মঙ্গলবার, ২১ জুলাই, ২০২০, ০৮:৪৭:৪৪

যেসব কারণে ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্বর্ণের দাম

যেসব কারণে ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্বর্ণের দাম

নিউজ ডেস্ক : বেড়েই চলেছে স্বর্ণের দাম। আন্তর্জাতিক বাজারে সোমবার ইতিহাসে দ্বিতীয়বার প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১৮২০ ডলার স্পর্শ করে। এর মধ্য দিয়ে গত ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে স্বর্ণের দাম। আর এর পেছনে প্রধান কারণ হল চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার উত্তে'জনা। 

করোনা ভাইরাসের প্রকো'পের কারণে কয়েক মাস ধরেই বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য স্বর্ণ কিনে মজুত করছেন। এর মধ্যেই করোনা ভাইরাস মো'কাবিলা করা নিয়ে চীনের ক'ঠো'র সমালো'চনা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এ পরি'স্থিতিতে সম্প্রতি দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে দুই প'রাশ'ক্তির মধ্যে উত্তে'জনা ছড়িয়ে পড়েছে। যার প্রভাব গিয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দামে। ফলে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে স্বর্ণের দাম।

সোমবার লেনদেনের এক পর্যায়ে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১৮২০ ডলারে উঠে যায়। এর মাধ্যমে প্রায় ৯ বছর বা ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের পর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১৮২০ ডলার স্পর্শ করল। যদিও দিনের লেনদেন শেষে তা ১৮১৮ ডলারে থিতু হয়।

করোনা মহামা'রীর কারণে চলতি বছরের শুরু থেকেই স্বর্ণের দাম বাড়তে শুরু করে। গত বছরের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ১৪৫৪ ডলার। এরপর করোনাভাইরাসের প্রকো'পের মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬০ ডলারে উঠে যায়। তবে মার্চে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দামে বড় প'ত'ন হয়। এক ধা'ক্কায় দাম কমে প্রতি আউন্স ১৪৬৯ ডলারে নেমে আসে।

মার্চে দ'রপ'তন হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম ঘুরে দাঁড়াতে বেশি সময় নেয়নি। হু হু করে দাম বেড়ে মে মাসে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১৭৪৮ ডলারে উঠে যায়। জুন মাসজুড়ে স্বর্ণের দাম ১৮শ ডলারের আশপাশে ঘুরপাক খায়। চলতি মাসের প্রথম অর্ধেকেও প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১৭৯০ থেকে ১৮১০ ডলারের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল। তবে সম্প্রতি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার উত্তে'জনা স্বর্ণের দামের পালে নতুন করে হাওয়া লাগিয়েছে।

কিছুদিন আগে চীন দক্ষিণ চীন সাগরের একটা অংশ ব'ন্ধ করে দেয় প্যারাসেল দ্বীপের চারপাশের সমুদ্রে নৌবাহিনীর ম'হড়া চালানোর জন্য। এতে যুক্তরাষ্ট্র ক্ষু'ব্ধ প্রতি'ক্রিয়া দেখিয়ে বলে, চীন বিত'র্কিত ওই এলাকায় উত্তে'জনা ছড়াতে পারে এমন কর্মকা'ণ্ড না চালানোর প্রতি'শ্রুতি ভ'ঙ করেছে। এর জবাবে যুক্তরাষ্ট্র ওই এলাকায় তার নৌশক্তির প্রদ'র্শন আরও জো'রদার করে আরও র'ণতরী সেখানে মোতায়েন করে, যা চীনকে স্বভাবতই ক্ষু'ব্ধ করে। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে এই ক্ষো'ভের বহিঃপ্রকাশ ছিল খুবই স্পষ্ট।

মার্কিন নৌবাহিনী ওই এলাকায় তাদের উপস্থিতি আরও জো'রদার করায় দক্ষিণ চীন সাগরে দুই প্র'তিদ্ব'ন্দ্বী শ'ক্তির মধ্যে বৈ'রিতা দ্রুত বেড়েছে এবং কিছু একটা ঘ'টার আশ'ঙ্কা তৈরি হয়েছে। চীন ও ভারতের মধ্যে বিত'র্কিত সীমান্তে সম্প্রতি যে প্রা'ণঘা'তী সং'ঘা'তের ঘ'টনা ঘ'টেছে, হংকংয়ে যেভাবে চীন জাতীয় নিরা'পত্তা আইন জারি করেছে, তাতে অনেকেই মনে করছেন দক্ষিণ চীন সাগরে কোনওরকম হু'মকি দেখা দিলে তা মো'কাবি'লায় চীন হয়তো সং'য'ত আচরণ না-ও দেখাতে পারে।

দক্ষিণ চীন সাগর গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক নৌ চলাচল পথ। তবে বহু বছর ধ'রে এই সাগরের ছোট ছোট অসংখ্য দ্বীপ, যার অনেকগুলোই প্রবাল দ্বীপ, প্রবালপ্রাচীর এবং দ্বীপগুলোর সম্পদের মালিকানা দাবি করে আসছে ওই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশ এবং অনেকদিন ধরেই এই সাগর ওই অঞ্চলে একটা বি'ত'র্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে রয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন এই এলাকায় তাদের মালিকানার দাবি নিয়ে ক্র'ম'শ আরও বেশি সোচ্চার হয়ে উঠেছে। দেশটি দাবি করছে, বিত'র্কিত এই এলাকাটি কয়েক শতাব্দী ধরে চীনের অংশ এবং চীন তাদের দাবির সমর্থনে সেখানে সামরিক উপস্থিতি ক্রমান্বয়ে আরও জো'রদা'র করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক কমা'ন্ডের সাবেক অধিনায়ক অ্যাডমিরাল হ্যারি হ্যারিস একসময় এটাকে উল্লেখ করেছিলেন ''বালুর সুবিশাল প্রাচীর'' হিসেবে। তিনি বলেছিলেন, চীনের ঐতিহাসিক প্রাচীর- গ্রেট ওয়াল যেমন চীনা ভূখণ্ডকে সুরি'ক্ষত রাখার জন্য তৈরি হয়েছিল, তেমনি সাগরে ওই এলাকাকে সুর'ক্ষিত করতে চীন জায়গাটি ঘিরে তৈরি করেছে 'বালুর প্রাচীর'।

দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তী'ক্ষ্ম বাদানুবাদ হলেও দুই দেশ এই বিরো'ধপূর্ণ এলাকা নিয়ে তাদের ম'তভে'দ এতদিন পর্যন্ত এক অর্থে নিয়'ন্ত্রণে রাখতে স'ক্ষম হয়েছিল। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সং'ঘা'তের মধ্যেও ওই এলাকার মালিকানা নিয়ে আঞ্চলিক বিবাদে কোনও পক্ষ নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। তারা শুধু ওই অঞ্চলে তাদের জাহাজ চলাচলের স্বাধীনতা দাবি করে এসেছে। 

তবে করোনা প্রাদু'র্ভাব চীন প্রথমদিকে কীভাবে মোকা'বিলা করেছে তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমালো'চনা চীনকে ক্ষু'ব্ধ করেছে। সবমিলিয়ে দুই শ'ক্তিধর দেশের মধ্যকার উত্তা'প এখন ছড়িয়ে পড়েছে দক্ষিণ চীন সাগরেও। এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ জুন বাংলাদেশে দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। 

সাধারণত ভরিতে এক-দেড় হাজার টাকা করে বাড়ানো হলেও এবার এক লাফে প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম পাঁচ হাজার ৭১৫ টাকা বাড়ানো হয়। অবশ্য দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানোর পরে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে ২০ ডলারের ওপরে বেড়েছে। গত ২৩ জুন থেকে দেশের বাজারে কার্যকর হওয়া নতুন দাম অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম পাঁচ হাজার ৭১৫ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯ হাজার ৮৬৭ টাকা।

২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম চার হাজার ৯০০ টাকা বাড়িয়ে ৬৬ হাজার ৭১৮ টাকা এবং ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ১৬৭ টাকা বাড়িয়ে ৫৭ হাজার ৯৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সনাতন পদ্ধতিতে স্বর্ণের দাম তিন হাজার ৬১৬ টাকা বাড়িয়ে ৪৭ হাজার ৬৪৭ টাকা। স্বর্ণের এই দাম বাড়ানো সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বাজুস সভাপতি এনামুল হক খান ও সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালার বরাত দিয়ে বলা হয়, কোভিড-১৯ এর প্রাদু'র্ভাবের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে স্বর্ণের মূল্য সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। ফলে দেশীয় বুলিয়ন মার্কেটে স্বর্ণের মূল্য অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে