মঙ্গলবার, ০৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১১:২৮:৫৭

রংপুর সিটিতে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে চারজন

রংপুর সিটিতে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে চারজন

স্বপন চৌধুরী, রংপুর : তফসিল ঘোষণার পর রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে ভোটের ভিন্ন রকম এক আমেজ তৈরি হয়েছে। দলীয় প্রতীক নিয়ে লড়াইয়ে নেমে শেষ পর্যন্ত কে হবেন নগরবাসীর আগামীর সেবক তা নিয়ে চলছে আলোচনা। সম্ভাব্য প্রার্থীরাও গা ঝাড়া দিয়ে মাঠে নেমেছেন।

তফসিল ঘোষণার আগেই জাতীয় পার্টি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে লাঙল প্রতীকের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতা মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। তবে দলটির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো আসেনি। একই অবস্থা বিএনপিতেও।

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় সতর্কতা অবলম্বন করে পরীক্ষিত প্রার্থী বাছাইয়ে সময় নিচ্ছে দেশের রাজনীতির অন্যতম শক্তিধর এই দুই দল।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. তুহিন ওয়াদুদ দাবি করেন, রংপুর সিটিতে বিজয় নিশ্চিত করার জন্য জনসম্পৃক্ত, জনপ্রিয়, নিজস্ব ভোট ব্যাংকের অধিকারী ও ভোটের রাজনীতিতে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তিকে মনোনয়নের প্রয়োজন অনুভব করেই এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা প্রায় এক ডজন হলেও সাধারণ ভোটারদের দৃষ্টিতে এঁদের মধ্যে চারজন নৌকা প্রতীক পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন। তারা বলছে, জাতীয় পার্টির দুর্গখ্যাত রংপুরে লাঙল প্রতীকের প্রার্থীকে টেক্কা দিয়ে নৌকার বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারে এমন দক্ষ ও ক্লিন ইমেজের প্রার্থী দরকার আওয়ামী লীগের।

সে ক্ষেত্রে তারা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য চৌধুরী খালেকুজ্জামান, বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি সাফিউর রহমান সফি এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ড. জয়নুল আবেদীনের নাম জোর দিয়ে উল্লেখ করেন।

নগরীর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বুড়িরহাট এলাকার ভোটার রহমত উল্লাহ, মনসুর আলী, আলাউদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন বলেন, ‘চৌধুরী খালেকুজ্জামান বড় মাপের মানুষ। তাঁর যোগ্যতা-অভিজ্ঞতা দুই-ই আছে। তাঁকে মনোনয়ন দিলে কুল রক্ষা হতে পারে। ’

২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তম এলাকার ভোটার আব্দুল কাদের, নওশা মিয়া, ওছমান গনি বলেন, ‘বর্তমান মেয়র বিগত পাঁচ বছরে সিটি করপোরেশনে ব্যাপক উন্নয়নকাজ করেছেন। এলাকার ব্যাপক জনগোষ্ঠী তার পক্ষে আছে।’

৫ নম্বর ওয়ার্ডের হারাটি এলাকার ভোটার ইব্রাহিম আলী, হামিদুর রহমানসহ অনেকে বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত দলের হয়ে কাজ করছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান সফি। জনপ্রিয়তাও আছে তার।’

২৩ নম্বর ওয়ার্ডের সিটি বাজার এলাকার ভোটার শওকত আলী, ওমর ফারুকসহ কয়েকজন সচেতন ভোটার বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ড. জয়নুল আবেদীন একজন শান্তিপ্রিয় ও ক্লিন ইমেজের মানুষ। চাকরি জীবনেও তিনি ঘুষ-দুর্নীতির ঊর্ধ্বে ছিলেন।

তবে সব শ্রেণির ভোটারদেরই মন্তব্য, ‘নৌকা প্রতীকে যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হোক না কেন, তা মেনে নিয়ে ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ একজোট হয়ে কাজ করলে জয় আওয়ামী লীগেরই হবে। ’

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে চৌধুরী খালেকুজ্জামান বলেন, ‘আমি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে নই। তবে যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে কেন্দ্র ভুল করবে না। শত বছরের মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করে পরিকল্পিত ও আধুনিক রংপুর গড়তে চাই। ’

সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু বলেন, ‘বিগত পাঁচ বছরে সিটি করপোরেশন এলাকার যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে। আরেকবার নির্বাচিত হয়ে অসমাপ্ত কাজ করে যেতে চাই। জনমত আমার সঙ্গে আছে। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী। ’

সাফিউর রহমান সফি বলেন, ‘নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কেন্দ্রীয় নেতারা দলের বাইরে অন্য কাউকে মনোনয়ন দেবেন তা বিশ্বাস করি না। এটা যদি হয় তাহলে মাঠের কর্মীরা রাজনীতিতে নিরুৎসাহী হবে।’

ড. জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘সিটি করপোরেশন এলাকার আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য এলাকার একজন সৎ এবং দক্ষ নেতা অপরিহার্য। ভবিষ্যতের উজ্জ্বল সম্ভাবনার নেতৃত্বের অধিকারী রংপুরের কৃতী সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শে এলাকার উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৎ ও নির্ভীক সৈনিক হিসেবে মেয়র পদে নির্বাচন করতে চাই। মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী।’ -কালের কণ্ঠ

এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে