আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত এলাকার আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা খাবারের তীব্র সংকটে ভুগছেন। খাবারের জন্য রাস্তায় এসে বসে আছেন তারা। কোনো গাড়ি থেকে শুকনা খাবার দিতে দেখলেই খাবার সংগ্রহ করতে শুরু হয় কঠিন প্রতিযোগিতা।
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাইরে হাজার হাজার রোহিঙ্গা এখন রাস্তার দু'পাশে অবস্থান করছেন ওই সড়ক দিয়ে কোনো গাড়ি গেলেই পাশে এসে দাঁড়ান তারা। একই চিত্র ঘুমধুম, কলাবাগান, পালংখালী ও বালুখালীতে। এসব এলাকার রাস্তায় বসে আছেন তারা।
এমন বিপন্নতার মধ্যেই বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সাত মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা ঘোষণা করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন। শুক্রবার এই ঘোষণা দিয়েছে জাতিসংঘ। তবে এই সহায়তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর একজন শীর্ষ কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন যে, এই বিপুল পরিমাণ মানুষকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে তারা অক্ষম।
দৈনিক সমকালের বিশেষ প্রতিনিধি রাজীব নূর কয়েকদিন ধরে সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখেছেন মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র।
ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে রাজীব বলেন, ‘‘আমি ৬ সেপ্টেম্বর ভোরে যখন টেকনাফে এসে পৌঁছি তখন ভোরের আলো ফোটেনি। বাসস্টান্ডের পাশেই গাদাগাদি করে বহু মানুষকে শুয়ে থাকতে দেখেছি। অথচ সেখানে ঘুমনোর মতো কোন পরিবেশই নেই। পাশাপাশি খাবার ও পানি সংকটে সেখানে এক ধরনের মানবিক বিপর্যয় শুরু হয়েছে। ''
প্রশাসনের ভুমিকা কী? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসন যে কি করছে সেটাই আমি বুঝতে পারছি না। কারণ প্রতিদিন দেশে কী পরিমান রোহিঙ্গা প্রবেশ করছে, তারা কোথায় যাচ্ছে তার কিছুই বলতে পারছেন না প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে অনেকেই মানবিকতার কথা বলছেন, অথচ তাদের কাউকেই এই সাগর-পাহাড় পাড়ি দিয়ে এখানে আসা রোহিঙ্গাদের খাবার দিতে দেখা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ কিছুটা এগিয়ে এসে খাবার দিয়ে সহযোগিতা করছেন। ''
মার্কিন বার্তা সংস্থা এপির খবর অনুযায়ী, বন্যার মতো ধেয়ে আসা শরণার্থীরা খাবার আর পানির জন্য হাহাকার করছেন। সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সংবাদকর্মীদের গাড়ি থামিয়ে জানালায় খাবার আর পানির আকুতি জানাচ্ছেন রোহিঙ্গা নারীরা। কখনও কখনও সংবাদকর্মীদের কাপড় টেনে ধরে থামাতে চাইছে তাদের। নারীরা তাদের বাচ্চাদের দেখিয়ে খাবার ভিক্ষা চাইছে।
অষ্ট্রেলিয়াভিত্তিক এবিসি নিউজের খবরে উঠে এসেছে অস্থায়ীভাবে নির্মিত শরণার্থী শিবিরগুলোতে রোহিঙ্গাদের বিপন্নতার চিত্র। একটি অস্থায়ী শরণার্থী শিবিরের নেতা নূর মোহাম্মদকে উদ্ধৃত করে এবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘নতুন শরণার্থী যারা এসেছে তাদের অনেকেই দু'দিন ধরে কিছু খায়নি। অনেকেই তিন দিন ধরে অভুক্ত আছে। তাদের রান্না করার মতো কিছু নেই, কিছু একটি বিছিয়ে যে ঘুমাবে সেরকম কিছুও নেই। ''
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন যে সংকট তৈরি হয়েছে তা সরকারের একার পক্ষে সমাল দেয়া কঠিন। সরকার যদি একা সেটা করতে চায় সেটা ঠিক হবে না। সরকারের উচিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করা। পাশাপাশি এখন সেখানে যে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে সেটার সমাল দিতে দেশি বিদেশি কিছু বড় এনজিওকে সম্পৃক্ত করা।
তিনি বলেন, ‘‘আমি বলব এটা মানবিক দুর্যোগ। এই দুর্যোগটা মানুষদ্বারা সৃষ্টি। বিশ্বের অন্যতম বড় এনজিও বাংলাদেশেই আছে। তাদের এই বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলার অভিজ্ঞতা আছে। ''
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য জন্য জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয়ক দপ্তরের প্রধান মার্ক লওকক সাত মিলিয়ন মার্কিন ডলার ডলার অনুদান নিশ্চিত করেছেন। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সহায়তা করতে জাতিসংঘের সেন্ট্রাল ইমারজেন্সি রেসপন্স ফান্ড (সার্ফ) থেকে এই অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয়ক দপ্তরের ডিজিটাল সার্ভিস রিলিফওয়েবের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য দেয়া হয়েছে।
ইউএনএইচসিআর'র বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার শিন্নি কুবো বলেন, ‘‘আমার ভয় হচ্ছে, আরও মানুষ আসবে। তাদের জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। আমাদের বিশাল অংকের আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন। এমন ঘটনা নজিরবিহীন। এই পরিস্থিতি আকস্মিক। আগামী কয়েক সপ্তাহ ধরে এই পরিস্থিতি চলবে।- ডিডাব্লিউ
এমটিনিউজ২৪ডটকম/এপি/ডিসি