শুক্রবার, ০৬ নভেম্বর, ২০১৫, ০২:৫৫:২৯

নিরাপত্তা ও বিনিয়োগে এক সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার

নিরাপত্তা ও বিনিয়োগে এক সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার

আন্তর্জাতিক: জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধিতে 'ব-দ্বীপ পরিকল্পনা' বাস্তবায়নে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়েছে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস। বুধবার সন্ধ্যায় নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের রাষ্ট্রীয় বাসভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। এক যৌথ বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়, ব্যবসা-বাণিজ্য, বেসরকারি খাতের উন্নয়ন, কৃষি, বন্দরের উন্নয়ন ও আইনের শাসন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পরে শেখ হাসিনার সম্মানে নৈশভোজে পানি ব্যবস্থাপনা নিয়েও আলোচনা হয়। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে 'ব-দ্বীপ পরিকল্পনা' বাস্তবায়নে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে একমত পোষণ করেন। ব-দ্বীপ অঞ্চলে থাকায় বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে পানিসম্পদের ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে বলেও মত দেন তারা। প্রধানমন্ত্রী ব-দ্বীপ ব্যবস্থাপনায় নেদারল্যান্ডসের দক্ষতার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা প্রণয়নে সহযোগিতার জন্য ডাচ প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। শেখ হাসিনা শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি সামর্থ্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনার অধীনে নেদারল্যান্ডস সরকারের সঙ্গে একটি কার্যকর অংশীদারিত্ব ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। দুই প্রধানমন্ত্রী সন্তোষের সঙ্গে উল্লেখ করেন, দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস এক সুদৃঢ় ও পারস্পরিক লাভজনক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলেছে। দু'দেশের মধ্যকার দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীদ্বয় এ সম্পর্ক আরও জোরদারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশি পণ্যের অন্যতম রফতানিকারক ও বিদেশি বিনিয়োগকারী অন্যতম শীর্ষ দেশ হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন তারা। দুই পক্ষই দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির আগ্রহের কথা জানায়। ডাচ প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পে আগ্রহ প্রকাশ করলে প্রস্তাবটি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে বলে জানান শেখ হাসিনা। দেশের তৈরি পোশাক খাতকে 'টেকসই শিল্পায়নের মডেল' হিসেবে দাঁড় করাতে নেদারল্যান্ডস সরকারের সহযোগিতামূলক পদক্ষেপের জন্য ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দুই দেশের মধ্যে বর্তমানের সহযোগিতা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন তারা। এ সময় বিশ্বশান্তি রক্ষায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে দুই পক্ষ। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের সেনা ও পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেন ডাচ প্রধানমন্ত্রী। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে সাফল্যের প্রশংসা করে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও উন্নয়নশীল বিশ্বের নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন ডাচ প্রধানমন্ত্রী। জলবায়ু পরিবর্তনকে মানবজাতির সামনে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচনার ক্ষেত্রে একমত হন দুই প্রধানমন্ত্রী। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম, মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, নৌপরিবহন সচিব শফিক আলম মেহেদী, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক ও নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল। চারটি চুক্তি সই :বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস শিক্ষা ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদারের লক্ষ্যে চারটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের উপস্থিতিতে তার সরকারি ভবন 'কাস্টহুইস'- এ বুধবার রাতে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিববৃন্দ এসব চুক্তি স্বাক্ষর করেন। চুক্তিগুলো হচ্ছে_ বাংলাদেশ থেকে জুনিয়র কূটনীতিকদের জন্য প্রশিক্ষণ সহযোগিতা, স্যাক্সন ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্স, স্কুল অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি এবং বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই এবং স্যাক্সন ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্স ও বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা চুক্তি/সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই। তাক লাগানো অগ্রগতিতে ডাচ রানীর প্রশংসা :অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তাক লাগানো অগ্রগতির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন নেদারল্যান্ডসের রানী ম্যাক্সিমা। বুধবার সন্ধ্যায় নেদারল্যান্ডসের রয়েল প্যালেসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন রানী। আন্তরিক পরিবেশে দু'জনের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ বিষয়ে অবহিত করেন। অর্থনীতিতে বাংলাদেশের ঈর্ষণীয় অগ্রগতির প্রশংসা করে কীভাবে অর্থনীতিতে বাংলাদেশের এ অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে, তা জানতে চান ডাচ রানী। জবাবে প্রধানমন্ত্রী অগ্রগতির কৃতিত্ব দেশের মানুষকে দেন। মানুষের উদ্যম ও কঠোর পরিশ্রমের ফলে এটা সম্ভব হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। 'আসুন, মানুষের জীবন বদলে দিই' :নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুই দেশের যৌথ প্রচেষ্টা লাখো মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে। গতকাল বৃহস্পতিবার হেগে ডাচ ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে এক সেমিনারে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের সম্ভাবনাগুলো তুলে ধরে শেখ হাসিনা এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশে বস্ত্র, চামড়া, পাট, সিরামিক, ওষুধ, পেট্রোকেমিক্যালস, জাহাজ নির্মাণ, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, প্লাস্টিক পণ্য, হালকা প্রকৌশল এবং ইলেকট্রনিক্স, টেলিযোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি আর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, অবকাঠামো উন্নয়নের মতো খাতে ডাচ কোম্পানিগুলোকে আমরা বিনিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছি।' বাংলাদেশ এরই মধ্যে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে পৌঁছে গেছে জানিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যের কথাও সেমিনারে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ডাচ ব্যবসায়ীদের বলেন, 'আমি আপনাদের, ডাচ ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানাই, আপনারা আসুন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের, মুনাফা ও সমৃদ্ধির অংশীদার হোন। আমরা একজোট হলে লাখো মানুষের জীবন বদলে দিতে পারি।' শেখ হাসিনা জানান, বাংলাদেশে শুধু রফতানিমুখী শিল্পের জন্য আটটি রফতানি প্রক্রিয়াকরণ জোন রয়েছে। সরকার এখন ১০০টি রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল এবং বেশ কয়েকটি হাইটেক পার্ক গড়ে তুলতে কাজ করছে, যেখানে ডাচ কোম্পানিগুলো ব্যবসার সুযোগ নিতে পারে। অন্যদের মধ্যে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সভাপতি মার্টিন ফারব্রুগেন, দেশটির সাবেক কৃষিমন্ত্রী চিজ ফিরমান, বাংলাদেশ সরকারের মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির প্রথম সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন। মার্টিন ফারব্রুগেন বলেন, 'বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত কর্মঠ। বাংলাদেশ অত্যন্ত সুন্দর একটি দেশ।' বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল ইসলাম অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে আরও ডাচ বিনিয়োগ কামনা করেছেন। তিনি বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে বাংলাদেশ থেকে আরও বিশ্বমানের পণ্য আমদানি করার জন্য নেদারল্যান্ডসের কোম্পানিগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। নেদারল্যান্ডসের বৈদেশিক বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহযোগিতাবিষয়ক মন্ত্রী লিলিয়ান প্লুমেন বুধবার নেদারল্যান্ডসের প্রশাসনিক রাজধানী হেগ নগরীতে গ্র্যান্ড হোটেল আমরাথ কুরহাউসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠককালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অনুরোধ জানান। টমেটোওয়ার্ল্ড পরিদর্শন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল নেদারল্যান্ডসে কুর্নাস্ট্রা অ্যান্ড কোম্পানি পরিদর্শন করেছেন। সেখানে রাসায়নিক ও তাপ নিয়ন্ত্রণ ছাড়া সবজি সংরক্ষণ করা হয়। তিনি টমেটোওয়ার্ল্ড পরিদর্শন করেন। সেখানে পঞ্চাশ প্রকারের টমেটো উৎপাদিত হয়। প্রধানমন্ত্রী গতকাল প্রথমেই হেগের বাইরে কুর্নাস্ট্রা অ্যান্ড কোম্পানি পরিদর্শন করেন। এ খামারে সারাবছর উৎপাদক ও আমদানিকারকরা ফল ও সবজির ব্যবসা করে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী খামারের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখেন এবং কর্মকাণ্ড সম্পর্কে কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অবহিত হন। পরে শেখ হাসিনা টমেটোওয়ার্ল্ডে যান। সেখানে কর্মকর্তারা তাকে এই গ্রিনহাউস খামারের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত করেন। ওই খামারে বিশেষ প্রকারের টমেটোর প্রতি কেজি বীজের দাম ৮০ লাখ টাকা। খামার দুটি পরিদর্শনের সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সফরসঙ্গীরাও ছিলেন।-সমকাল ০৬ নভেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/পিবি/পিপি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে