শনিবার, ২০ আগস্ট, ২০২২, ১০:২৬:২৩

সেই কলেজশিক্ষক মৃত্যুর আগে ছেলেকে ফোনে যা বলেছিলেন!

সেই কলেজশিক্ষক মৃত্যুর আগে ছেলেকে ফোনে যা বলেছিলেন!

এমটি নিউজ২৪ ডেস্ক : নাটোরের গুরুদাসপুর এম হক কলেজের সহকারী অধ্যাপক খায়রুন নাহার (৪০) ওই দিন রাতে শেষবারের মতো ছেলে সালমান নাফিস বৃন্তের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। 

ছেলের সঙ্গে ৪০ সেকেন্ডের কথোপকথনে ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়ার বিষয়টি জানান। এরপর ছেলে তার সৎবাবা মামুন হোসাইনের (২২) সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। এতে শেষ পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি।

বৃন্ত জানান, গত শনিবার (১৩ আগস্ট) ঘটনার দিন রাত ১১টার কিছু সময় আগে মাকে ফোন দেন। এ সময় মা জানান, তিনি দুই এমজি পাওয়ারের আটটি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েছেন। এর বাইরে মা আর কথা বলতে পারেননি। 

এরপর সংযোগ কেটে মামুনকে ফোন দেন বৃন্ত। এ সময় মামুন তাকে বলেন, দুই-চারটা কথা হলেই খায়রুন ঘুমের ট্যাবলেট খায়। বৃন্তকে মায়ের সঙ্গে কথা বলতে বলেন মামুন। পরদিন সকালে মামুন তাকে ফোন দিয়ে আত্মহত্যার বিষয়টি জানান।

মা হারানো এই ছেলে দাবি করেছেন, মামুন যে কথাগুলো বলেছেন তা মিথ্যা। মূলত তার মায়ের কাছ থেকে মোটরসাইকেল কেনাসহ সব কিছুর জন্য টাকা নিতেন মামুন। এছাড়া সবসময় তার মাকে মানসিক চাপে রাখতেন। 

তার মা তাকে একটি মোটরসাইকেল কিনে দিতে চাইলে মামুন নিষেধ করেন। ওই বিষয় নিয়ে ওই রাতে তার মায়ের সঙ্গে মামুনের ঝামেলা হয়েছিল। মামুন হয় তার মাকে হত্যা করেছেন অথবা আত্মহত্যায় উৎসাহ দিয়েছেন। বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটনের দাবি জানান তিনি।

বৃন্ত জানান, তিনি রাজশাহী সিটি কলেজে এইচএসসি প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী। তার ছোটভাই অর্ক তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী।

মরদেহের ময়নাতদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে নাটোর সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক পরিতোষ কুমার বলেন, খায়রুনের ময়নাতদন্তে সদর হাসপাতালের আরএমও সামিউল ইসলাম শান্তর নেতৃত্বে তিন সদস্যের বোর্ড গঠন করা হয়। 

প্রাথমিকভাবে তার গলায় দাগ ছাড়া শরীরে আঘাতের কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই এ জে মিন্টু বলেন, নিহতের চাচাতো ভাই সাবের উদ্দীন বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন। কিন্তু ওই শিক্ষিকার মৃত্যুর সঙ্গে মামুন জড়িত এমন দাবি করেছেন নিহতের স্বজনরা। 

ওই ভাড়া বাড়িতে নিহতের সঙ্গে মামুন থাকতেন। এতে খায়রুনের মৃত্যুর সঙ্গে মামুনের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে এমন ধারণা থেকে তাকে ওই মামলায় ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

আসামিপক্ষের আইনজীবী গোলাম সারোয়ার স্বপন জানান, খায়রুনের সঙ্গে মামুনের স্বাভাবিক সম্পর্ক ছিল এমন দাবি করেছেন মামুন। কিন্তু কী কারণে কীভাবে খায়রুন মারা গেলেন তা মামুন জানেন না। 

তিনি আদালতে বিষয়গুলো তুলে ধরে জামিন চাইলেও বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, সিআইডির ক্রাইম ইউনিট ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ছায়া তদন্ত করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এছাড়া জেলা পুলিশ ও র‍্যাব মাঠে কাজ করেছে। ময়নাতদন্তসহ সংশ্লিষ্ট তদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এটি আত্মহত্যা নাকি হত্যা তা তদন্তের পর জানা যাবে।

এর আগে গত রোববার সকাল ৭টায় নাটোর শহরের বলারিপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে শিক্ষিকা খায়রুন নাহারের (৪০) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার স্বামী কলেজছাত্র মামুন হোসাইনকে আটক করে পুলিশ। তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।-আরটিভি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে