শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬, ০১:৪১:০২

ভয়ঙ্কর ডাকাত সোনাই মিয়া

ভয়ঙ্কর ডাকাত সোনাই মিয়া

সিলেট থেকে : ভয়ঙ্কর ডাকাত সোনাই মিয়া। এক নামেই তাকে চিনেন সবাই। তার নেতৃত্বে রয়েছে ডাকাত বাহিনী। রয়েছে গরুচোর বাহিনীও। একটি নয়, দুটি নয়, তার বিরুদ্ধে রয়েছে প্রায় ২৫টি মামলা। এর মধ্যে চারটি মামলায় রয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।

এতসব অপরাধের মূল কারিগর হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরেই ছিল সোনাই ডাকাত। কিন্তু শেষরক্ষা হলো না তার। গোয়াইনঘাট পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে সে। আর ধরা পড়ার পর তার ডাকাতদলের সদস্যরা গাঢাকা দিয়েছে। গরুচোর বাহিনীও চলে গেছে আড়ালে। এতে অনেকটা স্বস্তি ফিরেছে সিলেটের হাওরবেষ্টিত সীমান্ত এলাকায়।

সিলেটের গোয়াইনঘাটের তোয়াকুল ইউনিয়ন। ভারত সীমান্তঘেঁষা এলাকা। পাশেই সিলেটের আরেক উপজেলা কোম্পানীগঞ্জ। হাওরবেষ্টিত তোয়াকুল ইউনিয়নে সোনাই বাহিনীর বিরুদ্ধে অ্যাকশনে প্রশাসন অনেকটা অসহায়। যোগাযোগের দুর্গম এলাকা হওয়ায় পুলিশের অভিযান চলে ধীরগতিতে। অনেকটা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ওই জনপদে বহু আগে থেকেই অপরাধীদের বসবাস।

কোনো কোনো পরিবারের পিতা, পুত্রও ডাকাতিসহ নানা অপরাধে জড়িত। ওই এলাকার লাকি গ্রামে ডাকাত সোনাইর বাস। বাড়িও বানিয়েছে জঙ্গলের কিনারে। সালুটিকর থেকে বাড়ি পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটারজুড়ে থাকে তার সোর্স মোতায়েন। পুলিশ কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের পূর্বেই তার কাছে পৌঁছে যায় মোবাইলবার্তা। অভিযানের আগেই চলে যায় জঙ্গলে। ফলে তাকে ধরা সম্ভব হয় না।

সর্বশেষ গেল বছর ছদ্মবেশী পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিল সোনাই ডাকাত। ধরা পড়লেও সে বেরিয়ে আসে সহজে। আর এসেই পুনরায় শুরু করে ডাকাতিসহ অপরাধ কর্ম। ২০০৯ সালের শুরুতেই সোনাই ডাকাত ও তার বাহিনীকে দুর্বল করার প্রক্রিয়া শুরু করে পুলিশ। ওই সময় পুলিশ তার বাহিনীর কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছিল। পরবর্তীতে সোনাই ডাকাতের নেতৃত্বে হামলা হয়েছিল পুলিশিং কমিউনিটি সদস্য তাহির আলীর ওপর।

ওই সময় তাহির আলীর পা ভেঙে দেওয়া হয়। কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। এর ফলে সোনাই ডাকাতের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন না লাকী গ্রামসহ আশপাশ এলাকার লোকজন। তবে স্থানীয়রা জানান, সোনাই ডাকাতের রয়েছে বাহিনী। এ বাহিনীতে রয়েছে ২০ থেকে ২৫ জন ডাকাত। এদের অনেকের বাড়ি ওই এলাকায়।

গোয়াইনঘাট, সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ ও স্থানীয় সড়কে যানবাহনে ডাকাতি করে বেড়ায় সোনাই ডাকাত। বিশেষ করে বর্ষাকালে তার নেতৃত্বে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়কে যানবাহনে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ফলে ওই মৌসুমে সন্ধ্যার পর সড়কে যানবাহন চলাচল কমে আসে। বারবার পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিয়েও ওই সড়কে ডাকাতি রোধ করা সম্ভব হয়নি।

এর বাইরে সোনাই ডাকাতের নেতৃত্বে রয়েছে গরুচোর বাহিনী। ওই বাহিনীর সদস্যরা গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ থেকে গরু চুরি করে নিয়ে আসে। এরপর এসব গরু রাখা হয় জঙ্গলে। এ ব্যাপারে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোনো ফল পাননি ভুক্তভোগীরা। ফলে বাধ্য হয়েই মুক্তিপণ দিয়ে গরু ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন লোকজন। পাশাপাশি ভারত থেকেও চোরাই গরু নিয়ে আসা হয় সোনাই ডাকাতের আস্তানায়। রাতে এসব গরু পাচার হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে।

সিলেটের গোয়াইনঘাটের সালুটিকর তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ জানিয়েছে, সোনাই ডাকাত সম্প্রতি বেপরোয়া কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। তাকে গ্রেপ্তার করতে দুই মাস ধরে কাজ শুরু করেছে পুলিশ। প্রচুর টাকা ব্যয় করে সোর্স নিয়োগ করা হয় এলাকায়। গত ১৫ দিনে বিভিন্ন সময় তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ দল তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালায়। কিন্তু কোনোবারই তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

অবশেষে বুধবার বিকাল ৫টায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সালুটিকর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এস-আই খসরুল আলম বাদল, এএস আই শফিকুর রহমানসহ মিত্রিমহল গ্রামে অভিযান চালায়। ওই সময় তারা ঘেরাও করে সোনাই ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে।

পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারের সময় সোনাই সশস্ত্র অবস্থা ছিল না। এ সময় তার বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি ছিল কম। ফলে তাকে গ্রেপ্তারের পর দ্রুত পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রধান এস আই খসরুল আলম বাদল গতকাল বিকালে জানিয়েছেন, দুই মাস ধরে সোনাই ডাকাতকে গ্রেপ্তারে সোর্স নিয়োগ করা হয়। এরপর থেকে সে পুলিশের নজরদারির মধ্যে ছিল। অবশেষে বুধবার তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তারের পর সোনাই ডাকাত গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ এলাকার বিভিন্ন ডাকাতির ঘটনা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। এদিকে, সোনাই ডাকাত গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় এলাকার শত শত মানুষ তাকে দেখতে তদন্ত কেন্দ্রে ভিড় জমান। এ সময় স্থানীয়রা জানান, সোনাই ডাকাত ভয়ঙ্কর। তার নিয়ন্ত্রিত এলাকা সে-ই রাজা। চুরির মালামাল ছাড়িয়ে আনতে গেলে তার বাহিনীর হাতে নানাভাবে হতে হয় অপদস্থ। আর থানায় অভিযোগ করলে দেয়া হয় হুমকি।

সোনাই ডাকাত গ্রেপ্তারের পর এলাকার স্বস্তি ফিরেছে বলে জানিয়েছেন তারা। বলেন, গ্রেপ্তারের পর থেকে এলাকা ছাড়া রয়েছে সোনাইয়ের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা বাহিনীর সদস্যরা। গোয়াইনঘাট থানার ওসি (তদন্ত) জাহাঙ্গীর হোসেন সর্দার জানিয়েছেন, তোয়াকুল ইউনিয়নের লাকি গ্রামের মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে গ্রেপ্তারকৃত সোনাই ডাকাতের বিরুদ্ধে চারটি ওয়ারেন্ট রয়েছে। এছাড়া আরও ২৫টি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, সোনাই ডাকাতের বিরুদ্ধে মামলা দ্রুত তদন্ত করে চার্জশিট প্রদান করতে চাইছি, যাতে তাকে দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করা যায়।

১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস  

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে