আনোয়ার আলদীন : কেন্দ্রীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে দ্রুত জেলা কমিটি করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে বিএনপি। জেলাগুলোতে নেতাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। জেলায় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করেই মূলত এ কোন্দল।
কোথাও কোথাও প্রকাশ্য চলছে আধিপত্যের লড়াই। নেতাকর্মীদের আশঙ্কা, নেতাদের গ্রুপিং এবং শক্তির প্রতিযোগিতার আবর্তে যে কমিটি গঠন করা হবে তাতে ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের মূল্যায়ন না হলে সংঘাত-সংঘর্ষও হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে দলের হাইকমান্ড কেন্দ্রীয়ভাবে ১১টি টিম গঠন করেছেন। টিমগুলোর নেতৃত্বে আছেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। এই টিমগুলোতে যে নেতা যে জেলার তাকে সেই জেলার টিমে রাখা হয়নি। এক জেলার নেতাকে অন্য জেলায় দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। টিমের নেতাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠন করতে। এক্ষেত্রে জেলার নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমন্বয় করতে হবে।
বিএনপি সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ময়মনসিংহ জেলা টিমের দায়িত্ব। বৃহত্তম ময়মনসিংহের নেতা ড. এম ওসমান ফারুককে ঢাকা জেলা, মুন্সীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালী এবং সিরাজগঞ্জ, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ রাজশাহী অঞ্চলের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রামের আবদুল্লাহ আল নোমানকে দেয়া হয়েছে বরিশালের দায়িত্বে। বরিশাল-ভোলার মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদকে দেয়া হয়েছে পাবনা জেলা টিমের দায়িত্ব। খুলনায় অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনকে, রংপুর বিভাগে মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরীকে, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল ও নেত্রকোনায়, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফকে রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। টিমগুলোর সমন্বয় এবং তদারকি করছেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কাউন্সিলকে সামনে রেখে আগামী ২ মার্চের মধ্যে জেলাগুলোতে কমিটি গঠন শেষ করতে চিঠি দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ।
দলের একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার অধিকাংশতেই নেতাদের বিরোধ। এ কারণে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গত বছরের আগস্ট থেকে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এতোদিন কালক্ষেপণ করেছেন জেলার আধিপত্যবাদী নেতারা।
সিলেট মহানগর ও জেলার কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার ঝিনাইদহ জেলার কাউন্সিলও সম্পন্ন হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রাজশাহী মহানগরে ১২ ফেব্রুয়ারি সম্মেলন হবে। ২৬ ফেব্রুয়ারি হবে নোয়াখালী। গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, কুষ্টিয়া, নীলফামারী, খাগড়াছড়ি, লক্ষ্মীপুর, খুলনা মহানগর, লালমনিরহাট, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ জেলায় সম্মেলন করার প্রস্তুতি চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নেতাদের দ্বন্দ্বের কারণে সবচেয়ে সংকট চলছে পঞ্চগড়, দিনাজপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, বাগেরহাট, মৌলভীবাজার, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ উত্তর ও দক্ষিণ, ফরিদপুর, বরিশাল উত্তর ও দক্ষিণ, পিরোজপুর, ভোলা, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বরগুনা, কুমিল্লা উত্তর ও দক্ষিণ, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ, মানিকগঞ্জ, ঢাকা জেলা ও মহানগর।
বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ১৪টি জেলার কমিটি করা হয়ে গেছে। কাউন্সিলের আগে সবগুলো জেলার কমিটি না হলেও বেশিরভাগ কমিটি গঠন করার টার্গেট রেখেছে বিএনপি। বিরোধপূর্ণ কয়েকটি জেলায় সম্মেলন ছাড়া কেন্দ্র থেকে কমিটি গঠন করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ময়মনসিংহ উত্তর ও দক্ষিণ, ফেনী, বগুড়াসহ কয়েকটি জেলা। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার জেলা ফেনী কমিটি নিজেই গঠন করবেন।
দলের একজন জেলায় জেলায় কোন্দলের অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, কোন্দলের অবস্থা এমন যে ঢাকার কাছে মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপিতে গত ১৭ বছর ধরে পূর্ণাঙ্গ কোনো কমিটি নেই।
স্থানীয়রা জানান, এক সময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল এ জেলা। দলটির সাবেক মহাসচিব মরহুম খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন, সাবেক শিল্পমন্ত্রী শামসুল ইসলাম খান (নয়া মিয়া) ও বিশিষ্ট শিল্পপতি হারুনার রশিদ খান মুন্নু এ তিনজনের প্রচেষ্টায় শক্তিশালী হয়ে ওঠে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা। তিন গ্রুপই বেশ শক্তিশালী অবস্থান জেলায়।
একপর্যায়ে তা রূপ নেয় কোন্দলে। দেলোয়ার হোসেন ও নয়া মিয়া মারা গেছেন। আর মুন্নুও শারীরিকভাবে বেশ অসুস্থ। তারপরও কোন্দলের পরিসমাপ্তি ঘটেনি। এ তিনজনের রাজনৈতিক উত্তরসূরিরা এখনও জিইয়ে রেখেছেন কোন্দল। অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত বছর মানিকগঞ্জ সফর বাতিল করতে বাধ্য হন। -ইত্তেফাক
১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস