বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৫:৩৬:৪২

গোপালগঞ্জ নিয়ে হাসির গল্প

গোপালগঞ্জ নিয়ে হাসির গল্প

মোস্তফা কামাল : ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাস। নতুন সরকার সবে ক্ষমতায় বসেছে। ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে সব কিছু বদলাতে শুরু করে। প্রশাসনে রং বদল, রাজনীতিতে ভোল বদল, সুবিধাবাদীদের কোর্ট বদল আর সুযোগসন্ধানীদের নাম অদলবদলের হিড়িক পড়ে যায়। যে মানুষটি নিজের নামের আগে বা পিছে ‘শেখ’ পদবি ব্যবহার করতেন না; তিনি বেশ কায়দা করে নামের আগে ‘শেখ’ ব্যবহার শুরু করলেন। যেমন—আমরা একজনকে এস এ জলিল হিসেবে চিনতাম। এখন তিনি শেখ আবদুল জলিল পরিচয় দিতেই গর্ব বোধ করেন। এ প্রসঙ্গে একটি সত্য ঘটনার কথা বলি। জালাল নামের একজন কূটনীতিক ছিলেন। তিনি বিএনপি সরকারের আমলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এস এম জালাল নামে পরিচিত ছিলেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে তিনি হয়ে গেলেন শেখ মোহাম্মদ জালাল। আরেকজন লোককে জানি, তাঁর নাম ছিল মোহাম্মদ জামাল হোসেইন। সম্প্রতি তিনি শেখ জামাল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন! কয়েক দিন আগে তাঁর কাছে জানতে চাইলাম, জামাল, নাম বদলের উপকার পাচ্ছেন? তিনি হো হো করে হেসে বললেন, পাচ্ছি। শেখ পদবির দোহাই দিয়ে অনেকেই রাতকে দিন আর দিনকে রাত করে ফেলেন। তাদের প্রভাবে অন্যরা রীতিমতো কোণঠাসা। আর কারো বাড়ি যদি হয় গোপালগঞ্জ, তাহলে তো কথাই নেই! গোপালগঞ্জবাসীর জন্য নাকি সাত খুন মাফ! পূর্ণ কর্তৃত্ব নিয়ে পুরো দেশ দাপিয়ে বেড়ান তাঁরা। কি ব্যবসা, কি চাকরি কিংবা অন্য যেকোনো পেশায়ই তাঁরা থাকুন না কেন, তাঁদের প্রভাবে অন্য জেলার লোকজন ঠিকমতো দম ফেলতে পারে না। প্রিয় পাঠক, যা বলছিলাম, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব কিছু যখন বদল হতে শুরু করল, সেই সঙ্গে রাজধানীর থানাগুলোর ওসি বদলও শুরু হলো। ঢাকার ওসি মানেই গোপালগঞ্জের লোক। তারপর শুরু হলো তাদের বাড়াবাড়ি। সেই বাড়াবাড়িতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠল। কিন্তু প্রতিকারের কোনো উপায় ছিল না। উপরন্তু ‘গোপালগঞ্জকরণ’ সর্বত্রই বিস্তার লাভ করল। একপর্যা য়ে এটা সাধারণ মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ল। গোপালগঞ্জবাসীর কথা বলার ধরন, হাঁটাচলার স্টাইল দেখে সবাই বুঝতে পারে। সর্বত্র গোপালগঞ্জের প্রভাব দেখে মানিকগঞ্জের এক ব্যবসায়ী ফজলুর রহমান ভাবলেন, আমার শ্বশুরবাড়ি তো গোপালগঞ্জ! আমি কেন এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছি না! ফজলুর রহমান তার স্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করলেন। তাঁকে বললেন, গোপালগঞ্জ বাড়ি হলেই কিন্তু প্রভাব-প্রতিপত্তি বেড়ে যাবে। অনেক রকম ব্যবসাপাতি পাওয়া যাবে। দ্রুত টাকা-পয়সাও বানানো যাবে। কাজেই আর দেরি কেন? জায়গা কিনে বাড়ি বানিয়ে ফেলি! ব্যস, গোপালগঞ্জে শ্বশুরবাড়ির কাছে জায়গা কিনে ফজলুর রহমান সেখানকার অধিবাসী হয়ে গেলেন। তারপর শুরু করলেন ধান্দা। পথও পেয়ে গেলেন। এখন তিনি বেশ আছেন! একবার ফার্মগেট এলাকায় ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহারের জন্য পুলিশ খুব চেষ্টা-তদবির শুরু করল। কিন্তু মানুষকে কিছুতেই ফুট ওভারব্রিজে তুলতে পারল না। কী আর করা! পুলিশ লাঠি নিয়ে রাস্তায় নেমে গেল। যে-ই যানবাহন ঠেলে রাস্তা পার হচ্ছিল, তাকেই বেধড়ক পেটাচ্ছিল পুলিশ। এর মধ্যে একজন ছিলেন গোপালগঞ্জের পাবলিক। পুলিশ যেই তাঁকে বেত মারা শুরু করল, অমনি লোকটি তেড়ে উঠলেন। আপনি কার গায়ে হাত তুলেছেন জানেন? আমার বাড়ি গোপালগঞ্জ! গোপালগঞ্জ নাম শুনেই পুলিশের চেহারা গেল পাল্টে! মারমুখী পুলিশ মুহূর্তের মধ্যে ভিজা বিড়াল হয়ে গেল। কাঁচুমাচু করে লোকটির সামনে দাঁড়িয়ে বলল, স্যরি ভাই, ভুল হয়ে গেছে। আগে বলবেন না আপনার বাড়ি গোপালগঞ্জ! লোকটি ধমকের সুরে বললেন, কী করে বলব, কথা না বলেই তো পেটানো শুরু করলেন! প্লিজ ভাই, ভুল হয়ে গেছে। আর ভুল হবে না। লোকটি রাগান্বিত দৃষ্টিতে পুলিশের দিকে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। তারপর চলে গেলেন। আরেকটি ঘটনার কথা বলি। পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে লোক নিয়োগ হবে। নিয়োগ পরীক্ষায় একটি স্পষ্ট নির্দেশ ছিল যে গোপালগঞ্জের কোনো প্রার্থীকে বাদ দেওয়া যাবে না। সেই নির্দেশ বরখেলাপ করার সাধ্য কার! যাঁরা টিকলেন, পরদিনই তাঁদের ভাইভা বোর্ডে ডাকা হলো। বোর্ডে একজন পরীক্ষক এক প্রার্থীর কাছে জানতে চাইলেন, আপনার নাম? শেখ আবদুল হাই। বাড়ি? গোপালগঞ্জ। নড়েচড়ে বসলেন পরীক্ষক। তারপর বললেন, বাব্বা! আপনার তো দেখছি সোনায় সোহাগা! আপনার চাকরি আর ঠেকায় কে? আপনি পাস। আমার আর কোনো প্রশ্ন নেই। আরেকজন পরীক্ষক বললেন, আপনার বাবার নাম? করিম প্যাদা। আপনি শেখ আর আপনার বাবা প্যাদা! ঘটনা কী! স্যার, ঘটনা কিছু না। চাকরির বাজারে প্যাদার কোনো দাম আছে? তা ছাড়া বাড়ি গোপালগঞ্জ আর পদবি প্যাদা—এটা মানায়? তাই পদবি পাল্টাইয়া ফেলছি। ভালো করছি না, স্যার? পরীক্ষক কী বলবেন বুঝতে পারছেন না। তিনি বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে রইলেন। লেখাটি লিখতে লিখতে আমারও কেন জানি মনে হলো, ইস্! আমার বাড়িও যদি গোপালগঞ্জে হতো! সূত্র: কালেরকণ্ঠ লেখক : কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক ২৩ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে