নিউজ ডেস্ক : চট্টগ্রামে বাংলাদেশ বিমানের উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের চেষ্টা করা যুবকের নাম পলাশ আহমেদ। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার কথা বলে ১৭এ সিটের টিকিট কাটা পলাশের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের দুধঘাটা গ্রামে।
পিয়ার জাহান ও রেণু আক্তার দম্পতির একমাত্র ছেলে পলাশ। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট তিনি। তেমনভাবে পড়াশোনা না করলেও পলাশের জীবনে প্রেমের শেষ ছিল না। এক মেয়েকে ভালোবেসে জেল খাটার পর, আরেক মেয়েকে বিয়ে করা পলাশ সর্বশেষ চিত্রনায়িকা শিমলার সঙ্গে প্রেমের পর বিয়েও করেছিলেন।
জানা যায়, পলাশ ২০১৪ সালে বগুড়া সদর উপজেলায় মেঘলা নামের এক মেয়েকে প্রথমে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে আড়াই বছর বয়সী আয়ান নামে একটি পুত্রসন্তান আছে। এর কিছুদিন আগে আরেক মেয়েকে বিয়ের জন্য অপহরণের অপরাধে জেল খাটতে হয়েছিল তাকে।
সর্বশেষ চিত্রনায়িকা শিমলাকে বিয়ে করলেও শেষ পর্যন্ত সেই সংসারেও তেমন স্বাচ্ছন্দ্য ছিল না। স্ত্রী শিমলার সঙ্গেই বিমান থেকে কথা বলতে চেয়েছিলেন পলাশ। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ক্রিমিনাল রেকর্ড অনুসারে, ২০১২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানা এলাকার দেলোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তি তার মেয়েকে অপহরণের অভিযোগে পলাশের নামে মামলা করেন।
ওই বছরের ২৮ মার্চ র্যাব পলাশকে নেমরা মারমা নামে এক সহযোগীসহ কাঁচপুরের আলী নূর স্টিল মিলসের সামনে থেকে গ্রেফতার করে। পলাশের বাবা পিয়ার জাহান বলেন, ‘এক মেয়ের সঙ্গে পলাশের ভালোবাসা ছিল। ওই মেয়ের বাবা মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় পলাশ ২০ দিন কারাগারে ছিল। পরে জামিন করাই।’
পলাশের বাবা বলেন, ‘আমার একটাই ছেলে। আমরা ওই মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি ছিলাম। কিন্তু মেয়ের বাবা রাজি হন নাই। অবশ্য আপসের মাধ্যমে তারা মামলাটা তুলে নিছেন।’ পারিবারিক সূত্রের খবর, পলাশের বাবা পিয়ার জাহান ১৯৯০ সাল থেকে বিদেশে থাকতেন। প্রথমে কুয়েত এবং পরে সৌদি আরবে ছিলেন তিনি। এখন এলাকায় একটি মুদিদোকান আছে তার।
পিয়ার জাহান বলেন, ‘পলাশ সোনারগাঁ উপজেলার মঙ্গলেরগাঁও তাহেরপুর ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে ২০১২ সালে দাখিল পরীক্ষা দিয়ে পাস করে। দাখিল পাস করে সে সোনারগাঁও ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়। সেখানে পড়া অবস্থায় সে ঢাকায় চলে যায়। এর পর থেকে তার আচরণে পরিবর্তন দেখা দেয়। একপর্যায়ে জানা যায়, পলাশ ঢাকায় চলচ্চিত্রে কাজ করার চেষ্টা করছে। তখন বাড়ির সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল না। মাঝে মাঝে বাড়িতে এলেও এলাকার মানুষের সঙ্গে মিশত না, কথা বলত না।’
পলাশের মা রেণু আক্তার বলেন, ‘২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির দিকে শিমলা নামে এক মেয়েকে রাতের বেলা বাড়িতে নিয়ে আসে পলাশ। মেয়েটিকে চিত্রনায়িকা ও তার প্রেমিকা বলে আমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। দুই মাস পর আবার শিমলাকে বাড়িতে নিয়ে এসে স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেয়। তাদের বিয়ের কথা শিমলাও আমাদের কাছে স্বীকার করে। ওই রাতেই তারা আবার ঢাকায় চলে যায়। আমরা শিমলাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, তাকে বলেছি, আমার ছেলেকে যেন ভালো পথে ফিরিয়ে আনে। ছোটবেলা থেকেই ছেলেটা অবাধ্য ছিল। পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে প্রবাস থেকে ওর বাবার পাঠানো টাকা সে নানা পথে খরচ করেছে।’
পলাশের মা জানান, বিয়ের পর তিন মাস পর্যন্ত পুত্রবধূ শিমলার সঙ্গে তাদের কথাবার্তা হয়েছে। কিন্তু পরে আর শিমলার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। হয়তো পলাশের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছিল বলে মনে করেন পলাশের মা।
পলাশের বাবা পিয়ার জাহান বলেন, ‘সর্বশেষ ২০-২৫ দিন আগে পলাশ বাড়িতে আসে। বাড়িতে আসার পর তার আচরণে বিরাট পরিবর্তন দেখা দেয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া শুরু করে। মসজিদে গিয়ে আজানও দিয়েছে। সর্বশেষ শুক্রবার বাড়ি থেকে যাওয়ার আগে বলেছে, সে কাজের সন্ধানে দুবাই যাবে।’
রবিবার চট্টগ্রামে বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় পলাশের মৃত্যুর খবর ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারেন বলে জানান তিনি। ব্যক্তিজীবন থেকে একেবারেই আলাদা ছিল ফেসবুক-জীবন : ব্যক্তিজীবনে পলাশ আহমেদ ফেসবুকে ‘মাহাবি জাহান’ নামে পরিচিত ছিলেন।
সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে পাস করার তথ্য জানিয়েছিলেন পলাশ। জানানো হয় ব্রিটিশ এয়ারওয়েজে চাকরি ও স্কটল্যান্ডে বসবাসের তথ্য। পাশাপাশি ফেসবুকে চিত্রনায়িকা শিমলার সঙ্গে বেশ কিছু অন্তরঙ্গ ছবি আছে পলাশের। অবশ্য একাধিক সংগীতশিল্পী, ক্রিকেট তারকা ও ভারতীয় শিল্পীর সঙ্গে পলাশের ছবিও দেওয়া আছে ফেসবুকে। বিডি প্রতিদিন