বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১১:২৯:৩১

'কোনো অপরাধী চক্র রোহিঙ্গাদের অপরাধের সাথে জড়িয়ে ফেলতে পারে'

'কোনো অপরাধী চক্র রোহিঙ্গাদের অপরাধের সাথে জড়িয়ে ফেলতে পারে'

সায়েদুল ইসলাম : জাতিসংঘের হিসাবে মিয়ানমারে সাম্প্রতিক সহিংসতা শুরু হওয়ার পর প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগে থেকেই নিবন্ধিত বা অনিবন্ধিতভাবে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে রয়েছে।

তবে এই অসহায় মানুষগুলোকে কোনো অপরাধী চক্র ব্যবহার করে কিনা, তা নিয়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা মূলত কক্সবাজার এবং বান্দরবানে থাকছে। খবর বিবিসি বাংলার।

পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো কোনো চক্র যে রোহিঙ্গাদের ব্যবহারের চেষ্টা করছে, সেসব তথ্য তারা পেয়েছেন। আর তাই তাদের নজরদারিও অনেক বাড়িয়েছেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি সহেলী ফেরদৌস বলছেন, ''তারা যেহেতু বাস্তুচ্যুত মানুষ এবং আর্থিক সমস্যাও রয়েছে, কোনো অপরাধী চক্র তাদেরকে যেকোনো ধরনের অপরাধের সাথে জড়িয়ে ফেলতে পারে। অথবা তারা স্বেচ্ছায় কোনো অপরাধের সাথে জড়িত হতে পারে। এটার জন্য আমরা সতর্ক আছি।"

"আমাদের ইন্টেলিজেন্সের মনিটরিং আছে। আমাদের নিজস্ব যেসব ব্যবস্থা আছে, তার মাধ্যমে আমরা তাদের পর্যবেক্ষণে রেখেছি। সামাজিক মাধ্যমগুলোও কোনো প্রপাগান্ডা বা কর্মকাণ্ড চলতে না পারে, সে বিষয়টিও নজরদারি করা হচ্ছে।''

তিনি বলছেন, ''বড় যে সমস্যাটি তৈরি হতে পারে, তা হলো, রোহিঙ্গাদের নিপীড়নের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশ থেকে বা বিভিন্ন গোষ্ঠীর কাছ থেকে তাদের প্রতি সমর্থন দেখানো হয়েছে। আল কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট এবং দায়েশ তাদের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে। চেচনিয়া থেকে বেশ কিছু গোষ্ঠী তাদের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে।

ইন্দোনেশিয়া থেকে বেশ কিছু ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে, ইন্দোনেশিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের জন্য যুদ্ধ করার জন্য সৈন্য সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং প্রশিক্ষণ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।''

মুনীরুজ্জামান বলছেন, ''যারা বিদেশী যোদ্ধা, তারা যদি এই রাখাইন অঞ্চলে এসে তাদের সাথে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি নেয়, তাহলে আমাদের সীমান্তের কাছাকাছি একটা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে পারে। যা আমাদের নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি।''

ত্রাণ বা সহায়তার নামে রোহিঙ্গাদের যাতে কোনো চক্র জঙ্গি বা অপরাধমুলক কর্মকাণ্ডে জড়িত করতে না পারে সেজন্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে যারা যাচ্ছেন, তাদেরও পর্যবেক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ কে এম ইকবাল হোসেন বলছেন, ''যেসব এলাকায় রোহিঙ্গারা বসবাস করে, সেসব এলাকায় আমাদের অনেকগুলো মোবাইল পেট্টোল সারাক্ষণ কাজ করছে। আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যেসব গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে, সবার সঙ্গে মিলেই আমরা কাজ করছি। এ পর্যন্ত অশুভ কোন তৎপরতার খবর পাইনি।''

তিনি বলছেন, ''বিভিন্ন স্থানে আমাদের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে, যাতে রোহিঙ্গারা টেকনাফ এবং উখিয়ার নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে যেতে না পারে।''

তবে মি.মুনীরুজ্জামান বলছেন, এটি এমন একটি সমস্যা যার হয়তো আশু সমাধান আশা করা ঠিক হবে না। সুতরাং রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত পাঠানোর আন্তর্জাতিক তৎপরতার পাশাপাশি বাংলাদেশের নিরাপত্তার দিক থেকেও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাও নিতে হবে।

পুলিশের শীর্ষ একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলছিলেন, বিষয়টিকে তারা বড় উদ্বেগ হিসাবেই নিয়েছেন। গত কয়েকদিনে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছেন। এর মধ্যেই প্রযুক্তি ব্যবহার ছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে তাদের উপস্থিতিও বাড়ানো হয়েছে।

নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংগঠন, বিআইপিএসএসের প্রেসিডেন্ট অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এ এন এম মুনীরুজ্জামান বলছিলেন, রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিতে পারে পাচারকারী এবং অপরাধী চক্র। কিন্তু তার চেয়েও বড় ঝুঁকি বা সম্ভাবনা তারা দেখতে পাচ্ছেন।  
এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে