মঙ্গলবার, ০৭ নভেম্বর, ২০১৭, ০১:৫৬:৫০

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দালালদের দৌরাত্ম্য, প্রতারিত হচ্ছে রোহিঙ্গারা

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দালালদের দৌরাত্ম্য, প্রতারিত হচ্ছে রোহিঙ্গারা

ফারুক তাহের, উখিয়া থেকে : এমনিতেই নানামুখী সংকটে রয়েছে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। তার ওপর ক্ষুদ্র একশ্রেণির দালালের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হচ্ছে উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা।

ক্যাম্পে ক্যাম্পে বেড়েছে তাদের দৌরাত্ম্য। বিশেষ করে নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের তাঁবুর জায়গা নিতে গিয়ে দালালদের হাতে দিতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। যারা টাকা দিতে পারে না, তাদের কোথাও আশ্রয় মেলে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উখিয়া উপজেলায় মিয়ানমার থেকে গত আড়াই মাসে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য গড়ে উঠেছে আটটি ক্যাম্প। এ ক্যাম্পগুলোয় মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে তাঁবুর জন্য ৮ ফুট বাই ১০ ফুটের ছোট্ট একটি জায়গা নিতেই একেকজন দালালকে দিতে হয় ২ থেকে ৫ হাজার টাকা।

এ ছাড়া মাসিক ভাড়া হিসেবে গুনতে হয় তাঁবুপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। সরকারি জায়গায় গড়ে ওঠা এসব ক্যাম্পের জায়গা নিজেদের দাবি করে নিরীহ রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা নেওয়ার পেছনে রয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতা-কর্মীরা।

জানা গেছে, উখিয়া বন বিভাগের জায়গায় গড়ে উঠেছে কুতুপালং-১, কুতুপালং-২, বালুখালী-১, বালুখালী-২, হাকিমপাড়া, জামতলী, তাজনির মার ঘোনা, ময়নার ঘোনাসহ আটটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প। এ ক্যাম্পগুলোতেই নতুন-পুরান প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার বাস।

এর বাইরে টেকনাফের লেদা ও মুছনী ক্যাম্পে রয়েছে আরও প্রায় ৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এই বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গার অনেকেই দালালদের হাতে প্রতারিত হচ্ছে। সরকারি বন বিভাগের জায়গা নিজেদের বলে দাবি করে তাবুর জন্য এককালীন টাকা ও মাসিক ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।

কেউ কেউ সামাজিক বনায়নের জায়গাও নিজেদের বলে দাবি করে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে এসব অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কান পর্যন্ত খুব কমই পৌঁছে। ফলে দালাল ও প্রতারকরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

ইতিপূর্বে উখিয়া থানা পুলিশের হাতে দালাল চক্রের কয়েক সদস্য ধরা পড়লেও মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছে। চিহ্নিত দালাল ও প্রতারকদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জোরালো তৎপরতার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করে উখিয়ার সচেতন মহল ও প্রতারণার শিকার রোহিঙ্গারা।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিয়ানমারে সেনাবাহিনী, বিজিপি ও সে দেশের পুলিশের নির্যাতন-ধর্ষণের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয় উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে। অনেকটা নিঃস্ব হয়ে পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গা এখানেও নানাভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছে। একটি দালাল চক্রের হাতে প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হলেও ভয়ে রোহিঙ্গারা তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চায় না। ফলে অনেক ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে।

জানা গেছে, যে কয়েকটি সিন্ডিকেট রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে তাঁবুর জায়গার দখল দিতে টাকা লুটে নিচ্ছে তাদের অন্যতম একজন হলেন উখিয়ার রাজাপালং ইউপি সদস্য মোহাম্মদ বখতেয়ার প্রকাশ বখতেয়ার মেম্বার। এ ছাড়া রয়েছেন বালুখালী ইউপি সদস্য জয়নাল মেম্বার, নুরুল আমীন মেম্বার, সরকারি দলের স্থানীয় প্রভাবশালী ফজল কাদের রাব্বি, সোনা আলী প্রমুখ।

কুতুপালং পুরনো ক্যাম্পে রয়েছে নূর বশর ও নূর আলম সিন্ডিকেট। এ ছাড়া টেকনাফে রয়েছেন ইসমাইল মেম্বার ও তার চার ভাই, মোহাম্মদ ছৈয়দ, জিয়াবুল, জাবেদসহ আরও কয়েকজন। এই দালালদের অধীনে রয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন সক্রিয় সদস্য। যারা নানাভাবে রোহিঙ্গাদের প্রতারিত করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

নতুন আসা রোহিঙ্গাদের ঘর নির্মাণের জন্য জায়গা দেওয়ার নাম করে এসব সিন্ডিকেট এক দফা টাকা নিয়ে নেয়। টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর তাদের আর দেখা মেলে না। এরপর তাঁবু বা ঝুপড়ি করতে গেলে শিকার হয় দ্বিতীয় দফার প্রতারণার। ঝুপড়ি নির্মাণের পর দরকষাকষি শুরু হয় মাসিক ভাড়া কত, তা নিয়ে।

দালালদের দাবিকৃত টাকা দিতে ব্যর্থ হলে রোহিঙ্গা নারীরা দালালদের লালসার শিকার হন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এসব কাজের পেছনে দালালদের প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ক্যাম্পের রোহিঙ্গা মাঝিরা।

এ প্রসঙ্গে উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ কায় কিসলু বলেন, ‘আমরা অনেকের মুখে অনেক অভিযুক্তের নাম শুনে থাকি এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযানও পরিচালিত হয়েছে অনেকবার। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগকারী পাওয়া যায় না বলে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায় প্রতিদিনই অভিযান চালাই ক্যাম্পগুলোয়। অনেক অপরাধীকে আমরা চিহ্নিত করেছি এবং আটকও করেছি। এটা চলমান প্রক্রিয়া। আইনশৃঙ্খলা জোরদার করতে ক্যাম্পগুলোয় আরও পাঁচটি ফাঁড়ি বসানো হয়েছে।’ বিডি প্রতিদিন

এমটিনিউজ/এসবি 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে