শনিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০১:৫৬:৩৩

কাউন্সিল ঘিরে দুই দলে তৎপরতা

কাউন্সিল ঘিরে দুই দলে তৎপরতা

রফিকুল ইসলাম রনি : এবারের কাউন্সিলে হাইব্রিড, হঠাৎ গজিয়ে ওঠা নেতারা ঠাঁই পাবেন না আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে। আগামী দিনের মাঠের রাজনীতিতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ সংগঠক, ছাত্রলীগের শীর্ষপদে দায়িত্ব পালনকারী সাবেক ছাত্রনেতা, দলের প্রতি একনিষ্ঠরাই কমিটিতে স্থান পাবেন।

২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে দলের চরম দুর্দিনে যারা সক্রিয় অবদান রেখেছেন তাদের মূল্যায়ন করা হবে। একই সঙ্গে গত সাত বছরে যারা ব্যাংক, বীমা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন অথচ পদে থেকে দলকে গতিশীল করতে তাৎপর্যময় ভূমিকা রাখতে পারেননি, তাদের ব্যাপারে ‘পরে দেখা যাবে’ নীতি অবলম্বন করবে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।

২০তম কাউন্সিলে দক্ষ ও গতিশীল নেতৃত্ব বের করে আনতে চান আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সম্মেলনের মাধ্যমে বেরিয়ে আসা নতুন নেতৃত্বই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়াদির তত্ত্বাবধান করবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

আগামী ২৮ মার্চ রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২০তম ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল হবে। কাউন্সিলে এবার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এ সম্মেলন সফল করতে পূর্বপ্রস্তুতির কার্যক্রম হিসেবে জেলা সম্মেলন শেষ করা হচ্ছে। উপ-কমিটিও গঠনের কাজ এগিয়ে চলেছে। ভিতরে ভিতরে শুরু হয়েছে দলের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রের সংশোধনীর কাজ। তবে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কেউ কিছু বলেননি।

দলীয় সূত্রমতে, চলতি বছরের কাউন্সিলকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন— এ দুটি বিষয় মাথায় রেখেই আগামীর নেতৃত্ব নির্বাচন করা হচ্ছে। এ জন্য অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিতদের স্থান দেওয়ার পাশাপাশি সাবেক ছাত্রনেতা তরুণদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। বর্তমানে ৭৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি রয়েছে।

এবারের কাউন্সিলে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কলেবর বৃদ্ধি পাওয়ার খুবই সম্ভাবনা। এর আকার ৮১ করা হতে পারে। এ ছাড়া বাস্তবতার আলোকে নতুন কিছু পদও সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ কাউন্সিলের বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে পরিবর্তন আসার বিষয়টি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীর মধ্যে আলোচিত হচ্ছে। কারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসতে পারেন, কারা বাদ পড়তে পারেন— এ নিয়ে কর্মীদের মধ্যে চলছে নানা গুঞ্জন ও আলোচনা।

এ পরিবর্তনে নতুন করে অন্তর্ভুক্তি এবং বাদ দেওয়া এ দুই বিষয়ই রয়েছে। সূত্রমতে, ২০তম কাউন্সিল সামনে রেখে কখনো ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না বা করলেও নামে মাত্র তারাও এখন নানা লবিং-তদবির শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেতে। এ ছাড়া উঠতি ব্যবসায়ীরাও পদ পেতে চান আওয়ামী লীগের কমিটিতে।

এমনকি প্রবাসীরাও এখন ঢাকামুখী হয়েছেন। লন্ডন, কানাডা, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীরাও এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। তারা আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতা ও প্রভাবশালীদের বাসা-অফিস-বাড়িতে ধরনা দিচ্ছেন। বিগত দিনে প্রবাসে তাদের নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছেন।

এর আগে কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থেকে বাদ পড়া দলের প্রবীণ নেতাদের কয়েকজনকে আবারও ফিরিয়ে আনা হতে পারে। আবার বর্তমান কমিটির বিভিন্ন পদে থাকা কাউকে কাউকে নতুন কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে। এদিকে আগামী সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পদে রয়েছেন এ রকম কয়েকজন বাদ পড়তে পারেন বলে গুঞ্জন চলছে।

দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতাসহ নানা অভিযোগের কারণে এদের সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। আবার বাদ না পড়লেও কারও কারও পদ-পদবি কমতে পারে। বিশেষ করে সম্পাদকমণ্ডলীর কোনো কোনো পদ থেকে কাউকে কাউকে বাদ দিয়ে এবং ওইসব পদে নতুন করে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে একটা পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা রয়েছে।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। আগামী কাউন্সিলে যোগ্য ব্যক্তিরাই এ সংগঠনে স্থান পাবেন। দক্ষ সংগঠক, প্রতিশ্রুতিশীল ও অনুগতরাই কমিটিতে থাকবেন।

আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে দলের সংযোজন-বিয়োজন হবে এটাই স্বাভাবিক। এবারের কাউন্সিলে দলের পরীক্ষিত ও ত্যাগীরাই কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাবেন। অতীতেও হাইব্রিড কাউকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়নি, এবারও হবে না।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আসন্ন কাউন্সিলকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। কারণ এ সম্মেলনের মাধ্যমে বেরিয়ে আসা নতুন নেতৃত্বই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করবেন। এ ছাড়া বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও আগামী দিনের অবস্থা এক না-ও হতে পারে। সে জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে এই সম্মেলন। -বিডি প্রতিদিন
৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে