ঢাকা: মিয়ানমার থেকে আসা অসহায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে বাংলাদেশের কোনও কৃপণতা নেই বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী। রবিবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে সরকার দলের কামাল আহমেদ মজুমদারের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের সাময়িকভাবে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তাদের খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের কোনও ধরনের কৃপণতা নেই। মানবিক দিক বিবেচনা করে সব করতে চেষ্টা করবো। তাদেরকে নিজ দেশে ফিরে যেতে কূটনৈতিক তৎপরতাও চলবে।
‘স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে রবিবার অধিবেশনের শুরুতে প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পরিস্থিতি সরেজমিন পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, সেখানে অভাবনীয় অবস্থা, স্বচক্ষে না দেখলে বোঝা যাবে না। রোহিঙ্গারা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে এদেশে আসছে। একজন বৃদ্ধ তার আরও বৃদ্ধ মাকে কাঁধে নিয়ে ৬৫ কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে, নদী সাঁতরে পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আর কত লোক যে কীভাবে এদেশে এসেছেন তা বর্ণনা করা মুশকিল। এমন অবর্ণনীয় অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী চুপ করে বসে থাকেননি। মিয়ানমার থেকে মানুষকে যেভাবে তাড়িয়েছে, আমরা যদি এখানে চুল পরিমাণ কোনও পদক্ষেপ নিতাম তাহলে এই লোকগুলির অবস্থা কী হতো! আমরা সেটা পারিনি। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যারা এসেছে মানবিক কারণে তাদের সাময়িকভাবে আশ্রয় দেবো, খাওয়া দেবো, চিকিৎসা দেবো এবং বিশ্বের জাগ্রত মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়ে তাদেরকে নিজ দেশে ফিরিয়ে দেবো।
ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মিয়ানমারের নাগরিকদের এক জায়গায় এনে রাখার ব্যবস্থা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, উখিয়ার পাশে আমরা ২ হাজার একর জায়গা চিহ্নিত করেছি। এছাড়া সন্দ্বীপের কাছে ঠেঙার চরে (ভাষান চর) প্রায় ১০ হাজার একর জায়গা রয়েছে। সেখানে আমরা অস্থায়ীভাবে তাদেরকে রাখবো। তারা দেশে ফিরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানে থাকবে। তারা মিয়ানমারের নাগরিক, তারা সেখানে ফিরে যাবে। এজন্য দেশি ও আন্তর্জাতিকভাবে যে ব্যবস্থা করা দরকার আমরা সেই চেষ্টা করবো।
মন্ত্রী রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে রাজনীতি না করা এবং ‘ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে ফায়দা লোটার চেষ্টা না করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে এবং দুস্থ মানবতার পাশে দাঁড়ানোর জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।
কামাল আহমেদ মজুমদারের মৌখিক প্রশ্নের জবাবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী বলেন, বন্যা কবলিত ৩৫টি জেলায় জিআর চাল ৩৮ হাজার ৫‘শ মেট্রিক টন, নগদ টাকা ১২ কোটি ৫০ লাখ, শুকনো খাবার ৯০ হাজার ৫শ’ প্যাকেট, ঢেউটিন ৫ হাজার বান্ডিল ও গৃহনির্মাণে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া হাওর অঞ্চলের ৬টি জেলার ক্ষতিগ্রস্ত ৩ লাখ ৮০ হাজার পরিবারকে ৭১ হাজার ৪০ মেট্রিক টন ভিজিএফ চাল ও ১১৪ কোটি টাকা বিশেষ অনুদান হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে বছরে গড়ে ৩৫টি ভূমিকম্প
বাংলাদেশে বছরে গড়ে ৩৫টি করে ভূমিকম্প অনূভুত হয় বলে রবিবার সংসদে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রীর উপস্থাপিত তথ্যে পাওয়া গেছে। সরকার দলীয় সদস্য মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রীর উপস্থাপিত তথ্যে দেখা গেছে, দেশে গত ২০০১ সাল থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ১৭ বছরে মোট ৫৯০টি ভুমিকম্প অনূভুত হয়েছে। বছর হিসেবে এর গড় ৩৪ দশমিক ৭১ টি। তথ্যে দেখা গেছে ওই ১৭ বছরের মধ্যে সব থেকে বেশি ভুমিকম্প হয়েছে ২০১১ সালে। ওই বছর বাংলাদেশে ৮৪টি ভূমিকম্প হয়েছে। এর পরের বছর ২০১২ সালে হয় ৭৭টি ভূমিকম্প। এ সময়ে সব থেকে কম ভূমিকম্প হয়েছে ২০০৭ সালে। ওই বছর হয়েছে ১০টি ভূমিকম্প।
ঢাকা-১১ আসনের এ কে এম রহমতুল্লাহর প্রশ্নের জবাবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী জানান, ঢাকা মহানগরীতে ভুমিকম্পে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ৩২২টি ভবন চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ২১২টি ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১০৯টি।
এমটিনিউজ২৪ডটকম/আ শি/এএস