বৃহস্পতিবার, ০৫ নভেম্বর, ২০১৫, ০৮:৩৯:৫৮

লাখো মানুষের জীবন বদলে দেয়ার কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী

লাখো মানুষের জীবন বদলে দেয়ার কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দুই দেশের যৌথ প্রচেষ্টায় আমরা বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের লাখো মানুষের জীবন বদলে দিতে পারবো। বৃহস্পতিবার দ্য হেগে ডাচ ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে এক সেমিনারে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের সম্ভাবনাগুলো তুলে ধরে শেখ হাসিনা এ আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশে বস্ত্র, চামড়া, পাট, সিরামিক, ওষুধ, পেট্রোক্যামিকেলস, জাহাজ নির্মাণ, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, প্লাস্টিক পণ্য, হালকা প্রকৌশল এবং ইলেকট্রনিক্স, টেলিযোগাযোগ, তথ্য-প্রযুক্তি আর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, অবকাঠামো উন্নয়নের মত খাতে ডাচ কোম্পানিগুলোকে আমরা বিনিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছি।” বাংলাদেশ এরই মধ্যে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে পৌঁছে গেছে জানিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যের কথাও সেমিনারে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ডাচ ব্যবসায়ীদের বলেন, “আমি আপনাদের, ডাচ ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানাই, আপনারা আসুন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের, মুনাফা ও সমৃদ্ধির অংশীদার হোন। আমরা একজোট হলে লাখো মানুষের জীবন বদলে দিতে পারি।” প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন, স্বাধীনতার পর ইউরোপের যে দেশগুলো প্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, নেদারল্যান্ডস তার অন্যতম। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরের বছর থেকেই বাংলাদেশে বিভিন্ন ডাচ কোম্পানি তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ৩০টি ডাচ কোম্পানির ৬৮৪ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ রয়েছে বাংলাদেশে। ডাচ ব্যবসায়ীদের শেখ হাসিনা জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার দেশ ৬ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। বিশ্ব ব্যাংকের হিসেবে ক্রয়-ক্ষমতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৭তম বৃহৎ অর্থনীতি। প্রধানমন্ত্রী তাদের জানান, তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক। বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ ও ওষুধ শিল্পও বিশ্বে প্রশংসা কুড়িয়েছে। শেখ হাসিনা জানান, বাংলাদেশে শুধুমাত্র রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য আটটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ জোন রয়েছে। সরকার এখন ১০০টি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল এবং বেশ কয়েকটি হাই-টেক পার্ক গড়ে তুলতে কাজ করছে, যেখানে ডাচ কোম্পানিগুলো ব্যবসার সুযোগ নিতে পারে। তিনি বলেন, বিনিয়োগ নীতির দিক দিয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম উদার দেশ। এ দেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের যেমন আইনি সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে, তেমনি তারা শুল্ক ও কর রেয়াতের মত সুবিধা পাচ্ছেন। লিখিত বক্তব্য দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ডাচ ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং আবাসন, জলবায়ুর পরিবর্তন ও নবায়ণযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, “আমরা সত্যিকারের মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে চাই। আমরা এক সাথে কাজ করলে দেশে ও বিশ্বে কোটি জনতার ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারব।” বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত লিওনি মার্গারেটা কুলিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তার ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে অনুষ্ঠানে বলেন, “সেখানে এক জায়গায় আমি জর্জ হ্যারিসনের ভাস্কর্য দেখেছি, যিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় গান গেয়ে সকলকে উজ্জীবিত করেছিলেন। এখন তিনি বাংলাদেশকে দেখলে সমৃদ্ধির গান গাইতেন।” অন্যদের মধ্যে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সভাপতি মার্টিন ফারব্রুগেন, দেশটির সাবেক কৃষিমন্ত্রী চিজ ফিরমান, বাংলাদেশ সরকারের মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির প্রথম সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন। মার্টিন ফারব্রুগেন বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত কর্মঠ। বাংলাদেশ অত্যন্ত সুন্দর একটি দেশ।” বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল ইসলাম অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। তিন দিনের সরকারি সফরে মঙ্গলবার নেদারল্যান্ডসে পৌঁছান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বুধবার দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে চারটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। সফর শেষে বৃহস্পতিবারই দেশের পথে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে শেখ হাসিনার।-বিডি নিউজ ০৫ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/মাহমুদ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে