শুক্রবার, ০৬ নভেম্বর, ২০১৫, ০২:১৯:০৭

প্রবাসে রাজ্জাকের নীরব জীবন

প্রবাসে রাজ্জাকের নীরব জীবন

ঢাকা: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর একের পর এক শীর্ষ নেতার ফাঁসির রায় কার্যকর হতে থাকলেও প্রবাসে নীরব জীবন কাটাচ্ছেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক! ২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর থেকে দেশে নেই ব্যারিস্টার রাজ্জাক। আছেন লন্ডনে। দেশ ছাড়ার মাত্র পাঁচ দিন আগে দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়। তার অনুপস্থিতিতেই আরেক জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়। বর্তমানে দলের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় রিভিউ শুনানির অপেক্ষায়। এ ছাড়াও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির আবদুস সুবহান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলী- সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল। সব কয়টি মামলার প্রধান আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক কবে দেশে ফিরবেন বা আদৌ ফিরবেন কিনা, তা কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। তাই আবদুর রাজ্জাককে নিয়ে এখন দলের ভিতরই সৃষ্টি হচ্ছে নানা প্রশ্ন। তার অনুপস্থিতিতে মামলাগুলো পরিচালনা করছেন তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল আইনজীবী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন, দলের শীর্ষ নেতাদের দুর্দিনে দীর্ঘদিন রাজ্জাক সাহেবের অনুপস্থিতি রহস্যের জন্ম দিয়েছে। কাদের মোল্লার ফাঁসির পর তিনি যে সেই বিদেশ গেলেন আর কোনো খবর নেই। এরই মধ্যে কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায়ও কার্যকর হয়েছে। দলের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের রায় কখন কার্যকর হয়ে যায় বলা যাচ্ছে না। ক্ষোভের সঙ্গে এই নেতা বলেন, দলের দুঃসময়েই যদি তাকে পাশে পাওয়া না গেল, তাহলে সুদিনে তার কী দরকার! জানা যায়, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল বসিয়ে বিচার শুরু করলে জামায়াতের এ নেতা ছিলেন আটক নেতাদের ও দলের মুখপাত্র। প্রতিদিনই তিনি দল ও আটক নেতাদের হয়ে মিডিয়ার সামনে নানাভাবে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতেন, ক্লান্তিহীনভাবে তার যুক্তিতর্ক আদালত বা মিডিয়ার মাধ্যমে দেশবাসীর সামনে উপস্থাপনা করতেন। নিয়মিত ব্রিফিং ও টকশো করার কারণে দেশে-বিদেশে তিনি ছিলেন অতিপরিচিত মুখ। জামায়াতের তিনিই একমাত্র নেতা, যিনি নিয়মিত টকশো করতেন। ২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর ওমরাহ পালনের কথা বলে ঢাকা ছাড়েন জামায়াত নেতা রাজ্জাক। সৌদি আরব না গিয়ে প্রথমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখান থেকে লন্ডন হয়ে সৌদি আরব যান। পরে আবার লন্ডন ফিরে যান। সূত্র জানায়, প্রায় দুই বছর ধরে প্রবাস জীবনে নীরবতায় রয়েছেন ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। তিনি বর্তমানে কোন দেশে আছেন, কবে আসবেন তা কেউই জানে না। দলের শীর্ষ কোনো নেতার সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই। এ বিষয়ে জামায়াত নেতারা কোনো মন্তব্য করতে চাননি। নেতারা জানান, তিনি আদৌ আসবেন কিনা তা-ও অনিশ্চিত। রাজ্জাকের মতো একজন সিনিয়র নেতার এভাবে বিদেশ পাড়ি দেওয়ায় জামায়াতের নেতা-কর্মীরা বিস্মিত ও বিব্রত। কর্মীমহলে এমন ধারণা দেওয়া আছে, মামলা ও গ্রেফতারের আশঙ্কায় ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে দেশ ছাড়েন তিনি। তিনি বাইরে থেকে জামায়াতের হয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বে লবিং করছেন। কিন্তু সাধারণ নেতা-কর্মী, এমনকি দলের নেতারাও এখন আর তা বিশ্বাস করেন না। একের পর এক বিচার, এমনকি দলের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি সম্পন্ন হওয়ায় নেতা-কর্মীরা এখন তাকে দলের জন্য আর আগের মতো অপরিহার্য বলে মনে করছেন না। দলের অনেকেরই ধারণা, তিনি সরকারের সঙ্গে গোপন সমঝোতা করে দেশ ছেড়েছেন। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, দলের প্রয়াত সাবেক আমির গোলাম আযমের মামলা থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত কোনো মামলাতেই দলের নেতা-কর্মীরা তাকে কাছে পাননি। দলের দুঃসময়ে তার বাইরে থাকাটা নেতা-কর্মীরাও মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারেননি। তার বর্তমান অবস্থানে নেতা-কর্মীরাও রীতিমতো বিস্মিত। দলের নেতা-কর্মীরা রাজ্জাকের এ পলায়নকে কাপুরুষের কাজ বলে অভিহিত করছেন। সূত্র জানায়, কামারুজ্জামানের রায়ের বিপক্ষে রিভিউ আবেদন করার জন্য ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে প্রয়োজনীয় পরামর্শের জন্য যোগাযোগও করতে পারেননি তারা। দুঃসময়ে তাকে পাশে না পেয়ে কামারুজ্জামানের দলের বেশির ভাগই ক্ষুব্ধ ও হতাশ। জানা গেছে, পরিবারের আশঙ্কা, দেশে ফিরলে দলের অন্য শীর্ষ নেতাদের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গ্রেফতার হতে পারেন আবদুর রাজ্জাকও। এ জন্যই জামায়াতের কোনো কোনো নেতা তাকে বিদেশে নীরব থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। ০৬ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে