রবিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৮, ০৭:২৩:৩২

পাকিস্তান একটি অসভ্য রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে : তুরিন আফরোজ

পাকিস্তান একটি অসভ্য রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে : তুরিন আফরোজ

ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ : পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খাজা আসিফ পাকিস্তানে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন না হওয়ার জন্য বাংলাদেশকে দুষলেন। পাকিস্তান প্রকৃতপক্ষে ‘ডিমনেসিয়ায়’ ভুগছে। ‘ডিমনেসিয়া’ একটি অসুখ। এর অর্থ হলো ‘স্মৃতিভ্রম’। এখন খাজা আসিফ এ কথা বলছেন।

কিন্তু আপনারা জানেন, ২০১৬ সালে যখন সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো না তখন কিন্তু তারা দোষ দিয়েছিলেন ভারতের। সেটা কিন্তু একদম কাগজে-কলমে-রেকর্ডে-বিবৃতিতে রয়েছে। তখন তারা ভারতকে দোষ দিল। আজকে তারা হঠাৎ করে বাংলাদেশকে দোষ দিচ্ছে।

এটা কী হাস্যকর ও অযৌক্তিক নয়? সার্কভুক্ত আটটি রাষ্ট্রের মধ্যে নেপাল সার্কের সভাপতি। বাংলাদেশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে না, এমন কথা জানানোর আগেই কিন্তু ভারত, ভুটান, আফগানিস্তান সম্মেলন বর্জনের ঘোষণা দেয়। ৩০ সেপ্টেম্বর সম্মেলন প্রত্যাখ্যান করে শ্রীলংকা। মালদ্বীপ তারও পরে ১ অক্টোবর সম্মেলনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়।

এখন আসা যাক, কেন তারা সম্মেলন বর্জন করেছিল। ভারত বলছে, পাকিস্তানের সাথে তাদের ‘কাশ্মির’ ইস্যু নিয়ে সমস্যা আছে। অন্য রাষ্ট্রগুলো বললো, পাকিস্তান একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। তারা সন্ত্রাসীদের মদদ দেয়। তাদের ওখানে সার্ক সম্মেলনে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু বাংলাদেশ বলছে এখানে দু’টি ইস্যু।

এক. যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সংক্রান্ত ব্যাপারে পাকিস্তান তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলিয়েছে। দুই. পাকিস্তান একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। কিন্তু এসব অভিযোগকে এড়িয়ে গিয়ে তারা যখন বলে, বাংলাদেশের কারণে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হয়নি, তখন বুঝতে বাকি থাকেনা যে, পাকিস্তান রাষ্ট্রটির স্মৃতিভ্রম ঘটেছে।

আসলেই পাকিস্তান একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় তারা বললো, তারা এ বিচার সমর্থন করেনা। তারা এ ব্যাপারে অসন্তুষ্ট। তার মানে তারা গণহত্যাকে সমর্থন করে। কারণ তারা নিজেরাই একটি গণহত্যাকারী রাষ্ট্র। পাকিস্তান বলছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালের ত্রি-পক্ষীয় চুক্তি ভঙ্গ হয়েছে। পাকিস্তানের এ কথাও প্রমাণ করে তারা ডিমনেসিয়ার রোগী।

কারণ, ১৯৭৪ সালের ত্রি-পক্ষীয় চুক্তি কোনভাবেই আমাদের উপর বাধ্যতামূলক নয়। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ- এ ধরনের কোন অপরাধ কোনভাবেই ক্ষমাযোগ্য নয়। এসব অপরাধে কেউ কাউকে ক্ষমা করতে পারেনা। এসব অপরাধে কেউ যদি কাউকে মাফ করে তাহলে ভিয়েনা কনভেনশনের অনুচ্ছেদ ১৫৩ অনুযায়ী চুক্তিটি বাতিল হয়ে যায়।

এই চুক্তি অনুযায়ী ত্রি-পক্ষীয় চুক্তিটি একটি বাতিল চুক্তি। এই চুক্তির কোন কার্যকারিতা আন্তর্জাতিক আইনেও নেই, আমাদের দেশীয় আইনেও নেই। তার প্রমাণ হচ্ছে, আমার দেশের আইনে কোন আন্তর্জাতিক চুক্তি তখনই বাধ্যতামূলক হবে যখন সেটি সংবিধানের ১৪৫(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আমার দেশের সংসদে সেটি পাস হবে। কিন্তু কখনো এই চুক্তি আমাদের সংসদে উথাপিত হয়নি।

প্রশ্ন হচ্ছে, কেন বলছি পাকিস্থানের স্মৃতিভ্রম ঘটেছে? কারণ হচ্ছে, তারা বলছে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী সহ আজকে আমাদের এখানে যাদের বিচার হচ্ছে তাদের বিচার আমরা করব না, এমন একটি ওয়াদা নাকি আমরা করেছিলাম। পাকিস্তানের স্মৃতির এমন দেউলিয়াত্ব হয়ে গেছে যে, বাংলাদেশের আল বদর, আল শামস, রাজাকার নিয়ে একটা লাইনও ত্রি-পক্ষীয় চুক্তিতে নেই। যদি তারা মনে করে ঐ চুক্তির দোহাই দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচারের সমালোচনা তারা করবে, তাহলে তাদের বক্তব্য অনুযায়ী রাজাকার, আলবদর, আলশামসরা তাদের দেশের নাগরিক। মানে পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধী।

লেখক : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। এমটিনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)
এমটিনিউজ/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে