এমটি নিউজ ডেস্ক : পদ্মা সেতু পার হতে সময় লাগবে ‘অনলি সিক্স মিনিট’ বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রোববার (১২ জুন) বিকেলে পদ্মা সেতুর মাওয়া অংশ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
মন্ত্রী জানান, আগামী ২৫ জুন সকাল ১০টায় মাওয়া প্রান্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। তারপর ১১ বা সাড়ে ১১টায় তিনি ওপারে যাবেন। যেতে কত সময় লাগবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি মুচকি হেসে বলেন, ‘অনলি সিক্স মিনিট’।
কাদের বলেন, বিশ্ব ব্যাংক আমাদের দুর্নীতি ও চুরির অপবাদ দিয়ে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে সরে গিয়েছিল। বিশ্বব্যাংক যে অপমান করেছে, তা গোটা বঙ্গবন্ধু পরিবারকে অপমান করেছে। আমাদের জাতির ভাবমূর্তিকে অপমান করেছে।
তিনি বলেন, আমি বলব পদ্মাসেতু শুধু আমাদের সামর্থ্য ও সক্ষমতার প্রতীকই নয়, পদ্মা সেতু আমাদের অপমানের প্রতিশোধ। আজ বিশ্বব্যাংক বলছে, পদ্মা সেতু থেকে সরে গিয়ে তারা একটা ভুল করেছিল। তারা ভুল স্বীকার করেছে।
পদ্মা সেতু সম্পর্কে তিনি বলেন, এ সেতু ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার দীর্ঘ দ্বিতল সেতু। সেতুতে রেলের ডাবল স্টেক কনটেইনার লোড মেইন ব্রিজে ব্যয় হচ্ছে ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। নদী শাসন ১৪ কিলোমিটারে ব্যয় ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
তিনি আরও বলেন, ২ হাজার ৭০০ হেক্টর ভূমি হুকুম দখলে খরচ ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। ১২ কিলোমিটারে ৬ লেন সংযোগ সড়কে ব্যয় ১ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা। কনসালট্যান্ট ফি, সেনা নিরাপত্তা, কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড ও অন্যান্য ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ৩ ডায়ামিটারের ১২২ মিটার লম্বা পাইপ, এটি ওয়ার্ল্ডের রেকর্ড। বিশ্বের কোথাও এমন ডায়ামিটারের লম্বা পাইপ কোথাও ব্যবহার করা হয়নি।
মন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হ্যামার পদ্মা সেতুতে ব্যবহার করা হয়েছে। যার ওজন ৩ হাজার ৫০০ টন। ৪ হাজার টন ওজনের ক্রেন এখানে ব্যবহার করা হয়েছে। ৯৬ হাজার কিলোনিউটন ভূমিকম্প পিয়ার ব্যবহার করা হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্লোভ। সমস্ত বাংলাদেশ চেয়েছে পদ্মা সেতু তার নামে হোক। কিন্তু তিনি বলেছেন, পদ্মা সেতু পদ্মা নদীর নামেই হবে। মন্ত্রী আরও জানান, ২৫ জুন উদ্বোধনের পর ২৬ জুন সকাল ৬টা থেকে পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলবে।
এদিকে পদ্মা সেতুর মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সারা দেশে একযোগে দেখানোর ব্যবস্থা করতে ১ জুন সব জেলা প্রশাসককে (ডিসি) ইতোমধ্যে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। পাশাপাশি অন্য সাত জেলায়ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখানোর জন্য বলা হয়েছে। একই দিনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে বলা হয়েছে। এছাড়া বাকি জেলাগুলোতে একদিনের জন্য অনুষ্ঠান পালন করতে বলা হয়েছে। তবে কোনো জেলা চাইলে একাধিক দিনও অনুষ্ঠান করতে পারবে বলেও জানানো হয়েছে।
স্বপ্নের পদ্মা সেতুর স্ট্রিট লাইটের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সাতদিনে পর্যায়ক্রমে ৪১৫টি লাইট জ্বালানো হয়। সেতু উদ্বোধনের দুই সপ্তাহ আগেই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় স্বস্তিতে কর্তৃপক্ষ। তবে চোখ ধাঁধানো পদ্মা সেতুর আর্কিটেকচারাল লাইটিং স্থাপন হবে উদ্বোধনের পর। সড়কপথের লাইটিং রাতের বেলায় সেতুকে দিনের মতো আলোকিত রাখবে।
পদ্মা সেতুতে ল্যাম্পপোস্ট রয়েছে ৪১৫টি। এছাড়া দুপাড়ের সংযোগ সড়কে বসেছে ২০০টি ল্যাম্পপোস্ট। এরই মধ্যে পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে পল্লী বিদ্যুৎ থেকে ৮০ কিলোওয়াটসম্পন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। সেতুর দুই প্রান্তের সাবস্টেশন থেকে এসব ল্যাম্পপোস্টে দেয়া হবে বিদ্যুৎ সংযোগ।
পদ্মা সেতু দেশের পদ্মা নদীর ওপর নির্মাণাধীন একটি বহুমুখী সড়ক ও রেলসেতু। এর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সঙ্গে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর যুক্ত হবে। ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটবে।
দুই স্তরবিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাস ব্রিজটির ওপরের স্তরে থাকবে চার লেনের সড়কপথ এবং নিচের স্তরটিতে একটি একক রেলপথ। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসানো হয়। ৬.১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮.১০ মিটার প্রস্থ পরিকল্পনায় নির্মিত হয়েছে স্বপ্নের এ সেতু।
খরস্রোতা পদ্মা নদীর ওপর ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা নিজস্ব অর্থায়নে ২০১৪ সালে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পদ্মা সেতু খুলে দেয়ার দিন যতই এগিয়ে আসছে, সম্ভাবনা আর প্রত্যাশার নতুন দিকও উন্মোচিত হচ্ছে।