সোমবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪, ১১:০৫:২৬

আমদানির পর এখন আলুর কেজি যত

আমদানির পর এখন আলুর কেজি যত

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : আলুর মৌসুম শুরু হলেও টানা সম্ভব হয়নি দামের লাগাম। আমদানির খবরে বাজারে স্বস্তির বাতাস উঠলেও তা স্থায়ী হয়নি। 

কয়েকদিন কম দাম থাকলেও বর্তমানে রাজশাহীতে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে। অধিক লাভের আশায় সময়ের আগেই চাষিরা আলু বাজারজাত শুরু করছেন।  

তবে চাষিরা বলছেন, আগাম এসব আলু ফলনে কম হয়। তবে বাজারে আলুর দাম বেশি হওয়ার কারণে তারা আগেই আলু তুলে বাজারজাত করছেন। এসব আলু ৭০ থেকে ৭৮ দিনের মাথায় জমি থেকে তুলে বাজারজাত করা হচ্ছে। 

যদিও সাধারণত এসব আলু ৯৫ থেকে ১০০ দিন জমিতে থাকার কথা। তবে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৭৫ টন আলু আমদানির খবরে চাষি-ব্যবসায়ীদের কপালে চিন্তার ভাজ ফেললেও তা কাজে আসেনি। কারণ আমদানির খবরে দাম কমলেও আবারও আলুর দাম বাড়তে থাকায় খুশি তারা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলায় এ বছর আলুর চাষ হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমিতে। 

গত বছর জেলায় আলুর চাষ হয়েছিল ৩৬ হাজার ৬৫১ হেক্টর জমিতে। এ বছর আলুর চাষের পরিমাণ কমেছে ১ হাজার ৬৯৬ হেক্টর। এ ছাড়া রাজশাহী জেলার মধ্যে তানোর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আলুর চাষ হয়। এবার তানোর উপজেলায় আলুর চাষ হয়েছে ১৩ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে।

সরেজমিনে জেলার পবা ও তানোর উপজেলার বিভিন্ন আলু চাষের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, ব্যস্ত সময় কাটাছে আলু তোলা শ্রমিক, চাষি ও ব্যবসায়ীরা। তবে জমি থেকে আলু তোলাকে কেন্দ্র করে পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকদের কাজের সুযোগ হয়েছে। 

তানোর পৌরসভার চাঁনপুর এলাকার নিচ বিলের কৃষকরা জানান, প্রতি বিঘা জমিতে আলুর উৎপাদনের খরচ বাদ দিলে লাভ থাকবে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। মৌসুমের শুরুতে এই অঞ্চলের কৃষকরা ৫০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করেছেন। 

এখন প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজি দরে। প্রথম দিকে জমি থেকে আলু আগাম তোলায় উৎপাদন কম হয়েছিল। তবে দাম বেশি হওয়ায় তাতে কৃষকরা লাভবান হয়েছেন। বর্তমানে আলুর দাম কম বলছেন তারা। গত বছরের তুলনায় এ মৌসুমে আলু উৎপাদনের খরচ বেড়েছে অনেক বেশি।

তানোর উপজেলার চাঁনপুর এলাকার কৃষক মামুন অর রশিদ জানান, এ বছর ৪ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন তিনি। প্রতি বিঘায় আলু পেয়েছেন ৫০ মণ। তবে এই আলু আরও ৩০ থেকে ৩৫ দিন পরে জমি থেকে তুললে ৬০ থেকে ৬৫ মণ পাওয়া যেত। সেসময় এখনকার মত দাম নাও পাওয়া যেতে পারে, তাই আগাম আলু তুলে বাজারজাত করছেন তারা। 

কৃষক আক্কাস আলী জানান, ১০ বিঘা জমিতে ডাইমন্ড জাতের আলু চাষ করেছেন তিনি। বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে ৬০ মণ। তার দাবি, প্রথম দিকে আলুর দাম ভালো ছিল। তখন বাজারে ৫০ থেকে ৫২ টাকা প্রতি কেজি আলু বিক্রি করেছেন। বর্তমানে প্রতি কেজি আলু ৩০ থেকে ৪০ টাকা। তাদেরকে আরও কম দামে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে হয়। 

আলু ব্যবসায়ী আনারুল ইসলাম বলেন, সোমবার ব্যবসায়ীরা আলু কিনেছেন প্রতি কেজি ২৪ টাকা দরে। আর রোববার ছিল প্রতি কেজি ২৩ টাকা। আলুর দাম বাড়তে শুরু করেছে। তবে আলুর দাম কম হলে চাষিরা আলু তুলছেন না। আলু আমদানির খবরের দাম কমার বিষয়ে তিনি বলেন, আলুর দাম কমেছিল। কিন্তু দুই তিন পর থেকে আবার আলু দাম বাড়তে শুরু করেছে।  

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে যে আলু তোলা হচ্ছে সেগুলো ৭০ থেকে ৭৮ দিনের। এই আলু ওজনেও কম। আবার দ্রুত নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। গত বছর মৌসুমের এ সময়ে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছিল ১০ থেকে ১১ টাকা দরে। এ বছর প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে খরচ হয়েছে ১৪ থেকে ১৫ টাকা। তাই তুলনামূলক দাম বেশি ।

সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) নগরীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে খুচরায় ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে। নগরীর মির্জাপুর এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বিনোদপুর বাজারে আলু কিনতে এসে জানান, কৃষকরা বলছেন দাম নেই। ব্যবসায়ীরা বলছে বেশি দামে কিনে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। তাহলে ক্রেতারা কি বলবে? ব্যবসায়ীরা যে দামে ক্রেতাদের আলু খাওয়াচ্ছেন ক্রেতারা বাধ্য হয়ে সেই দামেই খাচ্ছেন। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। বাজার মনিটরিং দরকার। 

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন জানান, জেলার বাগমারা ও তানোর উপজেলার কৃষকরা আগাম আলুর চাষ বেশি করে থাকেন। প্রচণ্ড ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশার কারণে আলুর উৎপাদন খরচ বেড়েছে। কিন্তু আগাম আলু চাষ করে কৃষক দামও ভালো পাচ্ছেন। এবার আশা করা যাচ্ছে- আলুতে লোকসান হবে না।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে