ফঁসকে গেল বিশেষ বোমার প্রধান কারিগর
নিউজ ডেস্ক : রাজধানীর শাহ আলীতে জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার এবং বিশেষ হ্যান্ডগ্রেনেড উদ্ধারের শ্বাসরুদ্ধকর সেই অভিযানের বিষয়টি আগেই টের পেয়েছিল দুর্ধর্ষ জঙ্গি নেতারা।
তাই আগে থেকেই পালিয়ে যায় জেএমবির ঢাকা অঞ্চলের সামরিক শাখার সেকেন্ড ইন-কমান্ডার ও আশুলিয়ার চেকপোস্টে পুলিশ হত্যা মামলার প্রধান সোহেল রানা ওরফে হিরন ওরফে কামাল ওরফে রায়হান (২৪) এবং হোসেনি দালানে হামলাসহ কয়েকটি ঘটনায় ব্যবহৃত হ্যান্ডগ্রেনেড বোমার প্রধান কারিগর মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে মোস্তাক ওরফে শাকিল ওরফে নজরুল ইসলাম (২৬)।
অভিযানের ঘটনায় মামলা দায়ের করে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কয়েকটি দল পলাতক দুই জঙ্গিকে ধরতে অভিযানে নেমেছে। পাশাপাশি আসামি আবু সাঈদ ওরফে রাসেল ওরফে সালমান (২২), ইলিয়াস ওরফে ওমর ফারুক (২৩) ও মহসিন আলী ওরফে রুবেলকে (২০) ছয়দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, শাহ আলী থানাধীন মিরপুর-১ নম্বর সেকশনের ‘এ’ ব্লকের ৯ নম্বর রোডের ৩ নম্বর বাড়ির ষষ্ঠ তলার বাসাটি গ্রেনেড তৈরির কারখানা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এই কারখানায় তৈরি করা বোমা দিয়ে বিদেশিসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যার পরিকল্পনা ছিল জেএমবির জঙ্গিদের।
গত বুধবার গভীর রাত থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ১৬ ঘণ্টার অভিযানের পর শুক্রবার শাহ আলী থানায় মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলার এজাহারে বলা হয়, অভিযানের সময় ওই ভবনের বাসিন্দাদের সড়ানোর সময় সূকৌশলে লোকজনের সঙ্গে মিশে গিয়ে পালিয়ে যায় জেএমবির দুই শীর্ষ নেতা। এদের দু’জনই জেএমবির বোমা তৈরির কারিগর। এদের মাধ্যমেই মিরপুরের ওই আস্তানায় জেএমবির অন্য সদস্যদের জঙ্গি প্রশিক্ষণ দেয়া হতো।
এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘নজরুল বাসা ভাড়া নিয়ে বোমা তৈরি করেছেন। তাদের পরিকল্পনা ছিল ঢাকার কোনো একটি মসজিদ না হয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা অথবা দেশি-বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যা করা।’
এ বিষয়ে ডিবির যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘মিরপুরের জঙ্গি আস্তানা থেকে ১৮টি গ্রেনেড ও বোমার পাশাপাপাশি গ্রেনেড তৈরির সরঞ্জাম ও গ্রেনেড তৈরির বেশকিছু নির্দেশিকা (ম্যানুয়াল) পাওয়া গেছে। ওই ম্যানুয়াল অনুযায়ী জেএমবির অনেক কর্মকাণ্ড চলতো। ঢাকায় বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল জেএমবি। জঙ্গিদের পরিকল্পনা ছিল ঢাকার কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা দেশি-বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যা।’
ডিবির বোমা অপসারণ ও নিষ্ক্রয়করণ দলের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘ওই জঙ্গি আস্তানায় গত চার মাসে ১০ জনকে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে, মিরপুরের ওই জঙ্গি আস্তানায় গ্রেনেড তৈরির পাশাপাশি সেটি তাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার হতো। ওই আস্তানা থেকেই পুরান ঢাকার হোসেনি দালানে তাজিয়া মিছিলে গ্রেনেড হামলাসহ চলমান জঙ্গি কর্মকাণ্ডের গ্রেনেড ও বোমা সরবরাহ করা হচ্ছিল। এছাড়া ইতোপূর্বে উদ্ধার হওয়া গ্রেনেডের সঙ্গেও মিরপুরের জেএমবির আস্তানায় পাওয়া গ্রেনেডের মিল আছে।’
পুলিশ ও বাড়ির মালিকের ছেলের তথ্য অনুযায়ী, তিন মাস আগে মিরপুরের ওই বাড়িটি জেএমবির পলাতক আসামি মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক ওরফে শাকিল ভাড়া নেন। অবশ্য বাড়িটি ভাড়া নেয়ার সময় ওই ব্যক্তি নিজেকে নজরুল ইসলাম বলে পরিচয় দেয়। সেই মূলত ওই বাসায় জঙ্গি প্রশিক্ষণ গড়ে তোলে। হাতে তৈরি গ্রেনেড নিপুণভাবে তৈরি এবং নতুন সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিতো সে।
ওই আস্তায়নায় তৈরি করা গ্রেনেড দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করেছিল তারা। পলাতক নজরুল বোমার প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ও চাইনিজ কুড়াল ব্যবহারেও পারদর্শী। তবে বাড়ির মালিক আবুল হোসেন ভুঁইয়া ও তার ছেলে সারোয়ার হোসেন ভুঁইয়া জঙ্গিদের বাড়িটি ভাড়া দেয়ার আগ পর্যন্ত এ সম্পর্কে কিছু জানতেন না বলে জানান।
জব্দ তালিকা : অভিযানে ১৮টি অবিস্ফোরিত তাজা হ্যান্ড গ্রেনেড, একটি গ্রেনেড তৈরির লেদ মেশিন, ২৫ রাউণ্ড ২২ বোরের (পিস্তল) গুলি, কালো রঙয়ের একটি সিপিইউ, একটি স্যামসাং মনিটর, একটি হ্যান্ড ড্রিল মেশিন, বোমা তৈরির অপর একটি মেশিন ও ৫০টি বিস্ফোরক উপাদান, একটি কলিংবেল, দুটি তাতাল, ১১টি সানলাইট পেন্সিল ব্যাটারি, স্কসটেপ, গ্রেনেডে ব্যবহার করা চ্যানেল ৩০টি, গ্রেনেড তৈরি করতে ব্যবহার করা যায় এমন পিনের রিং চারশটি, গ্রেনেড তৈরির পিন ৪১০টি, নীল ও কালো রঙয়ের ৫৭৩টি ক্যাপাসিটর, গ্রেনেড তৈরির স্প্রিং ৩৮০ পিচ, সবুজ রঙয়ের একটি সুইসাইডাল জ্যাকেট, দুটি চাইনিজ কুড়াল, ৬টি গ্রেনেড বডি, বিয়ারিং বল এক প্যাকেট (যা গ্রেনেডে ব্যবহার হতো), কাগজে মোড়ানো জেল জাতীয় বিস্ফোরক, ২৫০ গ্রাম কয়লার গুড়াসহ ২৩ ধরনের গ্রেনেড, বোমা তৈরির সরঞ্জম পাওয়া যায়।
এসব বিস্ফোরক উপাদান একটি টিনের তৈরি ট্যাংকের ভিতর রাখা ছিল। আর এই বিস্ফোরক উপাদান দিয়ে দুই শতাধিক বোমা তৈরি করা সম্ভব। -বাংলামেইল
২৭ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস