অদম্য বাংলাদেশ, অতর্কিত আঘাত
ড. মো. রওশন আলম : আমরা যারা দূর প্রবাসে থাকি, উন্নত ও স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন আমরাও তিল তিল করে ধারণ করি বুকের গহীনে। যখন দেখি খাদ্যে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়, দেশের বড় বড় নদ-নদীর বুকে ব্রিজ-কালভার্ট একের পর এক নির্মিত হয়, দেশের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়।
কোনো খ্যাতিমান আন্তর্জাতিক পুরস্কার পায়, দেশের তৈরি পোশাক বিদেশে বিদেশিদের গায়ে পরিধেয় বস্ত্র হয়, তখন মনের গহীনে এক অমৃত শান্তির ও আশার পরশ দোলা দিয়ে যায়। আমরাও পারি, আমরাও দাঁড়াব একদিন বিশ্ব দরবারের প্রথম কাতারে—ব্যবসায়, রাজনীতিতে, গবেষণায়, ক্রীড়ায়—সব ক্ষেত্রে।
কিন্তু এসব অর্জনে মাঝেই কোথা থেকে যেন অতর্কিতভাবে দমকা আঘাত হানে সেই স্বপ্নের বাংলাদেশের গায়ে। এ অভিঘাত যেন অদম্য বাংলাদেশের শিরদাঁড়াকে দুর্বল করার জন্য। এমন দমকা হাওয়ার নাম হতে পারে উগ্রবাদ। এই উগ্রবাদ সেই স্বাধীনতার সূর্যোদয়ের লগ্ন থেকেই লেগে ছিল— আজো যার রেশ কাটেনি। সেইসব অতর্কিত দমকা হাওয়া ইদানীংকালে আঘাত করেছে সমাজের নানান স্তরের নিরীহ মানুষকেও। কখনো বা পেট্রোল বোমার দহনে জ্বলেছে নিরীহ মানুষ, মরেছে নৃশংসভাবে। কখনো-বা জীবন গেছে একের পর এক ব্লগারের।
এবার নির্মম শিকার হলেন জাগৃতি প্রকাশনীর কর্ণধার ফয়সল আরেফিন দীপন। সম্ভবত অল্পের জন্য বেঁচে গেলেন শুদ্ধস্বরের কর্ণধার টুটুল ও আরো দুই লেখক। পরবর্তীতে কে বা কারা আবার এমন অতর্কিত হামলার শিকার হবেন—সেই দুর্ভাগাদের কথা আমরা কেউ জানি না। এটা বড়ই দুশ্চিন্তার যে, একের পর এক এসব নির্মম ঘটনা ঘটিয়েও হামলাকারীরা নির্বিঘ্নে দেশের মাটিতেই ঘুরে-ফিরে বেড়ান, সমাজের নানান স্তরের মানুষের মধ্যেই তারা মিলেমিশে একাকার হয়ে যান, ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যান।
প্রতিদিন আরো কত নির্মম হত্যার ঘটনা ঘটছে, অপহরণ হচ্ছে, শীতলক্ষ্যার তলদেশে তলিয়ে যাচ্ছে—সেগুলো তো অনুল্লেখ্যই রয়ে গেল। যতদিন না আমাদের দেশের সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে সহনশীল রাজনীতির পরিবেশ সৃষ্টি হবে, যতদিন না স্বাধীনতার পক্ষের চেতনায় সরকার ও বিরোধী দল সৃষ্টি হবে, ততদিন উগ্রবাদ বা এসব দমকা হাওয়ার অভিঘাত থেকে জাতির কপালে মুক্তি মিলবে না।
লেখক : যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী-ইত্তেফাক
৩ নভেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসবি/এসএস