দুই টার্গেট নিয়ে মাঠে বিএনপি
মাহমুদ আজহার : নতুন বছরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায়ই বিএনপির প্রধান চ্যালেঞ্জ। এ দাবি আদায়ে প্রয়োজনে সরকারকে বাধ্য করতে ক্ষেত্র প্রস্তুত করার চিন্তা-ভাবনাও রয়েছে। দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ভোটে প্রতিরোধ গড়ে তোলার নেতৃত্ব তৈরি করাও দলটির অন্যতম টার্গেট। তাই নববর্ষের প্রথম মাস জানুয়ারিতেই পুরোদমে সাংগঠনিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চালানো হবে। ত্যাগী নেতাদের নেতৃত্বে নিয়ে আসতে এ মাসেই কাউন্সিল করার কথাও ভাবা হচ্ছে।
পৌরসভা নির্বাচন থেকে দলের নীতি-নির্ধারকরা এমন শিক্ষাই নিয়েছেন। তবে এ নির্বাচনে ভরাডুবিতেও সাংগঠনিকভাবে লাভ দেখছে দলটি। কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের চাঙ্গাভাব দল গোছানোর কাজে লাগবে বলে মনে করেন বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা। ২০১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তৃণমূল পর্যায়ে চিঠি পাঠিয়ে দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করে বিএনপি। এ প্রক্রিয়া অনেক দূর এগোয়।
নিম্ন আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে গ্রেফতার হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর পরই চিকিত্সার জন্য লন্ডনে চলে যান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও। দুই মাস তিনি সেখানে অবস্থান করেন। এ সময় পুনর্গঠন প্রক্রিয়া থমকে যায়। বেগম জিয়া দেশে ফেরার পরপরই শুরু হয় পৌর নির্বাচনের ডামাডোল। বছরের শেষদিকে এসে পৌরসভা নির্বাচন নিয়েই ব্যস্ত ছিল দলটি। তাই পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেনি।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের প্রথম তিন মাসের আন্দোলনে হামলা-মামলা ও গ্রেফতারে কাবু থাকা বিএনপি এখন সরগরম। গ্রেফতার মামলা এড়িয়ে নেতা-কর্মীরা এখন প্রকাশ্যে।
পৌর নির্বাচনে মাঠ চষে বেড়িয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। সঙ্গে ছিলেন মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীও। এ সুযোগ কাজে লাগাতে চান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তাই জানুয়ারিতেই দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া অনেকাংশে সম্পন্ন করতে চান তিনি। বছরের প্রথমভাগে সাংগঠনিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তিনি নতুন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের চিন্তাও করছেন।
বিএনপির সিনিয়র একাধিক নেতা জানান, যে কোনো দিন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের অসম্পূর্ণ কমিটি দেওয়া হতে পারে। এরপর পর্যায়ক্রমে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অন্য অঙ্গ-সংগঠনগুলোর কমিটি দেওয়া হবে। কাউন্সিল উপযোগী অন্তত ২০ জেলার পুনর্গঠন প্রক্রিয়াও শিগগিরই সম্পন্ন করা হবে। বিগত আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়া ঢাকা মহানগর বিএনপিতেও আসবে পরিবর্তন।
সবকিছু ঠিক থাকলে এ মাসের শেষ দিকে কিংবা ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে বিএনপির মেয়াদোত্তীর্ণ জাতীয় নির্বাহী কমিটির কাউন্সিল করা হবে। কাউন্সিলের মাধ্যমে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব করা হবে। স্থায়ী কমিটিতে আসবে একঝাঁক নতুন মুখ। বয়োবৃদ্ধ অনেক নেতাকে বিএনপির সিনিয়র উপদেষ্টা করারও নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিগত আন্দোলন ও পৌরসভা নির্বাচনে সাফল্য-ব্যর্থতার আলোকে নির্বাহী কমিটিও ঢেলে সাজানোর চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।
গতকাল জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এক সমাবেশে অংশ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘খুব শিগগিরই সরকারের পরিবর্তন হবে। কোনো সরকারই স্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নেই। এ সরকারও ক্ষমতায় চিরদিন থাকতে পারবে না। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর লোকদের থাকতে হবে। শিগগিরই দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে এ সরকারের বিদায় হবে।’
সর্বশেষ পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির তিন নেতার মূল্যায়ন হলো— শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলা ছাড়া বিএনপি ভোটে গিয়ে কোনো লাভ করতে পারবে না। সংসদসহ তিনটি নির্বাচন তাই প্রমাণ করে। বর্তমান সরকারের কাছে ভোটের কোনো মূল্যই নেই।
তাই বিএনপির এখন বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দলকে পুরোপুরি গুছিয়ে ফেলা। ত্যাগী নেতাদের দিয়ে তৃণমূলের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। কারণ, ক্ষমতাসীন দলের ভোট ডাকাতি মোকাবিলা করতে হলে শক্তিশালী সংগঠনের কোনো বিকল্প নেই। বিএনপির বর্তমান সাংগঠনিক অবস্থায় ভোটকেন্দ্র পাহারা দেওয়ার কোনো অবস্থা ছিল না। দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে এ বিষয়টিই এখন ভাবতে হবে। নববর্ষে গণতন্ত্রের ‘নতুন চেহারা’ দেখার প্রত্যাশা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে যে ফ্যাসিজম চলছে, তা থেকে দেশের জনগণও মুক্তি চায়। ২০১৫ সালে গণতন্ত্র ছিল ‘অবরুদ্ধ’। দমনপীড়ন, মামলা-হামলাসহ বিরোধী দল-মতের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের গ্রেফতারের বছর। ফ্যাসিস্ট সরকারের কাছ থেকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনাই আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ। জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। পৌরভোট ছিল, তাই এ মাসে আমরা দলের কাউন্সিল করার চিন্তা-ভাবনা করছি। এর মধ্যেও আমরা জেলায় জেলায় সংগঠন গোছানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। নতুন বছরে আমরা জনগণের দাবি অনুযায়ী সংসদ নির্বাচন চাই।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনাই আমাদের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ। এরই অংশ হিসেবে পৌরসভা নির্বাচনে গিয়েছি। নববর্ষেও দলকে সুসংগঠিত করার পর প্রয়োজনে জনদাবি আদায়ে আন্দোলনেও যেতে হবে। অবরুদ্ধ গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতেই হবে।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের মতে, ‘অপহূত গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে আমরা কাজ করছি। দেশের জনগণও আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান জানান, সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায়ই বিএনপির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। এ লক্ষ্যে বছরের প্রথমভাগে দলকে আরও শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করতে হবে। শিগগিরই দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া পুরোদমে শুরু হবে। বিশেষ করে যেসব পৌরসভায় নির্বাচন হয়েছে— সেখানে কার কি ভূমিকা ছিল, আমরা জেনেছি। আশা করি, দল পুনর্গঠনেও কোনো সমস্যা হবে না।’ -বিডি প্রতিদিন
২ জানুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪ডটকম/এসএস/এসবি