‘হিন্দুরাও আমাকে ভগবানের মতো ভালোবাসে’
ঢাকা : ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন প্রধান আসামি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসীমউদ্দিন রাহমানী। তিনি দাবি করেছেন, চরমোনাই পীরের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণেই আমাকে এ মামলায় জড়ানো হয়েছে।
মঙ্গলবার ঢাকার তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহম্মেদের এজলাসে আত্মপক্ষ সমর্থন করে দেয়া বক্তব্যে তিনি এ দাবি করেন। লিখিত বক্তব্যের পর এজলাসে মুখেও কথা বলেন তিনি।
এদিন মামলার আরো ছয় আসামি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেন। তারা সবাই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত ছাত্র।
তাদের মধ্যে মৌখিক বক্তব্য দেন নাফিস ইমতিয়াজ, নাঈম ইরাদ ও এহসান রেজা রুম্মান। ফয়সাল বিন নাঈম দীপ, মাকসুদুল হাসান অনিক ও সাদমান ইয়াছির মাহমুদ লিখিতভাবে তাদের বক্তব্য জমা দিয়েছেন।
তারা সাফাই সাক্ষী হাজির করবেন না বলে আদালতকে জানান। তবে মামলার আট আসামির মধ্যে পলাতক রয়েছেন রেদোয়ানুল আজাদ রানা।
মুফতি জসীম তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও শিক্ষা জীবনের বৃত্তান্ত এবং আর্থিক অবস্থা তুলে ধরেন। বলেন, ব্লগার কী- এর আগে আমি জানতাম না। আমার আলোচিত বইয়ে মহাত্মা গান্ধীর প্রসঙ্গ ও উদ্ধৃতি রয়েছে।
তিনি বলেন, বরগুনায় আমার এলাকায় হিন্দুরা আমাকে ভগবানের মতো ভালোবাসে। আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের ভাই আমাকে আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজলের কাছে যেতে বলেন। আমার টাকা নেই বলে আমি তার মতো উকিল ধরতে পারিনি।
দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল এ মামলার আসামি সাদমান ইয়াসির মাহমুদের আইনজীবী।
বিচারক সাঈদ আহমদ আসামি রাহমানীকে প্রশ্ন করেন, আপনি কেন মানুষ হত্যা করেন? আপনি যদি ভালোই হন কেন আপনার নাম এ মামলায় এল। আপনি বলেছেন আপনি খুব ভালো ছাত্র ছিলেন। এত বড় হওয়ার চেষ্টা করেছেন কেন?
বিচারকের প্রশ্নের উত্তরে নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতা রাহমানী বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, রাজীব হত্যা মামলার আমি কিছু জানি না।
আমাকে পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে কয়েকবার অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয়েছে। চোখ বাঁধা অবস্থায় আমাকে আসামি হিসেবে কয়েকজনের নাম বলতে বলেছে।
এর আগে বিচারক আসামি নাফিজ ইমতিয়াজের কাছে জানতে চান, তিনি পলাতক আসামি রানাকে চেনেন কিনা? নাফিজ জবাবে বলেন, চেনেন না।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা রানা লেখক অভিজিৎ রায় হত্যকাণ্ডেও জড়িত ছিলেন বলে পুলিশের বক্তব্য।
আসামি অনিকের আইনজীবী রেজাক খান বলেন, গণমাধ্যমে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এ হত্যায় জড়িত বলে এসেছে। এ হত্যায় তারা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নাম কোথায় পেল?
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাহাবুবুর রহমান ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় আসামিদের রাষ্ট্রপক্ষের সব সাক্ষীর জবানবন্দি পড়ে শোনান এবং দোষী না নির্দোষ তাদের কাছে জানতে চান। জবাবে আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায় বিচার চেয়েছেন।
২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরুর পর ১৫ ফেব্রুয়ারি মিরপুরের বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় মঞ্চের কর্মী স্থপতি রাজীবকে।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা ডা. নাজিম উদ্দিন পল্লবী থানায় মামলা দায়ের করেন। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ ধর্মীয় উগ্রবাদীরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে পুলিশের তদন্তে উঠে আসে।
গত ১৮ মার্চ আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি মোহাম্মদ জসীমউদ্দিন রাহমানি এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাত ছাত্রসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে মামলার বিচার শুরু হয়। ত্রুটি ধরা পড়ায় গত ২১ মে নতুন করে আবার অভিযোগ গঠন করা হয়।
মঙ্গলবার আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য শেষ হলে আগামী বৃহস্পতিবার যুক্তিতর্ক শুরুর দিন ধার্য রেখেছে আদালত।
২২ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম
�