সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৬:০৫:৫৬

গয়েশ্বরের বক্তব্যে বিএনপিতেও তীব্র ক্ষোভ

গয়েশ্বরের বক্তব্যে বিএনপিতেও তীব্র ক্ষোভ

ঢাকা : মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ‘নির্বোধ’ বলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে তার দলেই তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দলটির নেতারা বলছেন,দলের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত করতে সিনিয়র নেতাদের এ ধরনের দু’একটি ‘বিতর্কিত’ বক্তব্যই যথেষ্ট। শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় গয়েশ্বর রায় বলেন, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীরা নির্বোধের মতো প্রাণ দিয়েছেন। এ নিয়ে দেশ-বিদেশে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় বইছে। গয়েশ্বর রায়ের নিজ দল বিএনপির ভেতরেও এমন বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির বেশিরভাগ নেতাকর্মী এমন বক্তব্যকে দলের জন্য ক্ষতিকর হিসেবেই বিবেচনা করছেন। তারা গয়েশ্বরের এই বক্তব্যকে ‘অবিবেচনাপ্রসূত উক্তি’ বলে নিন্দা জানিয়েছেন। দলের একাধিক নেতা বলেছেন, এমনিতেই যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের সঙ্গে জোট থাকায় বিএনপির লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়েছে। তার ওপর দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতা গয়েশ্বর রায়ের এমন উক্তি দলের ইমেজ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান রোববার বলেন, গয়েশ্বর রায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে নির্মম মন্তব্য করেছেন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের একেবারে শেষ দিকে শত্রুরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে। অনেকের লাশ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে বিএনপির এক তরুণ নেতা বলেন, মহান বিজয়ের এই মাসে গয়েশ্বর রায়ের এ ধরনের বক্তব্য দলের যে কী পরিমাণ ক্ষতি করেছে তা নিরুপণ করাও কঠিন। একজন সিনিয়র নেতা বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে দলের শীর্ষ নেতারা যেখানে বিএনপিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের শক্তি হিসেবে সব সময় দাবি করছেন, সেখানে গয়েশ্বরের এ বক্তব্য খুবই দুঃখজনক। যুবদলের এক নেতা মন্তব্য করেন, সিনিয়র নেতাদের এসব বক্তব্যের কারণে বিএনপি দিন দিন মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষশক্তি হিসেবেই চিহ্নিত হচ্ছে। কয়েকজন নেতা বলেছেন, এটা গয়েশ্বর রায়ের ব্যক্তিগত বক্তব্য। দল এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। দলের একজন সিনিয়র নেতা হিসেবে তার ইমেজ ক্ষুণ্ন হওয়ায় দলের প্রতিও মানুষের নেতিবাচক ধারণা জন্মাবে বলে মনে করেন দলটির অনেক সমর্থক। আরেকজন মধ্যম সারির নেতা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বরণীয় অবদান রয়েছে। সেই মহান বীর মুক্তিযোদ্ধার গড়া দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্য গয়েশ্বরের এই বক্তব্যের ফলে ক্ষমতাসীনরাই উপকৃত হবে। মানুষের কাছ থেকে বিএনপিকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিতে সিনিয়র নেতাদের এরকম দু’একটি ‘বিতর্কিত বক্তব্যই যথেষ্ট।’ শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি ইঙ্গিত করে গয়েশ্বর রায় বলেন,“যারা নির্বোধের মতো মারা গেল, আমাদের মতো ‘নির্বোধেরা’ প্রতিদিন শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে তাদের ফুল দেয়। না গেলে আবার পাপ হয়। উনারা যদি এত বুদ্ধিমান হন, তাহলে ১৪ তারিখ পর্যন্ত তারা নিজের ঘরে থাকে কী করে।” শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে তিনি আরও বলেন,‘এরা (বুদ্ধিজীবীরা) শেষ দিন পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারের বেতন-ভাতা খাইছে নির্বোধের মতো।’ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিপ্রাপ্ত কয়েকজন ব্যক্তির মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, যারা পাকিস্তানের চাকরি করলেন, বেতন-ভাতা খাইলেন, তারা হয়ে গেলেন মুক্তিযোদ্ধা, আর যারা পালায়ে পালায়ে না খেয়ে বেড়াল তারা হয়ে গেলেন রাজাকার। তা-ই না? এ বিষয়গুলো আমাদের আজ পরিষ্কার করা দরকার।’ -সমকাল ২৮ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে