শুক্রবার, ০৬ নভেম্বর, ২০১৫, ০১:০২:২১

পুলিশ হত্যা: অনুসন্ধানে গোয়েন্দা দল

পুলিশ হত্যা: অনুসন্ধানে গোয়েন্দা দল

সাভার: ঢাকার কাছে আশুলিয়ায় তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালিয়ে কনস্টেবল হত্যার ঘটনাটির তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। হামলার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় অতিরিক্ত আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী সাংবাদিকদের বলেন, গাবতলীর হামলা এবং বাড়ইপাড়ার হামলা ‘একই সূত্রে গাঁথা’। এদিকে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মাহফুজুল হক নূরুজ্জামান মন্তব্য করেছেন যে আশুলিয়ায় শিল্প পুলিশ হত্যাকাণ্ডে আইএস সম্পৃক্ত নয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে ময়মনসিংহ থেকে ফেরার পথে আশুলিয়ার বাড়ইপাড়া এলাকা পরিদর্শন শেষে এ কথা বলেন ডিআইজি। তিনি আরো বলেন যে তিনি বলেন, কোন জঙ্গি গোষ্ঠী নয়, ১৯৭১ ও ১৯৭৫ সালসহ ২০১২ সালের মানবতাবিরোধী ও নাশকতাকারীরাই পুলিশ বাহিনীকে বিব্রত করতে এমন অপতৎপরতা চালাচ্ছে। এসময় ডিআইজির সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমানসহ অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। বুধবারের ওই ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্তে সাত সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়েছে, যাতে ঢাকা জেলার কোনো পুলিশ কর্মকর্তাকে রাখা হয়নি। এই ঘটনায় সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা জেলার এএসপি নাজমুল হাসান। তবে তাদের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। যুদ্ধাপরাধী দুই মন্ত্রীর বিচারের চূড়ান্ত নিষ্পত্তির আগে দুই বিদেশি এবং এক প্রকাশক হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ঢাকার গাবতলীতে এক এএসআইকে খুন করা হয়। তার ১৫ দিনের মধ্যে আশুলিয়ার বাড়ইপাড়ায় আরেক পুলিশ খুন হলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের দণ্ড কার্যকরের বিষয়টি ‘নস্যাৎ করার জন্য’ এ ধরনের হামলা চালানো হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সিআইডির একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং আলামত সংগ্রহ করে। আশপাশের এলাকার মানুষদের সঙ্গেও কথা বলেন তারা। ঢাকা জেলার এএসপি নাজমুল হাসান বলেন, “ঘটনার পর থেকে পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন সাতজনকে আটক করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, তবে এখনও মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি।” সহকর্মী কনস্টেবল মুকুল হোসেনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আশুলিয়া থানার এসআই আজহারুল ইসলাম বুধবার রাতে মামলা করেন। আশুলিয়ার বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে মোটর সাইকেলে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। বাড়ইপাড়ার যে চেকপোস্টে হামলা হয়েছিল, সেটি সামান্য সরিয়ে নিয়ে তল্লাশি কাজ আগের মতো চলছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, তিন হামলাকারী একটি মোটর সাইকেলে এসেছিল। তাদের কাছে ছিল ধারাল অস্ত্র। এছাড়া তাদের দুই সহযোগী কাছে ছিল আরেকটি মোটর সাইকেলে, যাওয়ার সময় তারা গুলি ফোটায়। সিআইডির পুলিশ সুপার মোস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর এবং স্পর্শকাতর। এটা তুচ্ছ মনে করার কোনো কারণ নেই। “থানা পুলিশ, র‌্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থা যে যার আঙ্গিক থেকে দেখছে, তদন্ত করছে। আমরাও সিআইডির পক্ষ থেকে তদন্ত করছি।” পুলিশ সদর দপ্তরের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি শফিকুর রহমানকে। কমিটি অন্য সদস্যরা হলেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজি আশরাফুল আজিম ও শিল্পপুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) সাইদুর রহমান। কমিটিকে আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে বলে এমটিনিউজকে জানান ডিআইজি শফিকুর। তিনি বলেন, “সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করে অপরাধীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।” কারা ঘটিয়েছে ঘটনাটি- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বুধবার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও আইজিপি স্যার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তাই আপাতত কিছু বলা যাচ্ছে না।” মামলার তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে আশুলিয়া থানার ওসি মোহসিন কাদির এমটিনিউজকে বলেন, “তিন জেলার সমন্বয়ে একটি গোয়েন্দা দল গঠন হয়েছে। তারাই তদন্ত করছে।” এই দলের প্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আবুল খায়ের। অন্য সদস্যরা হলেন- গাজীপুর জেলার পরিদর্শক আসাদুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ জেলার এসআই সাইফুল ইসলাম, ওই জেলার আড়াইহাজার থানার এসআই আব্দুস সালাম, গাজীপুর সদরের এসআই ইকবাল, শ্রীপুর থানার এসআই মজিবর রহমান ও ময়মনসিংহ গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মলয় চক্রবর্তী। পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এসএম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান বলেন, “কেউ যেন অপরাধ করে পার না পায়, তা নিশ্চিতে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।” তল্লাশি চৌকিতে সশস্ত্র অবস্থায় পাঁচ পুলিশ থাকার পরও হামলার পর তা ঠেকানোর কোনো ইঙ্গিত না দেখে কর্তব্যরত অন্যদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। ওই চৌকির দায়িত্বশীল এসআইও নির্দিষ্ট সময়ে সেখানে উপস্থিত হননি। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে রাতেই আশুলিয়া থানার এসআই হাবিবুর রহমানকে আশুলিয়া থেকে প্রত্যাহার করে ঢাকা জেলা পুলিশ লাইনে নেওয়া হয়। ০৬ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে