত্রাসী হামলায় নিহত লেখক, বস্নগার অভিজিতের স্ত্রী বন্যা আহমেদও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারকাতও বলেন, 'দীপন হত্যার বিচার আমিও চাই না।' সরকার ঘরানার একজন অর্থনীতিবিদ এবং স্বজনহারাদের এমন প্রতিক্রিয়া ক্ষমতাসীনদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে। দীপনের বাবার এ প্রতিক্রিয়া আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ যদিও ভিন্নভাবে দেখছেন। তিনি দীপনের বাবার প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করে বলেন, 'এটার কারণ একটাই হতে পারে, যে ছেলের হত্যাকারীরা হয়তো অধ্যাপক সাহেবের রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী। তাই উনি উনার দলের লোকজনকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চান না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং লজ্জাজনক।' তবে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা মনে করেন, স্বজনহারা পরিবারের এমন প্রতিক্রিয়া জানানোর দল ধীরে ধীরে ভারী হতে থাকলে সরকারের প্রতি মানুষের অনাস্থা তৈরি হবে। প্রশ্নবিদ্ধ করবে সরকারের অর্জন, ভাবমূর্তি। সরকারের প্রতি জনমনে আস্থাহীনতা সৃষ্টি হওয়ার আগে এসব সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িতদের যত দ্রুত সম্ভব খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করতে এখন মরিয়া সরকার। দলের কয়েকজন নেতা ও দুইজন মন্ত্রী এমন তথ্য জানান। অনেক নেতা বলেছেন, এ ধরনের প্রতিক্রিয়া তাদের খেদ ও অভিমান থেকে এসেছে। তার মানে এই নয় যে, বিচার হবে না। সংশ্লিষ্টদের ভাষায়, খুব শিগগিরই অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ''এসব হত্যাকা-ের বিচার করতে আমরা 'সিরিয়াস'। সন্ত্রাসী কর্মকা- ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান 'জিরো ট্রলারেন্স'।" অব্যাহত এসব ঘটনায় সরকারের প্রতি আস্থাহীনতা তৈরি করবে কিনা_ এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, 'কিছু কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে। সরকার ব্যবস্থাও গ্রহণ করছে। সরকারের প্রতি আস্থাহীনতা তৈরির কোনো সুযোগ নেই।' কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, 'সরকার এ হামলার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করতে বদ্ধপরিকর। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও কড়া নির্দেশ দেয়া হয়েছে অপরাধী শনাক্ত করতে তারা কাজ করছে।' আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন বলেন, 'স্বজন হারানো পরিবারের এমন প্রতিক্রিয়া খেদ, অভিমান ও আবেগের। এটা স্বাভাবিকও। তবে তারা বিচার চান না বলেই বিচার হবে না এটা ভাবারও কোনো কারণ নেই। সরকার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যথেষ্ট 'সিরিয়াস'।" তিনি বলেন, 'এরকম দুই-চারজন বা আরো কিছু সন্ত্রাসী হামলা বা হত্যাকা- ঘটলেও আমরা জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসের কাছে মাথা নোয়াব না। এ ক্ষেত্রে সরকারের 'জিরো ট্রলারেন্স' নীতি অব্যাহত আছে।' এসব সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় সরকারের প্রতি জনমনে আস্থাহীনতা তৈরি করবে কিনা জানতে চাইলে লেনিন বলেন, 'বিষয়টি মেঘ ও বৃষ্টির মতো। কোনো ঘটনা ঘটলে যেমন আস্থাহীনতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়, তেমনি ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্য দিয়ে আস্থা তৈরি করে।' স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, 'সরকারের ভাবমূর্তি ও জনমনে সরকারের আস্থাহীনতা তৈরি করতে ষড়যন্ত্রকারীরা এসব হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছে। এ সম্পর্কে সরকার 'কনসার্ন'। দ্রুত এ ঘটনার মুখোশ উন্মোচন হবে।' এদিকে জঙ্গিগোষ্ঠী আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এসব সন্ত্রাসী কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন মহলের এমন বক্তব্য নাকচ করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা। তাদের দাবি, এসব কোনো সংগঠনের বস্নগার হত্যাকা-ের সঙ্গে সম্পৃক্ত বা জড়িত নয়। জামায়াতই এসব হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত। জামায়াতে ইসলাম নতুন নামে ছোট ছোট ইউনিট করে এসব সন্ত্রাসী কর্মকা- ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, 'যখন জামায়াত নেতা যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ সৃষ্টি হয়। আর তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হয়। এরপরই শুরু হয় মুক্তচিন্তার মানুষের ওপর সন্ত্রাসী হামলা। এর আগে কখনো এ ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেনি। সুতরাং এটা স্পষ্ট জামায়াতই নতুন নামে ছোট ছোট ইউনিটে বিভক্ত হয়ে এসব অপরাধ সংঘটিত করছে।' তিনি আরো বলেন, সরকারকে অস্থিতিশীল করা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করা ও '৭১-এর পরাজিত শক্তিদের এজেন্ডা বাস্তবায়নই এসব হামলার উদ্দেশ্য। -যায়যায়দিন ৩ নভেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে