বৃহস্পতিবার, ০৫ নভেম্বর, ২০১৫, ০৯:৪২:৩১

হুমায়ূন আহমেদের ‘টুনির’ মৃত্যু-রহস্যর কি অবস্থা?

হুমায়ূন আহমেদের ‘টুনির’ মৃত্যু-রহস্যর কি অবস্থা?

ঢাকা: বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক ‘এইসব দিনরাত্রি’র টুনি চরিত্রে অভিনয় করা নায়ার সুলতানা ওরফে লোপার মৃত্যু-রহস্য এক বছরেও উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা হলেও এটি হত্যা না আত্মহত্যা, তা এখনো স্পষ্ট নয়। পুলিশ বলছে, মৃত্যু-রহস্য উদঘাটনে মামলার আসামিদের নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন। কিন্তু আইনি বাধ্যবাধকতাসহ বিভিন্ন কারণে তা করা যাচ্ছে না। নায়ারের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, হত্যা মামলার আসামি নায়ারের স্বামী আলী আমিন মিথ্যা তথ্য দিয়ে জামিন নিয়ে বেরিয়ে তাঁদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন এবং হয়রানি করছেন। অন্যদিকে মামলার অপর দুই আসামি নায়ারের শ্বশুর ও শাশুড়ি উচ্চ আদালত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নিয়েছিলেন। কিন্তু জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তাঁরা আদালতে হাজির হচ্ছেন না। গত বছরের ১৬ অক্টোবর রাতে গুলশান ১ নম্বরের ১২৬ নম্বর রোডের নিজ ফ্ল্যাট থেকে নায়ার সুলতানার লাশ উদ্ধার করে গুলশান থানার পুলিশ। লাশটি সিলিং ফ্যানের সঙ্গে শাড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় পাওয়া যায়। সুরতহাল রিপোর্টে পুলিশ উল্লেখ করে, নায়ারের দুই পায়ের হাঁটু খাটের সঙ্গে লাগানো ছিল। গলার ডান দিকে কালো দাগ ও বাঁ হাতের কবজিতে আঘাতের কাটা দাগ ছিল। নায়ারকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে তাঁর মা রাজিয়া সুলতানা বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন। আলী আমিন ও তাঁর মা-বাবার বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়। ১৭ অক্টোবর পুলিশ আলী আমিনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে। গত বছরের নভেম্বরে আলী আমিন জামিনে ছাড়া পান এবং ৪ ডিসেম্বর উচ্চ আদালত থেকে চার সপ্তাহের আগাম জামিন নেন নায়ারের শ্বশুর আমিন আলী ও শাশুড়ি ইয়াসমিন আমিন। নায়ারের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, মামলার বাদী নায়ারের মা আদালতে হাজির হয়ে আলী আমিনের জামিন চেয়েছেন, এমন মিথ্যা তথ্য দিয়ে আলী আমিন জামিন নিয়েছেন। এই জামিন বাতিলে এরই মধ্যে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবী বারবার সময়ের আবেদন করে কালক্ষেপণ করছেন। অন্যদিকে চার সপ্তাহের জামিন শেষ হয়ে গেলেও নায়ারের শ্বশুর-শাশুড়ি আদালতে হাজির হচ্ছেন না। এসব কারণে মামলা আর এগোচ্ছে না। জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ বিভাগের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) উত্তম কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, আমরা এখনো এই মৃত্যু-রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি। তবে যে অবস্থায় লাশটি পাওয়া গেছে, এতে এটা আত্মহত্যা বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে লাশের যে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়, তার প্রতিবেদনে এ মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলা হয়েছে। পরে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাশের পুনরায় ময়নাতদন্ত হয়। লাশ পচে যাওয়ায় মৃত্যুর কারণ ও ধরন জানা যায়নি। তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু লাশটির পুনরায় ময়নাতদন্ত হয়েছে, এ কারণে দ্বিতীয় প্রতিবেদনটিকেই তদন্তে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এ প্রতিবেদনে এ মৃত্যু আত্মহত্যা না হত্যাজনিত, এর কোনো কিছু উল্লেখ নেই। মৃত্যু-রহস্য উদ্ঘাটন করতে হলে প্রয়োজন আসামিদের নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ। তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, আলী আমিনকে রিমান্ডে নিতে আদালতে আবেদন করা হয়েছিল। পরে আসামিকে অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করার নির্দেশ দেন আদালত। আসামি এ নিয়ে সিআইডিকে তিন দফা বক্তব্য দিয়েছেন। আসামি আলী আমিনের দাবি, নায়ার আত্মহত্যা করেছেন। আগে থেকেই তাঁর আত্মহত্যার প্রবণতা ছিল। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আসামির কাছে জানতে চাওয়া হয়, আত্মহত্যার প্রবণতা থাকলে এ ব্যাপারে কোনো চিকিৎসা করা হয়েছিল কি না? চিকিৎসা হয়ে থাকলে এর কাগজপত্র দিতে বলা হয়। কিন্তু আসামি এ-সংক্রান্ত কোনো কাগজ দিতে পারেননি। বরং তিনি একজন মানুষ কেন আত্মহত্যা করে, এ বিষয়ে ইন্টারনেট ঘেঁটে বিভিন্ন গবেষণামূলক লেখা সংগ্রহ করে সিআইডির কাছে জমা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে জানতে নায়ারের স্বামী আলী আমিনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। আলী আমিনের বাবা আমিন আলীর মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার কল করা হলে তিনিও সাড়া দেননি। পরে আসামিপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁর কাছ থেকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলার প্রধান আসামির জামিন নেওয়া, আদালতে সময় নেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো সময় নেওয়া হচ্ছে না। আসলে বাদীপক্ষ আপনাদের ভুল তথ্য দিয়ে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করছেন।’-প্রথম আলো ০৫ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/মাহমুদ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে