নিউজ ডেস্ক : হাউ মেনি ডেথ্স উইল ইট টেক টিল হি নোজ/দ্যাট টু মেনি পিপল হ্যাভ ডাইড? প্রশ্নটা বব ডিলান করেছিলেন। সেই কবে কোন কালে! গানের সুরে সুরে এই যে জানতে চাওয়া, না, আজও শেষ হলো না!
আজও উত্তর মেলেনি। পৃথিবী একইরকম নিষ্ঠুর আছে। মানুষের হাতে রক্ত। মানুষ মারছে আরেক মানুষকে। দেশের কথা বলে জাতের কথা বলে মারছে। ধর্ম এবং বর্ণের কথা বলে চলছে নির্মম নিষ্ঠুর হত্যাকা-। কিন্তু আর কত? কত আর মরলে পরে খুনীদের উপলব্ধি হবে, আসলে মানুষ মরছে!
হ্যাঁ, প্রশ্নটি আবারও সামনে এসেছে। এবার জবাব চাওয়া হচ্ছে মিয়ানমারের কাছে। দেশটিতে এখন চলছে পৃথিবীর নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞ। নিজের দেশের মানুষকেই ওরা মারছে। দুর্বল সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বাড়িতে আগুন দিচ্ছে, পুড়িয়ে মারছে। সম্ভ্রম নষ্ট করা হচ্ছে মেয়েদের। শিশুটিও রক্ষা পাচ্ছে না। সেনা সমর্থিত সরকার মানুষকে মানুষের মর্যাদা দিতে নারাজ।
তারা বন্দুকের ভাষায় কথা বলছে। ভয়ানক অন্যায় অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে হতভাগারা দিগিব্দিদিক ছুটছে। ঠিকানা পাচ্ছিল না। ঠাঁই হচ্ছিল না কোথাও। এত বড় পৃথিবী! অথচ সবগুলো দ্বার বন্ধ। সবগুলো? না। মানবিক মানুষের বাংলাদেশ ঠিকই পাশে দাঁড়িয়েছে। মানুষের জন্য কাঁদছে বাংলাদেশের মানুষ।
যখন মহাবিপর্যয়ের আশঙ্কা, যখন একটি জাতিগোষ্ঠী নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে তখন বাঙালী সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেকে বলছিলেন, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে না কেন বাংলাদেশ? যুদ্ধ তো করছে। পার্শ্ববর্তী দেশটিকে নয় শুধু, পৃথিবীকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচানোর কঠিন যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে বাংলাদেশ।
বলার অপেক্ষা রাখে না, ঐতিহাসিকভাবেই রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের অধিবাসী। ৫শ’ বছরের বেশি সময় ধরে ওই অঞ্চলে বসবাস করছে। ইতিহাসের পাতা উল্টিয়ে দেখা যায়, চতুর্দশ এবং পঞ্চদশ শতাব্দীতে আরাকান ছিল স্বাধীন মুসলিম রাজ্য। তখনই আরাকান সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপিত হয়। ১৪০৪ থেকে ১৬১২ সাল পর্যন্ত ১৬ জন মুসলিম সম্রাট আরাকান শাসন করেন।
কিন্তু রাজ্যের দুর্বল অবস্থার সুযোগ নিয়ে বার্মা রাজা বোধাপোয়া ১৭৮৪ সালে আরাকান দখল করে বার্মার সঙ্গে যুক্ত করেন। কিন্তু ১৮২৬ সালে ব্রিটিশদের সঙ্গে এক যুদ্ধের ফলে বার্মা সরকার আরাকান, আসাম এবং মনিপুরের ওপর থেকে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু ১৯৪৮ সালে ইউনিয়ন অব বার্মা স্বাধীনতা অর্জন করলে আরাকান বার্মার অংশ হয়ে যায়।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের বাঙালী আখ্যা দিয়ে তাদের ওপর বর্বর নির্যাতন চালাতে থাকে। এভাবে তাদের বাংলাদেশে পাঠানো শুরু হয়। ১৯৭৮ সালের জুলাই মাসে আরাকানী মুসলমানরা সর্বপ্রথম শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। সেই থেকে শুরু।
১৯৮২ সালে প্রণীত এক আইনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয় কেড়ে নেয়া হয়। এই আইনে রোহিঙ্গাদের এক ধরনের বিদেশী এবং রাষ্ট্রহীন জাতিতে পরিণত করা হয়। এ অবস্থায় হত্যা নির্যাতন বেড়ে কয়েকগুণ হয়ে যায়। কিন্তু এত বড় পৃথিবীর কোন দেশই বিষয়টি নিয়ে ভাবে না। ভাবেনি এবারও।
সাম্প্রতিক সময়ে মৃত্যুর উৎসব চলছে মিয়ানমারে। নৃশংসতার কত যে ছবি আসছে! কী বীভৎস্য বর্ণনা! তবুও নির্যাতন বন্ধে কোন তৎপরতা নেই বিশ্ব নেতাদের। মানুষ হয়ে মানুষের পাশে কেউ দাঁড়াচ্ছল না। পৃথিবীর কেউ ভাল তো বাসে না/এ পৃথিবী ভালবাসিতে জানে না…। এই বেদনার গীত সত্য হতে চলেছিল।
নির্যাতিতরা যেন বলছিলেন, জনমের সাধ ডাকি গো মা তোরে/কোলে তুলে নিতে আয় মা…। সেই মা’টি হয়েছে বাংলাদেশ। মানবিক পৃথিবীর প্রত্যাশাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। গত কয়েক দিনে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে এসেছে প্রায় ৩ লাখেরও বেশি মানুষ। সবাইকে আশ্রয় দিয়েছে সীমিত সাধ্যের বাংলাদেশ।
দেশ এবং দেশের সরকার নয় শুধু, বাংলাদেশের মানুষ দাঁড়িয়েছে মানুষের পাশে। মিয়ানমারের মানুষের কান্নাকে তারা নিজের করে নিয়েছে। ত্রাণ নিয়ে ছুটে যাচ্ছে অনাহারীদের কাছে। কবিরা কবিতায়, শিল্পীরা ছবিতে মানুষের কথা বলছেন।
এমনকি ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা অন্য অপরিচিত অচেনা শিশুর কথা ভেবে মনোবেদনায় ভুগছে। সব দেখে আশাবাদী হতে হয়। পৃথিবীকে অমানবিক খুনীদের হতে দেয়নি বাংলাদেশ! জনকণ্ঠ
এমটিনিউজ/এসএস