শুক্রবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২১, ০৫:২৯:৪৭

মামুনুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার পর যা বললেন ঝর্ণা

মামুনুলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার পর যা বললেন ঝর্ণা

সোনারগাঁয়ে রিসোর্টকাণ্ডে দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করা জান্নাত আরা ঝর্ণা হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন। সোনারগাঁ থানা পুলিশ সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

মামলা দায়েরের পর চলে যাওয়ার সময় থানা প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ঝর্ণা। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি। আমি ভালো আছি। আমার সর্বশেষ কথা আমি সুষ্ঠু বিচার চাই। আমার সাথে অনেক বড় প্রতারণা করেছে (মামুনুল হক)। আমি এর বিচার চাই।’

এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আমীর খসরু বলেন, ‘রয়্যাল রিসোর্টের ঘটনার ওই নারী আজকে সোনারগাঁ থানায় উপস্থিত হয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেছেন। উনার মামলার ভিত্তিতে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ৯ এর ১ ধারায় তিনি মামলা করেছেন। মামলা নম্বর ৩০। তদন্তকারী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম ইনসপেক্টর (নিরস্ত্র) সোনারগাঁ থানা।’


এদিকে, মামুনুল হক দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করলেও মামলার এজাহারে জান্নাত নিজেকে মামুনুল হকের স্ত্রী বলেননি। তিনি বলেছেন, ‘বিয়ের প্রলোভন ও অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে মামুনুল হক আমার সঙ্গে সম্পর্ক করেছেন। কিন্তু বিয়ের কথা বললে মামুনুল করছি, করব বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। ২০১৮ সাল থেকে ঘোরাঘুরির কথা বলে মামুনুল বিভিন্ন হোটেল, রিসোর্টে আমাকে নিয়ে যান।’

মামুনুলের সঙ্গে পরিচয় প্রসঙ্গে জান্নাত বলেন, ‘২০০৫ সালে তার স্বামী মাওলানা শহীদুল ইসলামের মাধ্যমে মামুনুল হকের সঙ্গে পরিচয় হয়। স্বামীর বন্ধু হওয়ায় আমাদের বাড়িতে মামুনুলের অবাধ যাতায়াত ছিল। মামুনুলের সঙ্গে পরিচয়ের আগে আমরা সুখে–শান্তিতে বসবাস করছিলাম। আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মতানৈক্যের মধ্যে প্রবেশ করে মামুনুল হক শহীদুল ও আমার মধ্যে দূরত্ব তৈরি করতে থাকেন। মামুনুলের কারণে আমাদের দাম্পত্য জীবন চরমভাবে বিষিয়ে ওঠে। সাংসারিক এই টানাপোড়েনে একপর্যায়ে মামনুলের পরামর্শে বিবাহবিচ্ছেদ হয়।’

অভিযোগে জান্নাত বলেন, ‘বিচ্ছেদের পর তিনি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিকভাবে অসহায় হয়ে পড়েন। এ সময় মামুনুল আমাকে খুলনা থেকে ঢাকায় আসার জন্য বলেন। আমি ঢাকায় চলে আসি। মামুনুল আমাকে তার অনুসারীদের বাসায় রাখেন। সেখানে নানাভাবে আমাকে প্রস্তাব দেন। একপর্যায়ে পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে তার প্রলোভনে পা দিই। এরপর তিনি উত্তর ধানমন্ডির নর্থ সার্কুলার রোডের একটি বাসায় আমাকে সাবলেট রাখেন। একটি বিউটি পারলারে কাজের ব্যবস্থা করে দেন। ঢাকায় থাকার খরচ মামুনুলই দিচ্ছিলেন।’

জান্নাত আরা ঝর্ণা অভিযোগে বলেন, ‘৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টে ঘোরাঘুরির কথা বলে মামুনুল হক নিয়ে যান। সেখানে অবস্থানকালে কিছু মানুষ আমাদের আটক করে ফেলে। পরে মামুনুল হকের অনুসারীরা রিসোর্টে হামলা করে আমাদের নিয়ে যায়। কিন্তু মামুনুল আমাকে নিজের বাসায় ফিরতে না দিয়ে পরিচিত একজনের বাসায় অবৈধভাবে আটকে রাখেন। কারও সঙ্গে যোগাযোগও করতে দেননি। পরে কৌশলে আমি আমার বড় ছেলেকে আমার দুরবস্থার সব কথা জানাই এবং আমাকে বন্দীদশা থেকে উদ্ধারের জন্য আইনের আশ্রয় নিতে বলি। পরে ডিবি পুলিশ আমাকে উদ্ধার করলে জানতে পারি, আমার বাবা রাজধানীর কলাবাগান থানায় আমাকে উদ্ধারের জন্য একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। পুলিশ আমাকে উদ্ধারের পর বাবার জিম্মায় দেয়। সেখানে আমি আমার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে পরামর্শ করায় অভিযোগ দায়ের করতে বিলম্ব হয়।’

জান্নাত আরা ঝর্ণার বাবা ওলিয়ার রহমানকে গত ২৪ এপ্রিল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয় ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ। আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর থেকে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। এরপর ২৬ এপ্রিল মেয়েকে উদ্ধারে পুলিশের সহায়তায় চেয়ে কলাবাগান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি। পরদিন মোহাম্মদপুরের একটি বাসা থেকে ঝর্নাকে উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। ঝর্না উদ্ধার হওয়ার তিন দিনের মাথায় এই মামলা করলেন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে