বুধবার, ১২ মে, ২০২১, ০৩:৪২:১১

সারাদিন মানবতার বুলি কপচানো মানুষগুলো মানুষের মৃত্যুতে টু শব্দ করছে না, কারণ মানুষগুলো মুসলিম : রিতু কুন্ডু

সারাদিন মানবতার বুলি কপচানো মানুষগুলো মানুষের মৃত্যুতে টু শব্দ করছে না, কারণ মানুষগুলো মুসলিম : রিতু কুন্ডু

 তখন ইউনিভার্সিটি ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। পাব্লিক বাসে করে আসছিলাম৷ গন্তব্য ক্যাম্পাস৷ শাহবাগে নামবো। কাটাবন থেকে এক বই বিক্রেতা হকার উঠলেন, হাতে একটি বই, কেমন হবে দাজ্জাল। তখনও কোন স্কলারশীপ বা টিউশনি পাইনি, মাত্র ৫০০ টাকায় সারা মাস চলতে হতো। তো সে সময় চাইলেই বিশ টাকা দিয়ে বই কিনে ফেলতে পারতাম না। বইটা হাতে নিয়ে একটু উলটে পালটে দেখতেই শাহবাগ চলে এল৷ নেমে গেলাম।

থিওরিট্যাক্যালি দাজ্জালের সাথে সেটাই আমার প্রথম পরিচয়। হকার ফেরি করছিল, এই বইটি পড়লে আপনি জানতে পারবেন, দাজ্জালের এক চোখ অন্ধ হবে। তার কপালে কাফির লেখা থাকবে। আরবী না জানলেও মুমিন বিশ্বাসী তা পড়তে পারবে।

এই বইতে আপনি আরো জানতে পারবেন দাজ্জাল দেখতে কেমন হবে? কিভাবে দাজ্জাল কেয়ামতের আগে পৃথিবীতে আত্মপ্রকাশ করবে? দাজ্জাল প্রথম কোথায় আত্মপ্রকাশ করবে? কোন শহরে দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না? এই বইটি পড়লে আরো জানতে পারবেন, কিভাবে মানুষ দাজ্জালের ধোকায় পড়বে? কিভাবে দাজ্জাল ধ্বংস হবে? দাম মাত্র ২০ টাকা, ২০ টাকা ২০ টাকা।।।

অনেকটা এরকমই ছিল দাজ্জালকে ফেরি করা সেই বিক্রেতার কথাগুলো। আমার মাত্র ২০ টাকার বইটা আর কেনা হল না, তাই উত্তরও সে সময় জানা হল না। ফেরিওয়ালার প্রশ্ন গুলো স্মৃতিতে গেঁথে নিলাম। শাহবাগ চলে এল, বাস থেকে নেমে গেলাম। শুধু মাথায় ঘুরতে থাকলো, দাজ্জাল এক চোখে দুনিয়াকে দেখবে। ওর কপালে কাফির লেখা থাকবে, আরবী না জানলেও বিশ্বাসীরা তা পড়তে(বুঝতে) পারবে!!!

এরপর ভুলে গেলাম, আর মনে পড়লো না দাজ্জালের কথা, কোথাও শুনলামও না। তখন পড়ি রেনেসা, কলোনিয়ালিজম, বিশ্বযুদ্ধ, ন্যাটো, জাতিসংঘ আরও কত কি? পলিটিক্স, ইকোনমি যাই পড়ি সবেতেই ঘুরে ফিরে ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্স। হাজার দিকের হাজার রকম বিশ্লেষন, কে পরাশক্তি, কে আগ্রাসী, কে নিয়ন্ত্রণে আছে, কে ছিল, কে নেই এসবই। তখন রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতির বিশ্লেষন পড়ি, বিশ্লেষণ করি, পরীক্ষায় প্রশ্ন আসে, উত্তর দেই, উত্তীর্ণ হই।।

এভাবেই কেটে গেল প্রায় অর্ধযুগ। ইসলাম গ্রহণের পরে কেয়ামতের আলামত নিয়ে লেখাপড়া করতাম, ইউটিউবে এ সংক্রান্ত ভিডিও শুনতাম। সে সময় ফিরে আসলো সেই দাজ্জাল। দেখলাম কেয়ামতের গুরুত্বপূর্ণ আলামত হল দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ। ফিরে এল সেই বাসের ফেরিওয়ালার স্মৃতি, ফিরে এল দাজ্জালের এক চোখে দেখা, ফিরে এল কিভাবে আরবী না পড়তে পারলেও বিশ্বাসী দাজ্জালকে চিনবে?

এবার ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্সের পরাশক্তিদের পালাবদলের সাথে মিলিয়ে দেখা। খুউবই সহজ বিষয়। প্রথমে ব্রিটেন, এরপর যুক্তরাষ্ট্র, সর্বশেষ ইসরায়েল। অস্ত্রের মহড়া, নিউক্লিয়ার শক্তির প্রকাশ, শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে সংস্থাগুলোর নির্লিপ্ততা, পাশ্চাত্য থেকে কিনে নিয়ে আসা রাষ্ট্র ব্যবস্থার আধুনিকায়নের আইডিয়াগুলো, রাষ্ট্রের ক্যান্সারগুলো। যার একটা একটা করে ছড়িয়ে পড়লো বিশ্বব্যাপী। ধীরে ধীরে পাজলড মিলে গেল। আর ফেসবুক স্মার্টফোনের দুনিয়ায় দাজ্জাল অনুসারিদের এক চোখে দেখার ইতিহাস আরও স্পষ্ট করে দিল কিভাবে আরবী না জানলেও খুব সহজেই যে কাফির চেনা যায়।

আসলে দাজ্জাল আসবার আগে তার জন্য সেটিং তৈরি করা হয়েছে। অসংখ্য মানুষকে দাজ্জালের মত গ্রহণ করার মানসিকতা ইনপুট দিয়ে রাখা হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে সেটাই করা হয়েছে। যেন অধিকাংশ মানুষ দাজ্জালকেই অনুসরণ করে বিনা বাক্য ব্যয়ে। সেটিং প্রায় শেষের দিকে। পুরো বিশ্ব ইসলামের বিরুদ্ধে পুঞ্জীভূত হচ্ছে। সারাদিন মানবতার বুলি কপচানো মানুষগুলো মানুষের মৃত্যুতে টু শব্দ করছে না, কারন মানুষগুলো মুসলিম। বাংলাদেশের মত দেশে দুইটা হাসির ইমো নিয়ে মানবিকতার বুলি উপচে পড়ছে কিন্তু জেরুজালেম, শাম দেশে নারী শিশুসহ জীবন্ত মানুষের তাজা রক্ত ঝরে যাওয়াতেও কেউ মানবতার লঙ্ঘন দেখতে পাচ্ছে না। এটাই এক চোখ খুলে অন্যচোখ বন্ধ রাখার নমুনা। দাজ্জালের চোখ একটা অন্ধ৷ কিন্তু তার অনুসারিদের চোখ অন্ধ হবে না, হবে বন্ধ।

এরা প্রসারিত দুই চোখে দুনিয়াকে দেখে না। এরা একচোখা। তাই এদের সব কাজেই ইসলাম বিদ্বেষ সুস্পষ্টভাবে চোখে পড়ে। এটাই কপালের লেখা সে কাফির শব্দ। বিশ্বাসী কারো কথা ও কাজেই অনুভব করবে সে দাজ্জালের অনুসারি কাফির হয়ে যাবে। এগুলো সবই দাজ্জাল আত্মপ্রকাশের প্রিপারেশন। সর্বশেষটা হবে আল আকসা দখলের মাধ্যমে।

জেরুজালেমের এ অবস্থা পূর্বনির্ধারিত। এ অঞ্চলে যারা বসবাস করে তারা হবে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ মানুষ। ইসরায়েলের আক্রমনে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ মানুষেরা বিদায় নিচ্ছে। যুগের পর যুগ বন্দী থেকে, কামানের সামনে দাঁড়িয়ে, মৃত্যুর মুখে ভূবন ভুলানো হাসি দিয়ে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিচ্ছে। বাচ্চা বাচ্চাগুলোও ছোট্ট শরীর নিয়ে বিরাট কলিজায় ইসরাইলি বাহিনীর সামনে লম্ফঝম্প করছে। জেরুজালেম ইসরাইলের হাতে দখল হলেই দাজ্জাল আসবে, দাজ্জাল আসলেই ঈসা আ আসবে, তাহলেই কেয়ামত সংঘটিত হবে। এটা শ্রেষ্ঠ মানুষ ফিলিস্তিনিরা জানে, এটা বিশ্বাসীরা জানে, এটা ইসরাইলিরাও জানে।

মজার ব্যাপার হল এটা জানে না শুধু দাজ্জালের অনুসারিরা।৷ যাদের মানবতা শুধু একদিকে যায়, যাদের দুইচোখ থেকেও এক চোখ বন্ধ, যারা ইসলামকে নিয়ে হাহা হুহু করলে কষ্ট পায় না, যাদের কপালে লেখা না থাকলেও পড়া যায়-- অবিশ্বাসী।।।
হায় আফসোস!!! লেখক : Ritu Kundu

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে