শুক্রবার, ০১ জানুয়ারী, ২০১৬, ০৪:২৬:১৭

হারের মধ্যেও জয় দেখছে বিএনপি

হারের মধ্যেও জয় দেখছে বিএনপি

এনাম আবেদীন : পৌর নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত কী ঘটবে সে সম্পর্কে আগেই ধারণা ছিল বিএনপির। দলটির মহাসচিবসহ শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা এ বিষয়ে আগাম আভাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরও কেন নির্বাচনে অংশ নেওয়া এবং এতে কী লাভ হলো—এ প্রশ্ন এখন উঠছে বিভিন্ন মহলের তরফে। বিএনপি নেতাদের ভাষ্য, মূলত ৫ জানুয়ারির ব্যর্থ আন্দোলনের পর উদ্ভূত সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ তৈরি করতেই নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। তাদের মতে, নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ঢাকাসহ সারা দেশে দল চাঙ্গা হয়ে উঠছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আগামী ৫ জানুয়ারি ঢাকায় একটি জনসভা করতে চাইছে দলটি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ জনসভার অনুমতি চেয়ে গতকালই ঢাকার পুলিশ কমিশনার ও গণপূর্ত বিভাগে দলটির দপ্তর থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনে অংশ নিয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ‘স্বরূপ’ দেশে-বিদেশে উন্মোচন এবং একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে নির্বাচনের মাধ্যমেই বিএনপি যে সরকার পরিবর্তন চায় এমন বার্তাও সবার কাছে দেওয়া গেছে বলে দলটি মনে করছে। সব মিলিয়ে নির্বাচনে পরাজয় সত্ত্বেও রাজনৈতিকভাবে লাভই হয়েছে বলে বিএনপির মূল্যায়ন। জানতে চাইলে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান ও অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী এ প্রসঙ্গে প্রায় অভিন্ন মতামত জানান। মির্জা ফখরুল বলেন, “নির্বাচনে সরকার কী করবে সেটি আমরা আগে থেকেই জানতাম এবং তা বলেছিও। কিন্তু তার পরও বলব, নির্বাচনে গিয়ে বিএনপির রাজনৈতিকভাবে কোনো লোকসান হয়নি। কারণ জনগণ এবং বন্ধু রাষ্ট্রগুলো আরেকবার দেখার সুযোগ পেল এই সরকার ও বর্তমান কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। ফলে তাদের স্বরূপ আরেকবার উন্মোচিত হলো। পাশাপাশি তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নির্বাচনী কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে দল চাঙ্গা হয়েছে। নেতাকর্মীদের ‘মবিলাইজেশন’ হয়েছে, এটিই আপাতত লাভ। কারণ সরকার তো অন্যায়-অত্যাচার করে বিএনপিকে একরকম আত্মগোপনে ঠেলে দিয়েছিল। অন্তত সেখান থেকে বের হওয়া গেছে।” মোহাম্মদ শাহজাহানের মতে, ‘৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন এবং গত এপ্রিলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের পর আমাদের বুঝতে বাকি ছিল না নির্বাচন কী হতে পারে। কিন্তু তার পরও সংগঠন ও নেতাকর্মীদের সক্রিয় করার পাশাপাশি সরকারের স্বরূপ উন্মোচনও আমাদের লক্ষ্য ছিল। সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। এ ছাড়া কেন্দ্র ও তৃণমূলের নেতারা দলের পক্ষে কতখানি নিবেদিত, চেয়ারপারসন তাও দেখার সুযোগ পেয়েছেন। ফলে দলের মধ্যে মূল্যায়নেরও এক ধরনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।’ পৌর নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জড়িত এই নেতার মতে, এর মধ্য দিয়ে সারা দেশে বিএনপির সংগঠন চাঙ্গা হয়েছে, যা ভবিষ্যৎ জাতীয় নির্বাচনে কাজে লাগবে। রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ‘নির্বাচনের ফলাফল যে সরকার ছিনতাই করবে এটি অজানা ছিল না। কিন্তু যে বীভৎস অন্যায়-অত্যাচার সরকার শুরু করেছিল, বিশেষ করে মামলা দিয়ে এবং কথা বললেই গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া, এ অবস্থা থেকে কিছুদিনের জন্য নিষ্কৃতি পাওয়ার কৌশল হিসেবে নির্বাচনে গেছি।’ তাঁর মতে, অন্তত কিছুদিনের জন্য কথা বলার সুযোগ পাওয়া গেছে। এতে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কিছুটা সুযোগ তৈরি হবে। শত নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের মতে, ফলাফলে হয়তো বিএনপির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। কিন্তু সারা দেশে দলটির নেতাকর্মীদের মবিলাইজেশন হয়েছে। তা ছাড়া কেমন নির্বাচন হলো তা দেশের জনগণের পাশাপাশি বিদেশিরাও দেখেছে। কিন্তু ভোটের যে ফলাফল এবং চিত্র তাতে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা এও জানিয়েছেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে কূটনৈতিক মহল থেকেও চাপ ছিল। কারণ ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংস আন্দোলনের কারণে বিদেশিদের কাছে দলটির ভাবমূর্তি সংকটে পড়ে। ফলে নির্বাচনের মাধ্যমেই যে বিএনপি ক্ষমতার পরিবর্তন চায় এটি স্পষ্ট করতে বলেন কূটনীতিকরা। আর নির্বাচনে অংশ নিলে ‘সরকার কী করে’ এটিও দেখানো গেছে। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সেটিও আরেকটি কারণ বলে জানান তাঁরা। জানা গেছে, নির্বাচনে অনিয়ম ও সরকারি দলের হস্তক্ষেপের চিত্র তুলে ধরে শিগগিরই দলটির পক্ষ থেকে কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’ করা হবে। পৌর নির্বাচন নিয়ে সরকারি দল ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সৃষ্ট ক্ষোভ কাজে লাগিয়ে আগামী ৫ জানুয়ারি ঢাকাসহ সারা দেশে একযোগে সমাবেশ করতে চাইছে বিএনপি। একই দিন সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করা যায় কি না এ নিয়েও দলের মধ্যে আলোচনা আছে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শুধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার ব্যাপারেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকার অনুমতি দিলে ২ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ওই কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সূত্র মতে, ৫ জানুয়ারি ‘একতরফা’ নির্বাচনের দুই বছর পূর্তির সঙ্গে পৌর নির্বাচনের ইস্যুকেও বিএনপি যুক্ত করতে চাইছে। অনুমতি মিললে দলটি জনসভা করবে। আর না মিললে সরকার সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে না বলে আরেক দফা অভিযোগ তুলবে দলটি। -কালেরকণ্ঠ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে