সোমবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০১:৩৭:২৬

হতাশায় কমছে বিএনপির সংগঠন

হতাশায় কমছে বিএনপির সংগঠন

মাহমুদ আজহার : হৃদয়ে বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হানিফ। জিয়া নাগরিক ফোরামের সভাপতি মিয়া মো. আনোয়ার। এ দুজন জাতীয়তাবাদী সহযোগী সংগঠন ঐক্য পরিষদের পৃষ্ঠপোষক। তাদের নেতৃত্বে প্রেসক্লাবভিত্তিক ৩৮টি সংগঠন চলে। কিন্তু এখন এসব সংগঠনের কর্মসূচি সংকুচিত হয়ে আসছে।

এর কারণ হিসেবে জানা যায়, হামলা মামলার পাশাপাশি রয়েছে আর্থিক সংকট। যারা এক সময় আর্থিক সহায়তা দিতেন, তারা এখন তা বন্ধ করে দিয়েছেন। দীর্ঘ ৯ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকায় অধিকাংশ সংগঠনই চলছে নামকাওয়াস্তে। এ প্রসঙ্গে মেজর হানিফ বলেন, নানা সংকট রয়েছে। তারপরও কর্মসূচি কমবেশি চলছে।

জাতীয়তাবাদী দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের প্রধান রকিবুল ইসলাম রিপন। তিনি জানালেন, সংগঠন করতে কর্মীদের যেভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করতে হয় তা আমরা পারছি না। আর্থিক সংকট অন্যতম কারণ। নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার খড়গও আছে। শুধু হানিফ, রিপন কিংবা আনোয়ারই নয়, তাদের মতো শতাধিক সংগঠনের উদ্যোক্তা জাতীয় প্রেসক্লাবসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি সংকুচিত করে ফেলেছেন।

এক সময়ে বিএনপি নেতাদের নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে নিয়মিত অনুষ্ঠান করতেন আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ। তার সংগঠনের নাম ‘স্বাধীনতা ফোরাম।’ এখন আর আগের মতো কর্মসূচি নেই তার। এ নিয়ে রহমতুল্লার বক্তব্য হলো, এখন আগের মতো অতিথি পাওয়া যায় না। তা ছাড়া আর কত দিন বিরোধী দল এভাবে চলবে— তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কর্মসূচি করতে আর্থিক বিষয়টাও গুরুত্বপূর্ণ। তারও জোগান পাওয়া যায় না। সব মিলিয়ে কর্মসূচি কমই হচ্ছে। জিয়া সেনার সভাপতি এখন প্রেসক্লাবভিত্তিক সংগঠন ছেড়ে এখন একটি রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়েছেন।

তার বক্তব্য, জাতীয়তাবাদী শক্তি এখন নানাভাবে হতাশায় ভুগছে। অনুষ্ঠানে আসা নেতারাও হতাশ। এ ছাড়া প্রেসক্লাবভিত্তিক সংগঠন নিয়ে দায়-দায়িত্বও নিচ্ছে না বিএনপি। দলের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী যে ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন, এরপর থেকে সংগঠনের উদ্যোক্তারা আরও হতাশ হয়ে পড়েছেন। তাই অনেকে সংগঠন বাদ দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে কিছু করার চিন্তাভাবনা করছেন।

জানা যায়, রাজনৈতিক সুবিধা নিয়ে বিএনপির ছায়ায় গজিয়ে ওঠা ‘রাজনীতির দোকান’ ক্রমেই কমে আসছে। শতাধিক দোকানের মধ্যে এখন নিষ্ক্রিয় প্রায় অর্ধশত। বাকিগুলো মাঝেমধ্যে প্রেসক্লাবভিত্তিক কর্মসূচি পালন করে। তবে আগের মতো বিএনপির অতিথিরা এতে অংশ নেন না। আর্থিকভাবেও তারা সহযোগিতা করেন না। এ নিয়ে সংগঠনের উদ্যোক্তারাও হতাশ। দু-একটি সংগঠন এখনো সক্রিয় যারা রাজনীতিশূন্য মাঠে ফায়দা নিচ্ছে প্রচারযন্ত্রের। নানা ইস্যুতে সভা, মানববন্ধনের আয়োজন করে দৃষ্টি কাড়ছে গণমাধ্যমের।

বিএনপির নামে-বেনামে গড়ে ওঠা অনুমোদনহীন সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে— হৃদয়ে বাংলাদেশ, জিয়া নাগরিক ফোরাম, ডেমোক্রেসি মুভমেন্ট, ডেমোক্রেটিক কাউন্সিল, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক একাডেমি, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দল, সম্মিলিত সমন্বয় পরিষদ, জিয়া সেনা, স্বদেশ জাগরণ পরিষদ,  দেশনেত্রী সাংস্কৃতিক পরিষদ,  দেশপ্রেমিক  ফোরাম, জিয়া স্মৃতি সংসদ, জিয়া নাগরিক ফোরাম, জিয়া আদর্শ একাডেমি, তৃণমূল দল, চেতনায় ‘৭১, সচেতন নাগরিক  ফোরাম, চেতনায় মুক্তিযোদ্ধা, জাগ্রত জনতা ফোরাম, নাগরিক পরিষদ, নাগরিক অধিকার সোসাইটি, গণতান্ত্রিক ঐক্য ফোরাম, গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক  জোট, প্রজন্ম একাডেমি, নাগরিক সংসদ, চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলন, সুশীল ফোরাম, নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ, চিরন্তন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম, স্বাধীনতা ফোরাম, জিয়া পরিষদ, তৃতীয় স্বর, দেশপ্রেমিক যুবশক্তি প্রভৃতি।

বিএনপির অনুমোদিত অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মধ্যে রয়েছে— বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দল, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস), জাতীয়তাবাদী কৃষক দল, জাতীয়তাবাদী মত্স্যজীবী দল, জাতীয়তাবাদী তাঁতী দল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ওলামা দল, জিয়া পরিষদ, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, অধিকাংশ সংগঠনই নেতাদের নাম বিক্রি করে চলে। চাঁদাবাজিও করে। তাই বিএনপি নেতারাও এখন দেখেশুনে কর্মসূচিতে যান। দলের অনুমোদনহীন এসব সংগঠন নিয়ে নানা প্রশ্নও রয়েছে। প্রেসক্লাবভিত্তিক এসব সংগঠনে কম যাওয়াই ভালো বলে আমি মনে করি। -বিডি প্রতিদন

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে