শনিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০১:১০:২৭

লন্ডন ও ঢাকা মিশনে বিএনপির নিষ্ক্রিয়রা

লন্ডন ও ঢাকা মিশনে বিএনপির নিষ্ক্রিয়রা

মাহমুদ আজহার : বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির এক সদস্যের বাড়ি ময়মনসিংহে। সরকারবিরোধী বিগত আন্দোলনে মাঠে দেখা না গেলেও এখন নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ে। যান প্রভাবশালী নেতাদের বাসায় বাসায়ও। ফরিদপুর জেলা কমিটির আরেক নেতাও এখন ঢাকায় বেশ তৎপর।

সাংগঠনিকভাবে বিপর্যস্ত ফেনী জেলার সিনিয়র এক নেতাও ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। অনেকেই আবার ঢাকার পাশাপাশি নতুন করে তত্পরতা চালাচ্ছেন সুদূর লন্ডনেও। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গেও দেখা সাক্ষাতের জন্যও নানাভাবে চেষ্টা করছেন। তারেক রহমানের সাক্ষাতের সুযোগ না পেলে তার উপদেষ্টা পরিষদ কিংবা ঢাকায় ঘনিষ্ঠদের সঙ্গেও দেখা সাক্ষাৎ করছেন। সবার উদ্দেশ্যই এক।

সামনে কাউন্সিল : দলে চাই গুরুত্বপূর্ণ পদ। নতুন করে তত্পর হওয়া নেতাদের বড় অংশই বিগত আন্দোলনে ছিলেন নিষ্ক্রিয়। এ মুহূর্তে দলে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন, তাদের বাসায় যাতায়াত বাড়িয়ে দিয়েছেন কেউ কেউ। বিএনপির সাংগঠনিক বিষয়ে দেখভাল করেন এমন কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার বাসায় প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে। অনেকেই জেলা কমিটি নিয়ে কথা বলতে এলেও নির্বাহী কমিটির সদস্যরা চান প্রমোশন।

এ জন্য চাই দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সুপারিশ। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এ নিয়ে ত্যক্ত-বিরক্ত। বিএনপিতে ‘চার খলিফা’ বলে খ্যাত সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে একজন আগাগোড়াই সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। বাকি তিনজন এখন বেশি সক্রিয়। দলের সব কর্মসূচিতে এখন তাদের পদচারণা। সংবাদ সম্মেলন, মিলাদ মাহফিল, প্রেসক্লাবে বিভিন্ন সংগঠনের অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারেও দেখা মেলে তাদের।

গুলশান কার্যালয়েও নিয়মিত যাচ্ছেন তারা। সম্প্রতি গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে গিয়ে নিজের নিষ্ক্রিয়তার জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন বলেও জানা গেছে। কাউন্সিল প্রসঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমাদের কাউন্সিলে যেসব সাংগঠনিক স্তর রয়েছে, তাতে  মোট কাউন্সিলর হবেন প্রায় ৩ হাজার। কিভাবে তারা কাউন্সিলর হবেন, তা গঠনতন্ত্রে বলা আছে। জেলা থেকে থানা পর্যন্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা কাউন্সিলে প্রতিনিধিত্ব করবেন। এ জন্য এই বিশাল কর্মযজ্ঞে আমাদের একটি ভালো স্থান প্রয়োজন যাতে সারা দেশ  থেকে আসা কাউন্সিলদের আমরা আনতে পারি।’

১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের গড়া এই দলের সর্বশেষ পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল হয়েছিল ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর। ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল করার জন্য কয়েকদফা উদ্যোগও নেওয়া হয়। কিন্তু নানা বাধায় শেষ পর্যন্ত হয়নি। এদিকে ১৯ মার্চ কাউন্সিল করতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন অথবা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র— তিনটির যে কোনোটির বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছে বিএনপি।

গতকাল দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমরা মার্চের ১৯ তারিখ কাউন্সিল অনুষ্ঠানের জন্য তিনটি জায়গার অনুমতি চেয়ে দরখাস্ত করেছি। এর মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জন্য গণপূর্ত কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছিল, তার জবাব  পেয়েছি। তারা বলেছে, তাদের দিতে আপত্তি  নেই। এটা এখন পুলিশের অনুমোদনের বিষয়।’

দেখা গেছে, ১৯ মার্চ সম্ভাব্য কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণার পর থেকে গুলশান ও নয়াপল্টন কার্যালয়ে নিষ্ক্রিয় নেতাদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। সুবেশ ধারণ করে নিয়মিত গুলশান অফিসেও যাতায়াত বাড়িয়ে দিয়েছেন অনেকে। যাদের বড় অংশই অপরিচিত মুখ। আবার বিদেশ থেকেও কেউ কেউ নেতাদের মাধ্যমে তত্পরতা চালাচ্ছেন। নির্বাহী কমিটির পদ পেতে বাইরে থেকেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন তারা। এ নিয়ে আর্থিক সুবিধা নিয়ে কমিটিতে স্থান করে দিতে একটি চক্র কাজ করে যাচ্ছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানায়।

এদিকে মার্চে জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে জেলা কমিটিগুলো পুনর্গঠনের কাজ শুরু করছে বিএনপি। এরই মধ্যে ৯টি জেলায় নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। পৌর নির্বাচনকে ঘিরে এ প্রক্রিয়া থমকে যায়। এবার ফেব্রুয়ারিজুড়ে চলবে দল গোছানোর এই কার্যক্রম। তবে জাতীয় কাউন্সিলের আগে অন্তত ২০ জেলায় নতুন কমিটি করার লক্ষ্য দলটির। এতে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে কেন্দ্রীয় নেতারাই। নিজেদের পদ ধরে রাখতে কেউ কাউন্সিলই করতে চান না। আবার করতে চাইলেও তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে নিজের মতো করেই করতে চান। এ নিয়ে নানা সমস্যাও চলছে।

জানা যায়, জেলা কমিটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আজ সিলেট জেলা ও মহানগর, ৮ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহে ও ১২ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধায় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। নোয়াখালী, খাগড়াছড়ি, মুন্সীগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, খুলনা মহানগর ও জেলার সম্মেলনের তারিখও চূড়ান্ত।

এ ছাড়া খুলনা, বাগেরহাট, মেহেরপুর, নওগাঁ, রাজশাহী, ঝালকাঠি, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, শরীয়তপুরসহ  বেশ কয়েকটি  জেলার সম্মেলনও এই মাসে করে ফেলার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কাউন্সিল উপলক্ষে সিলেটে আজ সফর করবেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান। - বিডি প্রতিদিন
৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে