শুক্রবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০৫:৩২:২২

উল্টো পথে গাড়ি চালালেই জেল জরিমানা!

উল্টো পথে গাড়ি চালালেই জেল জরিমানা!

কাজী জেবেল : নিয়ম লংঘন করে উল্টো পথে গাড়ি চালালেই এবার জেল অথবা জরিমানা। ভিআইপি ও প্রভাবশালীদের গাড়ি এবং মোটরসাইকেল আরোহীদের কেউ উল্টো পথে চললেই এ জরিমানা করা হবে। রাস্তায় যানজট এড়াতে রং সাইডে অথবা ফুটপাতে মোটরসাইকেল চালানো বন্ধে এবার জেল-জরিমানার স্পষ্ট সাজার আইন করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন আইনের খসড়ায় এসব অপরাধে তিন মাস কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান যুক্তের প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। এ ছাড়া আইন অমান্যকারী যানবাহন আটক ও ডাম্পিংয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের ব্যাপক ক্ষমতা দেয়ার প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি।

অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলে গাড়ি বাজেয়াপ্তেরও প্রস্তাব করা হয়েছে। খসড়া আইনে ওই সাজা অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদ্যমান মোটরভেহিকল অর্ডিন্যান্সে এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো সাজার বিধান না থাকায় মন্ত্রী, এমপিসহ প্রভাবশালীরা অহরহই উল্টো পথে চলেন। সড়কের কাঁটাময় স্বয়ংক্রিয় ডিভাইস স্পাইক বসিয়েও তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছিল না। এবার উল্টো পথের যাত্রীদের চলাচল রোধ করতে খসড়া আইনে এ বিধান যুক্তের প্রস্তাব করল বিআরটিএ।

এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএএন ছিদ্দিক বলেন, খসড়া আইনের ওপর মতামত চাওয়া হয়েছিল। অনেকেরই মতামত পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বিআরটিএর মতামতও রয়েছে। তিনি বলেন, এসব মতামতের মধ্যে বেশ কিছু ভালো বিষয় উঠে এসেছে। সেগুলো পর্যালোচনা করে আইন চূড়ান্তের কাজ এগিয়ে রাখছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিআরটিএ প্রায়োগিক দিক বিবেচনায় রেখে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। ওই প্রস্তাবনা আইনে রাখার বিষয়ে আমাদের চিন্তাভাবনা রয়েছে।

বিআরটিএর একাধিক কর্মকর্তা নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, রাস্তায় দাঁড়ালে সাধারণ চোখে যেসব নিয়ম ভঙ্গের ঘটনা দেখা যায়, সেগুলোকে অপরাধের আওতায় এনে সাজার বিধান যুক্তের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ছোটখাটো অপরাধও যুক্ত করা হচ্ছে। তবে কঠোর সাজার বিধান যুক্তের বিরুদ্ধে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো একাট্টা। তারা বরাবরই আইনে কঠোর সাজার বিরোধিতা করে আসছে। তাদের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে আইনে যতটুকু সম্ভব সাজার বিধান যুক্ত করতে চায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।

রাজধানীর সড়কগুলোতে উল্টো পথে গাড়ি বা ফুটপাতে মোটরসাইকেল চলাচল নিত্যদিনের চিত্র। এ তালিকায় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা এবং সাংবাদিকও রয়েছেন। বিশেষ করে অফিস শেষে সচিবালয় থেকে হেয়ার রোড ও সংলগ্ন মিন্টো রোড ব্যবহার করে কিছু মন্ত্রী-এমপির দেখাদেখি অন্যরাও উল্টো পথে গাড়ি চালান।

বিষয়টি নিয়ে গত অক্টোবরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আক্ষেপ করে বলেন, কখনও কখনও অসহায়ভাবে তাকিয়ে দেখি কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি রং সাইড দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। পরিচিত কেউ হলে তাকে ফোন করি, ওপার থেকে জবাব আসে রাইট সাইড দিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন, তখন যাব। এতে সড়কগুলোতে যানজটের ভয়াবহতা ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। চাকরি হারানোর ভয়ে এসব প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো অ্যাকশন নেয়ার সাহস পায় না।

বিআরটিএর একজন ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, বিদ্যমান মোটর ভেহিকল অর্ডিন্যান্সে উল্টো পথে চলাচল অপরাধে সাজার কোনো বিধান নেই। এ কারণে এসব ঘটনায় অর্ডিন্যান্সের ১৩৭ ধারায় সাজা দেয়া হয়। এ ধারায় প্রথমবার অপরাধের জন্য ২০০ টাকা দণ্ডের বিধান রয়েছে। একই অপরাধ বারবার করলে ৪০০ টাকা অর্থদণ্ড দেয়ার সুযোগ রয়েছে। ফলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় বেশ কিছু সমস্যার মুখে পড়তে হয়। অনেকেই মোবাইল কোর্ট চ্যালেঞ্জ করে বসেন।

এ কারণে আইনে উল্টো পথে মোটরযান চলাচলের অপরাধে তিন মাস কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার বিধান যুক্তের প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনি বলেন, অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় আইনটি প্রণয়নের সুবিধার্থে ছোট-বড় সব ধরনের অপরাধ সহজ ভাষায় যুক্তেরও প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সাজার প্রস্তাব করা হয়েছে ফুটপাত দিয়ে মোটরযান পরিচালনাকারীর বিরুদ্ধেও।

সংশ্লিষ্টরা জানান, খসড়া মোটর যান আইনে সড়ক দুর্ঘটনার সাজা অন্তর্র্ভুক্তির প্রক্রিয়া চলছে। প্যানেল কোডের আওতায় বিচারের বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে। প্যানেল কোডে চালকের কারণে দুর্ঘটনায় পাঁচ বছরের সাজার বিধান রয়েছে। চোরাই কিংবা ছিনতাই করা মোটরযান চালনা বা চালানোর অনুমতি দিলে দু’বছর কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া যত্রতত্র যাত্রী উঠানামা, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, নির্ধারিত লেন ছাড়া গাড়ি চালানো বা অন্য গাড়ি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে দণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন আইনের খসড়ার ওপর মতামত দেয়ার সুযোগ আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে স্থানীয় সরকার বিভাগ, বিআরটিএসহ বেশ কিছু সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান এ আইনের ওপর মতামত দিয়েছে। ওইসব মতামতের ওপর বৃহস্পতিবার সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিআরটিএর দু’জন ম্যাজিস্ট্রেটের প্রস্তাবনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। চলতি মাসেই স্টকহোল্ডার নিয়ে আবারও সভার আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে সড়ক বিভাগের। এরপরই আইনটি চূড়ান্ত করা হবে।  -যুগান্তর

৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে