সোমবার, ১৫ আগস্ট, ২০২২, ১১:৪১:৫৭

‘আম্মার কাছে ভাইয়ের লা'শ নিয়ে কেমনে যাব’

‘আম্মার কাছে ভাইয়ের লা'শ নিয়ে কেমনে যাব’

এমটি নিউজ২৪ ডেস্ক : ‘আমার ভাই কম কথা বলতো। সে কাজে এতো ব্যস্ত থাকতো যে তার সঙ্গে কথা বলার সময় পেতাম না। আজ আমার ভাই এভাবে চলে গেল। 

আম্মার কাছে ভাইয়ের লা'শ নিয়ে কেমনে যাব।’ চকবাজারে লাগা আগুনের ঘটনায় নিহ'ত বেলাল সরদারের মৃ'ত্যুতে মিটফোর্ড হাসপাতালে মর্গের সামনে এসব বলে আহাজারি করছিলেন বোন রুমা বেগম।

সোমবার (১৫ আগস্ট) রাজধানীর চকবাজারের কামালবাগ এলাকায় প্লাস্টিকের গোডাউনে লাগা আগুনে একই ভবনের বরিশাল হোটেলের ৬ স্টাফ ঘুমন্ত অবস্থায় নিহ'ত হয়। তাদের মধ্যে একজন বেলাল সরদার (৩৫)। 

চকবাজারে কামালবাগের আগুনে যে ছয়জনের ম'রদেহ পাওয়া গেছে, তাদের মধ্যে ৫ জনের পরিচয় জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সোমবার বিকেলে রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ( মিটফোর্ড হাসপাতাল) ম'রদেহ ময়নাতদন্তের পর ৫ জনের নাম জানান সিআইডির কর্মকর্তারা। তারা হলেন, ওহাব আলী ওসমান (২৫), বেলাল সরদার (৩৫), স্বপন সরকার (১৮), মোতালেব (১৬) ও শরীফ (১৬)।

রুমা বেগম জানান, অভাব অনটনের সংসারে সচ্ছলতা আনতে ১০ বছর ধরে রাজধানীর বিভিন্ন হোটেলে কাজ করছিলেন বেলাল। এক বছর আগে চকবাজারের বরিশাল হোটেলে কাজ নেন তিনি। আমাদের বাড়ি বরিশালের মুলাদী উপজেলায়। সেখানে তার এক ছেলে মেয়েসহ স্ত্রী ও মা রয়েছেন।

রুমা বেগম বলেন, আমার ভাই সব সময় কাজে ব্যস্ত থাকতেন। বাড়িতেও কম যেতেন। সংসারের উন্নতির জন্য ভাই গত ১০ বছর ধরে কাজ করছিলেন বিভিন্ন হোটেলে। 

আমরা পাঁচ ভাই, পাঁচ বোন। আমি সবার বড়। বেলাল ভাইদের মধ্যে দ্বিতীয়। আজ আমার ভাই এমনভাবে মা'রা গেল ঘুমের মধ্যে। আমি কেমনে ভাইয়ের লা'শটা নিয়া আম্মার সামনে যাব? কেমনে মানব আমার ভাইটা নাই। তার বউ-ছেলে-মেয়েরে কি জবাব দেব? 

পাশেই নিহ'ত ওসমানের ভাই ইকবাল কাঁদছেন। তিনি জানান, তার ভাই ওসমান ক'রোনার কারণে কুয়েত থেকে গত বছর দেশে চলে আসেন। মাত্র দুই বছর পর চলে আসায় অনেক টাকা লোকসান হয় দার। তাই সংসার চালাতে এ বছরের শুরুর দিকে চকবাজারের বরিশাল হোটেলে মেসিয়ার হিসেবে কাজ শুরু করেন।

তিনি বলেন, ওসমান ৬০০ টাকা দৈনিক মজুরিতে বরিশাল হোটেলে কাজ করতেন। আজ বাড়ি থেকে ফোন আসে তারা নাকি টিভিতে দেখেছে ভাইয়ের হোটেলে আগুন লাগছে। এরপর থেকে ভাইয়ের ফোন বন্ধ পায়। 

পরে ঘটনাস্থলে এসে দেখি ফায়ার সার্ভিস একে একে লা'শ নামাইতাছে। আমার ভাই ঐ জায়গায় কাল রাতে ঘুমাইছিল। ভাইজান চার-পাঁচদিন আগে আমার পড়ালেখার জন্য টাকা পাঠিয়েছিলেন। 

সবসময় বলতেন, টাকার জন্য চিন্তা করিস না। তুই মন দিয়ে পড়িস। ভালো রেজাল্ট করা লাগবে। আমি এখন বাড়ি যাব ভাইয়ের লা'শ নিয়া। কেমনে বাড়ি যাব? আমার ভাই তো নাই।

মিটফোর্ড মর্গের সামনে আহাজারি করে নিহ'ত স্বপন সরকারের ভাই চাচাতো ভাই বাদশাহ সরকার বলেন, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ভাই ফোন দিয়ে বলে বাদশা আমার হোটেলে আগুন লাগছে। 

এই কথা বলার পরই ভাইয়ের ফোন কেটে যায়। ভাইয়ের ফোন কেটে যাওয়ার পর প্রথমে চকবাজার যাই। সেখানে ভাইকে না পেয়ে মিটফোর্ডে এসে জানতে পারি স্বপন ভাই আর নাই। সিআইডি আমাকে বলেছে, ভাই নাই। এখন ভাইয়ের লা'শ নিয়ে কেমনে বাড়ি যামু!

নিহ'ত ৬ জনের মধ্যে ৫ জনই পুড়ে যাওয়ায় তাদের চেনা যাচ্ছে না। তবে, ম'রদেহের বিভিন্ন চিহ্ন দেখে নিহ'তদের শনাক্তের চেষ্টা করছেন স্বজনরা।

নিহ'ত বেলালের চাচাতো ভাই মো. হেলাল বলেন, আমার ভাইয়ের শরীরে শ্বেতীর দাগ রয়েছে। একটা ম'রদেহের শরীরের এই দাগ দেখেছি। আমার ভাইয়ের গলার নিচে একটা শ্বেতীর দাগ আছে, সেই ম'রদেহের গলার নিচেও একই দাগ। আমরা নিশ্চিত এটা আমার ভাই। কিন্তু পুলিশ আমাদের ম'রদেহ দিচ্ছে না।

এ বিষয়ে ডিএমপির চকবাজার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অলক বিশ্বাস বলেন, ছয়টি ম'রদেহ এমনভাবে আগুনে পুড়েছে তাদের শরীরের কোনো চিহ্ন বা চেহারা দেখে শনাক্ত করা কোনোভাবেই সম্ভব না। 

তাই এখন কেউ দাবি করলেও ম'রদেহ কারো কাছে হস্তান্তর করতে পারব না। আগামীকাল (মঙ্গলবার) থেকে ম'রদেহ ও দাবিদার স্বজনদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে। ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের পর পরীক্ষা করে শনাক্ত করা হবে। এরপর ম'রদেহ হস্তান্তর করব।

এ সময় নিহ'তের স্বজনরা আগুনের ঘটনায় কারো গাফলতি আছে কিনা তা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বের করার দাবি জানান। 

তারা বলেন, আগুন লাগার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা হোক। এভাবে ৬টি তাজা প্রাণ চলে গেল। যদি অবহেলা ও নিয়ম না মানার জন্য তাদের মৃ'ত্যু হয়ে থাকে তাহলে হোটেল ও ভবন মালিকদের যেন বিচারের আওতায় আনা হয়।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে