বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০২:৫৬:৫৮

পুনর্গঠনেও অশান্তির আগুনে পুড়ছে বিএনপি

পুনর্গঠনেও অশান্তির আগুনে পুড়ছে বিএনপি

মজুমদার ইমরান : নতুন নির্বাচন আদায়ের দাবিতে রাজপথের আন্দোলন বন্ধ। আপাতত দল পুনর্গঠনকে প্রাধান্য দিয়েই নিজেদের রাজনৈতিক কর্ম-কৌশল নির্ধারণ করেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। কিন্তু পুনর্গঠন নিয়েও অশান্তির আগুনে পুড়ছে দলটি।

অঙ্গসংগঠনসহ দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সহিংস বহিঃপ্রকাশ দেখে রীতিমতো অবাক বিএনপির হাইকমান্ড। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর সোমবার শতাধিক পদবঞ্চিত নেতাকর্মী নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন, ভাঙচুর ও হামলা চালিয়েছে।

জ্বালিয়ে দিয়েছে গাড়িসহ কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের অফিস। পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতাকর্মীদের এমন আচরণে হতভম্ব সংগঠনের নেতাকর্মীরা। গতকাল বুধবারও নয়াপল্টনে ছাত্রদলের দুই গ্রুপ নিজেদের মধ্যে মারামারি করেছে। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিএনপির মধ্যে অস্বস্তি বিরাজ করছে।

ভবিষ্যৎ আন্দোলনকে সামনে রেখে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া দল গোছানোর কাজ শুরু করেছেন। দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করে তিনি নতুন নির্বাচন আদায়ের দাবিতে রাজপথে আবারো জোরদার আন্দোলন করতে চাইছেন। দল গঠনের প্রক্রিয়ায় আগামী ১৯ মার্চ বিএনপি তাদের ষষ্ঠ কাউন্সিল করার ঘোষণা দিয়েছে।

কাউন্সিলের পূর্বে দলের অঙ্গসংগঠনসহ মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা কমিটিগুলো পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। যার ধারাবাহিকতায় দেড় বছর পর ৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৭৩৬ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে বড় কমিটি করেও অভ্যন্তরীণ কোন্দল ঠেকানো যায়নি।

রাজিব আহসানকে সভাপতি ও মো. আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের ১৫৩ সদস্যের আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৪ সালে ১৪ অক্টোবর। ওই সময়ও পদবঞ্চিত ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা দফায় দফায় বিক্ষোভ করে। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষও হয়েছে।

দেড় বছর অপেক্ষা করে সব গ্রুপের নেতাকর্মীকে সমন্বয় করে স্মরণকালের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রদল। কিন্তু এই কমিটিতেও নেতৃত্ব বাছাইয়ে সঠিক পথ অবলম্বন করা হয়নি বলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে পদবঞ্চিত একটি অংশ। সোমবার ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং ব্যাপক তাণ্ডব চালায়।

নয়াপল্টনের সামনে গাড়ি-মোটরসাইকেল জ্বালিয়েই তারা ক্ষান্ত হয়নি। কার্যালয়ের ভেতরে ছাত্রদলের অফিসেও তারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। ছাত্রদলের পদবঞ্চিতদের এমন বিক্ষোভে বিএনপি হতবাক। চলছে নানা বিশ্লেষণ।

জানা গেছে, আপাতত ছাত্রদলের পদবঞ্চিতদের ক্ষোভ নিরসনে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আরো বেশকিছু নেতাকর্মীকে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, মহিলা দলসহ অন্য অঙ্গসংগঠনগুলোকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির।

তবে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণার পর যে সহিংস ঘটনা ঘটেছে তা নিয়ে বিএনপির হাইকমান্ড চিন্তিত। অন্যান্য অঙ্গসংগঠন পুনর্গঠনে একই ঘটনা ঘটতে পারে বলেও কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন।

২০১০ সালের ২৬ মার্চ অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে সভাপতি এবং সাইফুল আলম নীরবকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরে ২০১০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ২১১ সদস্যবিশিষ্ট যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করেন।

তখনো পদবঞ্চিত যুবদল কর্মীরা ব্যাপক বিক্ষোভ করেন। যুবদল পুনর্গঠনেও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ঘটনা ঘটতে পারে। যুবদলের নতুন নেতৃত্বে আসার জন্য একাধিক গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। ৬ ফেব্রুয়ারি সংগঠনের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজকে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করার দাবিতে মিছিল করেছেন যুবদলের কিছু নেতাকর্মী।

হাবিব উন খান সোহেল ও মীর সরাফত আলী সফুর নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক দল নিয়েও সমস্যা রয়েছে। এই কমিটিও পদবঞ্চিতদের দাবির মুখে কেন্দ্রীয় কমিটি বর্ধিত করেছে। নতুন করে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতৃত্বে আসা নিয়েও নেতাদের মধ্যে বিভেদ রয়েছে।

অঙ্গসংগঠনের পাশাপাশি বিএনপির মহানগর ও জেলা কমিটিও পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। দু’একটি স্থানে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সুষ্ঠুভাবে কমিটি গঠন হলেও অনেক জায়গায় রয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। ৭ ফেব্রুয়ারি সিলেট জেলা ও মহানগরের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহানের উপস্থিতিতে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে জেলা ও মহানগরের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। মঙ্গলবার ঝিনাইদহেও বিএনপির জেলা কমিটির কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে।

বিএনপির এক সহ-দফতর সম্পাদক জানান, আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধা জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় কাউন্সিলের আগে প্রায় ৩৬-৪০ জেলায় নতুন সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের চেষ্টা করা হচ্ছে। সম্ভব হলে সব হবে। সম্ভব না হলে জাতীয় কাউন্সিলের পর যেগুলো বাকি থাকবে সেখানে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন জেলা কমিটি করা হবে।

এদিকে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার পর সহিংস ঘটনার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে ক্ষমতাসীনদের ইন্ধনকে মুখে দায়ী করা হলেও এ ঘটনায় বিব্রত দলের হাইকমান্ড। জানা গেছে, গতকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। ছাত্রদলের পদবঞ্চিতদের সহিংস বিক্ষোভের ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এই ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। বিএনপির এক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার পর যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের আগে অঙ্গসংগঠন পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়া যাবে না। এমন কথাও হাইকমান্ড বিবেচনা করছে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। সেখানে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবে। সব রাজনৈতিক দলেই কম-বেশি নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকে।

ছাত্রদলের সংঘর্ষের ঘটনায় ক্ষমতাসীনদের ইন্ধন রয়েছে এমন অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ছাত্রদলের এই ঘটনার জন্য বিএনপির পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ার ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। নির্ধারিত সময়ে বিএনপির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ হবে। -মানবকণ্ঠ

১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে