বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০৭:৪৪:১১

আ.লীগের আদলে ‘উপপরিষদ’ করার চিন্তা বিএনপির

আ.লীগের আদলে ‘উপপরিষদ’ করার চিন্তা বিএনপির

সেলিম জাহিদ: অনেকটা আওয়ামী লীগের অনুকরণে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বাইরে প্রতিটি সম্পাদকীয় বিভাগে আলাদা সাব-কমিটি বা উপপরিষদ গঠন করার চিন্তা করছে বিএনপি। দলের আসন্ন জাতীয় সম্মেলনে তা গঠনতন্ত্রে যুক্ত করা হতে পারে। এ ছাড়া সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটিতে নতুন পাঁচজন নেতা অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন বলে দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে।

বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আকার ও পরিসর বাড়াতে নীতিনির্ধারকেরা এ ধরনের চিন্তা করছেন। এর বাইরে দলের গঠনতন্ত্রে কোনো সংযোজন বা সংশোধনের প্রস্তাব থাকলে তা লিখিতভাবে কেন্দ্রকে জানাতে তৃণমূলের নেতাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে গত সপ্তাহে জেলা, উপজেলা ও পৌরসভার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের চিঠি দিয়ে জানানো হয়, বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৯(১২) ধারা অনুযায়ী সংশোধন প্রস্তাব করার বিধান রয়েছে। জাতীয় কাউন্সিলের সদস্যরা এ প্রস্তাব করতে পারেন। চিঠিতে গঠনতন্ত্র সংশোধনের প্রস্তাব থাকলে তা ১ মার্চের মধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বরাবর পাঠাতে বলা হয়েছে।
বিএনপির সূত্র জানায়, আগামী ১৯ মার্চ সম্ভাব্য তারিখ ধরে দলের ষষ্ঠ কেন্দ্রীয় সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। সম্মেলনের আগেই সব জেলার কমিটি পুনর্গঠন করতে ১১টি সাংগঠনিক টিম করা হয়েছে। তাঁরা কাজ শুরু করেছেন। এ ছাড়া সম্মেলন সামনে রেখে আজ বুধবার রাতে গুলশানের কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে বসছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সম্মেলনের প্রস্তুতি চলছে। অন্যান্য বছর কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই জেলা ও থানা কমিটির সম্মেলন হয়ে থাকে। এবার তার অনেকটা উল্টো হতে পারে। এরপরও বলব, বাধা-বিপত্তি যাই হোক, সম্মেলন হওয়াটা জরুরি হয়ে পড়েছে।’
দলটির দায়িত্বশীল নেতারা বলেন, এবারের সম্মেলনে বিএনপির শীর্ষ পদগুলোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা কম। দলের চেয়ারপারসন পদে খালেদা জিয়াই থাকছেন। ছেলে তারেক রহমান থাকছেন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে। আর মহাসচিব পদ নিয়ে নানা গুঞ্জন থাকলেও শেষ পর্যন্ত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই স্থায়ী হতে যাচ্ছেন বলে বিএনপির বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে।
তবে গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক পদ জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব কে হচ্ছেন, তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা আছে। এর আগে তারেক রহমান ও মির্জা ফখরুল ইসলাম জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব পদে ছিলেন। বর্তমানে পদটি খালি আছে। দলীয় সূত্র জানায়, এ পদের জন্য এখন নেতা পাওয়া যাচ্ছে না। এরপরও পদটির দায়িত্ব পেতে দলের অনেকে ভেতরে-ভেতরে তৎপরতা চালাচ্ছেন। এর মধ্যে যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান, সালাহউদ্দিন আহমদ, রুহুল কবির রিজভী ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপনের নাম আলোচনায় আছে।

বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, এবারের সম্মেলনের উল্লেখযোগ্য দিক হবে দলের স্থায়ী কমিটিতে নতুন মুখের অন্তর্ভুক্তি। দলের ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটিতে আর এ গনি ও খন্দকার দোলোয়ার হোসেনের মৃত্যু এবং সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ফাঁসিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের কারণে তিনটি পদ খালি হয়েছে। স্থায়ী কমিটির অন্য দুই জ্যেষ্ঠ সদস্য এম শামসুল ইসলাম ও সারোয়ারী রহমান বার্ধক্যের কারণে দলের নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখতে পারছেন না। এ অবস্থায় স্থায়ী কমিটিতে পাঁচজন নেতা অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। তাঁদের মধ্যে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, এম ওসমান ফারুক, আবদুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা ও নারী কোটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তাজমেরি এস ইসলামের নাম আলোচিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল্লাহ আল নোমান গতকাল রাতে বলেন, ‘স্থায়ী কমিটিতে আমার নাম আলোচনায় থাকতে পারে। তবে আলোচনায় থাকলেই যে হয়ে যাবে, তা তো নয়।’

দলীয় সূত্র জানায়, এবারের সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যসংখ্যা কিছুটা কমতে পারে। গত সম্মেলনে নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়েছিল ৩৮৬ জন। এবার এর সংখ্যা কমিয়ে আওয়ামী লীগের আদলে দলের বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদের অনুকূলে উপপরিষদ গঠন করা হতে পারে। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে সম্পাদকীয় পদের অনুকূলে বিভিন্ন উপকমিটি করার কথা আছে। বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, প্রস্তাবিত উপপরিষদ হবে সর্বোচ্চ ৫০১ সদস্যের। তাঁরা কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হবেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, সময়ের দাবি এবং বাস্তবতার নিরিখে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে নতুন পদবিন্যাস হওয়াটা স্বাভাবিক।-প্রথম আলো
১০ ফেব্রুয়ারী ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জেএম/আরএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে