সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৫:৫৪:০২

দাবি না মানলে সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ!

দাবি না মানলে সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ!

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : বেতন কাঠামো বৈষম্য নিরসনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবি চলতি মাসে মেনে না নিলে সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের হুমকি দিয়েছে শিক্ষক সমিতির নেতারা। পাশাপাশি শিক্ষকদের নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যকে শিষ্টাচারবহির্ভূত উল্লেখ করে তার পদত্যাগ দাবি করে জটিলতা নিরসনে আবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। রোববার পৃথক সংবাদ সম্মেলনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা এ সংবাদ সম্মেলন করেন। শিক্ষকদের কঠোর আন্দোলনের হুমকির পরই শিক্ষামন্ত্রী সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেন। তিনি জানান, খুব শিগগির মন্ত্রিসভা কমিটির সভা ডেকে সমস্যা নিরসন করা হবে। তাছাড়া দাবি আদায়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতিও পালন করেছেন শিক্ষকরা। ডিসেম্বরের মধ্যে দাবি আদায় না হলে জানুয়ারি থেকে লাগাতার কর্মবিরতি দেয়া হবে বলেও পৃথকভাবে হুমকি দিয়েছেন তারা। কেন্দ্রীয়ভাবে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ২ জানুয়ারি বেলা ১১টায় চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে ওইসব সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়। অর্থমন্ত্রীকে দেয়া পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া পূরণ না হলে ওইদিন কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে। ফেডারেশন ও ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আমলাতান্ত্রিক ছলচাতুরি ও শিষ্টাচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ড আজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ন্যায্য দাবিসমূহ পূরণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরাও আমলাতান্ত্রিক বিচ্যুতির কথা স্বীকার করেছেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আট মাসব্যাপী এই নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন ধৈর্যচ্যুতির শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয়ে আক্রমণাত্মক বক্তব্য প্রদান করা থেকে বিরত থাকার জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। এরূপ বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় চলমান স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হওয়ার আশংকা রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তারা। এ সময় তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা বিতর্কিত পরিপত্রটি তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল করার অনুরোধ জানান এবং একটি নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এ ধরনের পরিপত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিহ্নিত ও শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানান। তারা বলেন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে আমাদের প্রেরিত পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ করছি। পাশাপাশি চলতি মাসের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অর্থমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। শিক্ষক নেতারা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ১৯৭৩-এ কোনো অশুভ হস্তক্ষেপ না করারও অনুরোধ করেন। শিক্ষক নেতাদের দাবি, গত ৬ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনায় তিনি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন পরবর্তীকালে এসব দাবি না মেনেই গেজেট প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলেন, তিনি শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেই তা চূড়ান্ত করেছেন। অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য অর্থ বিভাগ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব কর্তৃক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত একটি পরিপত্র আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়। অত্যন্ত চাতুর্যের সঙ্গে এ পরিপত্রটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতেই জারি করা হয়েছে, যা ১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বেতন বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভার গৃহীত সুপারিশ বলে চালিয়ে দেয়ার অপপ্রয়াস নেয়া হয়েছে। আমরা আইনমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীর মাধ্যমে জানতে পেরেছি, এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত বেতন বৈষম্য নিরসন সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি নেয়নি। এমনকি অর্থ প্রতিমন্ত্রীও পরিপত্রে উল্লিখিত সিদ্ধান্ত ওই সভায় যে নেয়া হয়নি তা আমাদের নিশ্চিত করেছেন। ওই পরিপত্রে উল্লিখিত সিদ্ধান্ত অর্থমন্ত্রী ছাড়া ওই সভায় উপস্থিত বেতন বৈষম্য সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অন্য কোনো সদস্য কর্তৃক অনুসমর্থিত বা অনুস্বাক্ষরিত হয়নি। এমতাবস্থায় বলা যায়, পরিপত্রটি মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্তপরিপন্থী একটি বিকৃত ও বিতর্কিত দলিল, যা বিদ্যমান আইনের দৃষ্টিতে গুরুতর অপরাধও বটে। আমরা জেনেছি, ওই সভার সিদ্ধান্ত ছিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য সপ্তম জাতীয় বেতন স্কেলে দেয়া সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো ভিন্ন আদৌ কমানো হবে না এবং সিনিয়র সচিবের সমমর্যাদায় অধ্যাপকদের একটি অংশকে উন্নীত করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় অধ্যাপকদের বেতনকাঠামোর অন্তর্ভুক্ত করার সমালোচনা করা হয়। স্কেলে তাদের সম্মান নির্ণয় করা শোভন ও সমীচীন নয় বলেও মন্তব্য করেন শিক্ষক নেতারা। তারা বলেন, সিনিয়র সচিবের সমমর্যাদায় আনার প্রয়াসের মধ্য দিয়ে এই বরেণ্য ব্যক্তিদের যেমন অপমান করা হয়েছে, অন্যদিকে তাদের পে-স্কেলে আনার এই উদ্যোগ জাতীয় বেতনকাঠামোকে করেছে বিতর্কিত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, রোববারের শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিভাগে ক্লাস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন এবং একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। খুলনা ব্যুরে জানায়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকরা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলন থেকে অর্থমন্ত্রীকে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়। শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য : এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষকদের আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা ও হুশিয়ারিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। শিক্ষকদের সংবাদ সম্মেলনের পরপরই তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেন। শিক্ষামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, মন্ত্রী অর্থমন্ত্রীকে না পেয়ে অর্থ সচিবের সঙ্গে কথা বলেছেন। একই সঙ্গে মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক আহ্বানের বিষয়টি অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টিতে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। সেই অনুযায়ী শিগগিরই বেতন-ভাতা সংক্রান্ত শিক্ষকদের সমস্যা নিরসনে মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক ডাকা হতে পারে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সত্যতা নিশ্চিত করে শিক্ষামন্ত্রী সোমবার রাত ৮টার দিকে যুগান্তরকে বলেন, শিক্ষকদের বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। এ বিষয়ে শিগগিরই বৈঠকে বসে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে। -যুগান্তর ২৮ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে