এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : শীত মানেই পিঠা-পায়েস তৈরির ধুম! আর এই কারণে এসময়ে খেজুরের গুড়ের বিশেষ চাহিদা থাকে। খেজুরের রস থেকে তৈরি এ গুড়ের মূল ঠিকানা গ্রামাঞ্চল। সেখানকার হাটবাজারে চলতি মৌসুমে খেজুরের গুড় যে দামে বিক্রি হচ্ছে, রাজধানী ঢাকার সুপারশপসহ বিভিন্ন বিপণিকেন্দ্রে তা হয়ে যাচ্ছে দ্বিগুণ।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি সুপারশপ ঘুরে দেখা গেছে, খেজরের গুড় ২০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা, নাটোর ও যশোরের স্থানীয় বাজারে গুড় বিক্রি হচ্ছে অনেক কম দামে। রাজশাহীর বানেশ্বর বাজারে খেজুরের গুড় বিক্রি হচ্ছ ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে। নাটোরের বিভিন্ন এলাকায় এই গুড় ১১০ থেকে ১২০ টাকা।
এসব এলাকার চাষিরা সরাসরি গাছ থেকে রস আহরণ করে গুড় বানিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। পাইকাররাও সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে গুড় কিনে নেন। এই গুড় তাঁরা ঢাকার কারওয়ান বাজার, কাপ্তানবাজার, মিরপুরের মাজার রোড, বাবুবাজারসহ বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করেন। সেখান থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা নিয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন। অর্থাৎ চাষি থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে তিনবার হাতবদল হয় গুড়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাজধানীর ২৭ নম্বর রোডের সুপারশপ মীনা বাজারে পাটালি খেজুর গুড় বিক্রি হচ্ছে ৩৯৯ টাকা কেজি। প্রতিষ্ঠানটি ‘নাটোর জেলা প্রান্তিক চাষি’ লোগো লাগানো গুড় বিক্রি করছে। ‘গাছির হাসি’ নামের অর্ধবৃত্তাকৃতির ৩৬০ গ্রাম গুড়ের দাম ১৪৩ টাকা ৬৪ পয়সা। এককেজির দাম ৩৯৯ টাকা। একই দামে মাটির পাত্রে ঝোলা গুড় বিক্রি করছে তারা।
বেশি দামে গুড় বিক্রির বিষয়ে মীনা বাজারের একজন বিক্রিয়কর্মী বলেন, ‘আমাদের গুড়ে কোনো ভেজাল নেই। তাই দাম বেশি। ’ সুপারশপে গুড় কিনতে আসা সরকারি চাকরিজীবী জুবায়ের আহমেদ বলেন, ‘এক কেজি গুড়ের দাম ৪০০ টাকা আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। তারা বলছে অর্গানিক। তবে দাম কম হলে সুবিধা হতো। ’
মাদল শস্যভাণ্ডারে প্রিমিয়াম কোয়ালিটির খেজুর গুড় বিক্রি হচ্ছে ৩৯৪ গ্রাম ১৫৭ টাকা ২১ পয়সা। এক কেজি ৩৯৯ টাকা। সুপারশপ স্বপ্নতে বিক্রি করা হচ্ছে মেসার্স আর জেড এন্টারপ্রাইজের সরবরাহ করা ‘রাজশাহী খেজুরের ঝোলা গুড়’। এখানে ৯০০ গ্রামের দাম ২৮৫ টাকা।
আগোরায় গুড়ের গায়ে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের নাম নেই। তারা প্রতি কেজি ২৫০ টাকা দরে বিক্রি করে। বর্তমানে ৩০ টাকা ছাড়ে বিক্রি করছে ২২০ টাকা কেজি। চুয়াডাঙ্গার খেজুরের ঝোলা গুড় তারা বিক্রি করছে ৩২০ টাকা কেজি দরে। মোহাম্মদপুর রিং রোডের শস্য প্রবর্তনায়ও ৪০০ টাকা কেজি দামে বিক্রি হচ্ছে নাটোরের খেজুর গুড়।
কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের ব্যবসায়ী মীর আহাম্মদ আলী বলেন, ‘মানভেদে পাটালি গুড় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বেচি। যে গুড়ের মান খুব ভালো নয়, ভেজাল মেশানো, সেগুলো ১৫০ টাকা কেজি। যেগুলো ভালো সেগুলোর দাম আরো বেশি। তবে ভালো মানের গুড় একসঙ্গে এক পাল্লা অর্থাৎ পাঁচ কেজি কিনলে দাম পড়বে ৭৫০ টাকা। মাটির পাতিলের খুচরা ঝোলা গুড় ১৭০ টাকা কেজি।
কারওয়ান বাজারে কথা হয় আনিসুর রহমানের সঙ্গে। তিনি গুড়ের দাম সম্পর্কে বলেন, ‘আমার গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ। গতবার সেখানে ১২০ টাকা কেজি দামে কিনেছিলাম। এখান থেকে নিল ২০০ টাকা।
চুয়াডাঙ্গায় গুড়ের দাম নিয়ে খুশি নন চাষিরা। পাইকাররা তাঁদের কাছ থেকে গুড় কিনে নিয়ে কেজিপ্রতি প্রায় ১০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন। চাষিরা বলছেন, লাভ চলে যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের পকেটে।
সদর উপজেলার বেলগাছি গ্রামের কৃষক সাইফুল বিশ্বাস জানান, নিজের ও লিজ নেওয়া কিছু গাছ মিলিয়ে মোট ১২০টি খেজুরগাছের রস থেকে তিনি গুড় তৈরি করছেন। একটি গাছ থেকে সপ্তাহে এক কেজি গুড় পাওয়া যায়। সেই গুড় তিনি বিক্রি করেন ২০০ টাকা কেজি দরে। বাজারে ভালো মানের গুড় বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা কেজিতে। তিনি বলেন, বাজারে কম দামে যেসব গুড় পাওয়া যায়, সেগুলোতে চিনি মেশানো হয়। ভালো গুড় ২৮০ টাকার কমে পাওয়া যাবে না।
সরোজগঞ্জ বাজারের গুড় ব্যবসায়ী নূর ইসলাম বলেন, স্থানীয় বাজারে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে পাইকারি গুড় বিক্রি হচ্ছে। তা কিনে খুচরা ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করি। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যাপারীরা গুড় কিনে নিয়ে অন্য জেলায় ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করেন।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, এ জেলায় আড়াই লাখ খেজুরগাছ আছে। তা থেকে চলতি মৌসুমে আড়াই হাজার মেট্রিক টন গুড় উৎপাদন সম্ভব। রস সংগ্রহ থেকে গুড় উৎপাদন পর্যন্ত একটি খরচ আছে। দাম আরেকটু বাড়লে চাষিদের জন্য ভালো হতো।