বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ১০:১৪:৪১

‘আমার ছেলের হত্যার বিচারডা পাইলাম না’

‘আমার ছেলের হত্যার বিচারডা পাইলাম না’

নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশে সম্প্রতি শিশু অপহরণ ও হত্যার বেশ কিছু ঘটনায় শিশুর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দেখা যাচ্ছে।  বেসরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, গত চার বছরে দেশটিতে এক হাজারের বেশি শিশু হত্যার শিকার হয়েছে।  গত কয়েক বছরে শিশু অপহরণের হারও ক্রমশ বাড়ছে।

২০১৫ সালে নারায়নগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভার বিরাবো গ্রামের শিশু সাদমান হত্যার ঘটনা পুরো এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল।  সাদমান আপন ছিল পরিবারের একমাত্র সন্তান।  ২১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে সে আর ফেরেনি।  হারানোর দ্বিতীয়দিনে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে পরিবারের কাছে ফোন আসে।  পরিবারের দাবি, ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দেয়া হয়।

কথামতো টাকা দিয়েও ছেলের খোঁজ না পেয়ে পিতা জাহিদুল ইসলাম পুলিশকে জানালে চারদিনের মাথায় সাদমানের লাশ উদ্ধার হয়।  সাদমানের বাবা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি যখন শুনছি যে আমার চাচাতো ভাই জড়িত -আমার রক্তের ভাই যখন জড়িত -তাইলে ওরে মারে নাই- ছেলেরে জীবিত পামু।  আধঘণ্টা পরে শুনি ওরে মাটির নিচে রাখছে, মাটির নিচে তো জীবিত মানুষ রাখে না।’

পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, সাদমানের মতো অনেক শিশুই অপহরণ এবং হত্যার শিকার হচ্ছে বাংলাদেশে।  আগের বছরের তুলনায় ২০১৫ সালে শিশু অপহরণ ১৬% বেড়েছে।  শিশু অধিকার ফোরামের হিসাবে ২০১৩ সালে ১৯টি, ২০১৪ সালে ৫২টি এবং ২০১৫ সালে ৪০টি শিশু অপহরণে পর হত্যার শিকার হয়েছে।

সেন্টার ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন স্টাডিজের সভাপতি অধ্যাপক ইশরাত শামীম বলেন, তারাও গবেষণা করে দেখছেন ইদানিং শিশু হত্যার ঘটনা বাড়ছে।

‘আমি মনে করি ইটস ভেরি হাই, যেসব বাচ্চাকে পাওয়া যায় তার মধ্যে মেজরিটি বাচ্চাকে ডেড পাওয়া যাচ্ছে। এই ফেনোমেনাটা ইদানিং হয়েছে আগে ছিল না।’

যেসব বাচ্চাকে পাওয়া যায় তার মধ্যে মেজরিটি বাচ্চাকে ডেড পাওয়া যাচ্ছে। এই ফেনোমেনাটা ইদানিং হয়েছে আগে ছিল না।
 
৯০ দশক থেকে নিখোঁজ শিশু নিয়ে গবেষণা করা অধ্যাপক ইশরাত শামীম বলেন, ‘জমিজমা নিয়ে গণ্ডগোল হতে পারে- বাচ্চার ওপর শোধ নিচ্ছে। তারপর অনেক সময় র‍্যানসমের জন্য ওটাও একটা বিজনেস। বাচ্চার জন্য এনি অ্যামাউন্ট জোগাড় করবেই বাবা মা। আরেকটা হলো যারা ধরে নিয়ে গেছে তাদেরকে বাচ্চা চিনে ফেলে।’

সম্প্রতি ঢাকার পাশে কেরানীগঞ্জে শিশু আব্দুল্লাহ খুনের ঘটনাও ব্যাপক আলোচিত।  ২৯ জানুয়ারি নিখোঁজ হবার ৪ দিনের মাথায় প্রতিবেশি আত্মীয়ের বাড়িতেই তার মৃতদেহ পাওয়া যায়।  দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়েও তাকে বাঁচানো যায়নি।

সম্প্রতি শিশু হত্যা অপহরণের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যেও আতঙ্ক কাজ করে।  ঢাকার একটি স্কুলের সামনে কয়েকজন অভিভাবক বলছিলেন, তারা কখনোই বাচ্চাদের একা ছাড়েন না। শিরিন আক্তার বলেন, ‘আমরা তো আতঙ্কে থাকি, স্বাভাবিক সত্যি কথা যেটা।’

মিঠু নামের একজন বলছিলেন, ‘সারা বাংলাদেশে একটার পর একটা বাচ্চা হত্যা হচ্ছে, বাচ্চাদের নির্যাতন করা হচ্ছে, সরকার যেন এটার প্রতি একটু টেক কেয়ার করে। আজকে যে প্রাইম মিনিস্টার তাঁরও তো নাতি নাতনি আছে, তাদেরকে যেরকম সিকিউরিটি দিচ্ছে, যেভাবে থাকতেছে, আমরাতো চাই সাধারণ জনগণ হিসেবে আমাদের বাচ্চাকাচ্চাও সেরকম সিকিউরিটি পাক।’

আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, শিশু অপহরণ এবং হত্যার ঘটনার পেছনে চেনা পরিচিত লোকজনই বেশি জড়িত থাকে। এর পেছনে কাজ করে পারিবারিক, সামাজিক সমস্যা এবং কিছু ক্ষেত্রে অপরাধী চক্র জড়িত থাকে।  আর পুলিশকে না জানানোয় সমস্যা আরো গভীর হয়।

পুলিশের স্পেশাল ক্রাইম অ্যান্ড প্রটেকশন বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. জহিরুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, ‘সামাজিক যে অবক্ষয়ের কারণে এগুলো হচ্ছে তা কিন্তু পুলিশের একার পক্ষে দূর করা সম্ভব না।’

কারো সঙ্গে এরকম ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে জানানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ক্রিমিনালদের যখন আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারবো, সেটা দেখে ক্রিমিনালদের একটা ডেটেরেন্ট ইফেক্ট হবে। এবং সেটা থেকেই এ ধরনের অপরাধগুলো আস্তে আস্তে কমে যাবে বলে আমরা আশা করি।’

শিশু অপহরণ এবং হত্যার মতো অপরাধ কমাতে দ্রুত বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই দেখা দ্রুত বিচার হয়না।

শিশু সাদমানের মা পাখী আক্তার বলছেন, তার পুত্র হত্যারও দ্রুত বিচার হয়নি।  আটজন আসামির ছয়জনই জামিনে আছে।  হত্যার এক বছর ধরে মামলার তদন্ত চলছে ডিবিতে।

ছেলের ছবি হাতে নিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে পাখী বলেন, ‘বিচার হইলে বুঝতো মানুষ যে, এ কাজের জন্য এ বিচারটা হইছে।  তায় মানুষ ভয় পাইতো। আমার ছেলের বিচারডা পাইলাম না।’ সূত্র : বিবিসি
১১ ফেব্রুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে