শুক্রবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ১১:৪২:৪০

গণজাগরণ মঞ্চের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে: ইমরান

গণজাগরণ মঞ্চের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে: ইমরান

নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশের ইতিহাসে নানা আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে শাহবাগ আন্দোলন। সেই আন্দোলনের সংগঠক গণজাগরণ মঞ্চ পূর্ণ করল তিন বছর। ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার রায়কে কেন্দ্র করে ব্লগারস অ্যান্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট নেটওয়ার্কের আহ্বানে আর সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে শাহবাগে এ আন্দোলন শুরু হয়। এর একাংশের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার। মঞ্চের কর্মসূচি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ নানা দিক নিয়ে মুখপাত্রের সঙ্গে কথা বলেছেন মোছাব্বের হোসেন।

প্রশ্ন: গণজাগরণ মঞ্চের গড়ে ওঠা ও বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে কিছু বলুন।
ইমরান: গণজাগরণ মঞ্চ একটা সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হয়েছিল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করাকে তরুণেরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথে বাধা বলেই মনে করেছিল। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক—এমন চাহিদা সামনে রেখে তরুণেরা শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে এসে জড়ো হয়েছিল। গণজাগরণ মঞ্চ তিন বছরে মানবিক সব আহ্বানেই সাড়া দিয়েছে ও সোচ্চার থেকেছে। এই তিন বছরে গণজাগরণ মঞ্চের যেমন অর্জন আছে অনেক, তেমনি নানা প্রতিকূলতার শিকারও হতে হয়েছে। অনেকেই ভেবেছিল, মঞ্চ তিন দিন অতিক্রম করতে পারবে কি না? কিন্তু টানা কর্মসূচি পালন করে গণজাগরণ মঞ্চ রাজপথে থাকার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে।

প্রশ্ন: পরে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার কারণ কী?
ইমরান: এটা আদর্শবাদী একটা চেতনার আন্দোলন। যাঁরা যুক্ত হন, তাঁরা কিন্তু ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে অংশ নেন। এখানে বাসে করে কোনো লোক নিয়ে আসি না বা কোনো সংগঠন থেকে লোক ডেকে আনি না। গণজাগরণ সারা পৃথিবীতে একটি ইউনিক ধরনের আন্দোলন। যে আন্দোলনে টানা ১৭ দিন লাখ লাখ মানুষ রাজপথে থেকেছে। এমনকি ফরাসি বিপ্লবও মাত্র ১০ দিন স্থায়ী ছিল। সে দিক থেকে একটি শান্তিপূর্ণ, মানবিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন হলো গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন। এখন হয়তো এই আন্দোলনে লাখ লাখ মানুষ নেই, কিন্তু এই লাখ লাখ মানুষ কিন্তু এই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে গেছে। শুরুর দিকে যে ছাত্র সংগঠনগুলো এখানে অংশ নিয়েছিল, পরে হয়তো সেই সংগঠনগুলো আর সেভাবে অংশ নেয়নি। সংগঠনগুলোর নিজস্ব একটা রাজনীতি আছে ও রাজনৈতিক এজেন্ডা আছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচিরও কোনো মিল নেই।

প্রশ্ন: এক বছরের মাথায় ভাঙন ধরল?
ইমরান: গণজাগরণ মঞ্চের যে স্পিরিট, তাতে কোনো বিভাজন নেই। যখনই রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ বা গণজাগরণ মঞ্চ কথা বলেছে, তখনই তারা নানাভাবে সেই কথা বলা বন্ধ করার চেষ্টা করেছে। গণজাগরণ মঞ্চ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বা তাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের ব্যাপারে একটি শক্ত অবস্থান নিয়েছিল। যুদ্ধাপরাধীদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে সুবিধা নেওয়ার প্রতিবাদ যখন হয়েছে, তখন খুব পরিকল্পিতভাবে গণজাগরণ মঞ্চে বিভাজন হয়েছে, তা রাজনৈতিক দলগুলো প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে। নিজেদের দলীয় কর্মীদের দিয়ে গণজাগরণ মঞ্চের বিভাজন প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে।

প্রশ্ন: অনেকেই বলছেন, মঞ্চের গ্রহণযোগ্যতা কমে গেছে?
ইমরান: আমার কাছে মনে হয়, গণজাগরণ মঞ্চের গ্রহণযোগ্যতা বহু গুণ বেড়েছে। এর পরিপক্বতা একটা জায়গায় এসে ঠেকেছে। শুরুতে গণজাগরণ মঞ্চকে বিভিন্ন অপপ্রচার বা অন্য কোনোভাবে আক্রমণ করা যত সহজ ছিল, তা এখন অনেক কঠিন হয়েছে। অনেক অপপ্রচার হলেও পরে পরিষ্কার হয়ে গেছে গণজাগরণ মঞ্চ মানুষের পক্ষে কথা বলছে। গণজাগরণ মঞ্চ আরও সুসংহত হয়েছে ও আন্দোলনের পরিধি ব্যাপ্ত হয়েছে। গণজাগরণ মঞ্চ যুদ্ধাপরাধের বিচারের বাইরেও সব ধরনের মানবিক বিষয়ে কথা বলেছে।

প্রশ্ন: আপনাদের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম ও পরিকল্পনা সম্পর্কে বলুন?
ইমরান: আমাদের আন্দোলনের পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গতি পেয়েছে। জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এক ধরনের সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছে। জামায়াতের রাজনীতি বন্ধ, যুদ্ধাপরাধীদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে গণজাগরণ মঞ্চ।

প্রশ্ন: রাজনৈতিক দল হিসেবে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা আছে কি?
ইমরান: রাজনৈতিক দল হিসেবে আন্দোলন করা কিন্তু কোনো ব্যক্তির সিদ্ধান্ত না। গণজাগরণ মঞ্চের মুখপত্র হিসেবে আমি এটা বলতে পারি না যে এটি কোনো রাজনৈতিক দলে রূপ নেবে কি না। মঞ্চের আন্দোলন রাজনৈতিক। তাই সেই আন্দোলনকে লক্ষ্যে পৌঁছতে কোনো পরিবর্তন দরকার আছে কি না, সে সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষকেই নিতে হবে।-প্রথম আলো
০৫ জানুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে