শুক্রবার, ১০ মে, ২০২৪, ১১:১০:২৬

হঠাৎ যত হলো ফার্মের মুরগির ডিম

হঠাৎ যত হলো ফার্মের মুরগির ডিম

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : সারা দেশে মাসখানেক ধরে চলা দাবদাহে খামারিদের মুরগি মারা যাওয়ায় বাজারে মুরগি ও ডিমের সরবরাহ কমেছে। এতে মুরগি ও ডিমের দাম বেড়েছে। 

একই সঙ্গে প্রচণ্ড গরমে কৃষকের ক্ষেতের সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সরবরাহ কমে বাজারে দাম বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, এখন বাজারে মুরগি, ডিম ও সবজির সরবরাহ কম। এ কারণে তিনটি নিত্যপণ্যেরই দাম বাড়তি।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরা ও বাড্ডা কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারগুলোতে ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি ডজনে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ডজনপ্রতি ছিল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা। 

ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ২২০ থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চলতি সপ্তাহে সোনালি মুরগির দাম না বাড়লেও গত সপ্তাহে কেজিতে ৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ৩৭০ থেকে ৪০০ টাকায় উঠে যায়।

এখনো বাজারে আগের বাড়তি দামেই সোনালি মুরগি বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে। বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

রাজধানীর বাড্ডার ডিম বিক্রেতা মো. মিরাজ বলেন, ‘গত সপ্তাহে প্রতি ডজন ফার্মের ডিম ১২০ থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি হয়। এখন পাইকারিতে দাম বাড়ার কারণে খুচরায় প্রতি ডজন ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি করছি।

গত সপ্তাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ডিমের চাহিদা কম ছিল, তাই দামও কম ছিল। এখন আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হওয়ায় ডিমের চাহিদা বাড়লেও বাজারে সরবরাহ কম। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে।’

বাংলাদেশ এগ প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তাহের আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ‘মূলত উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কারণে ডিমের দাম বেড়েছে। ডিমের সরবরাহ কম থাকলে বাজারে এমনিতেই দাম বাড়তি থাকে। খামারিরা উৎপাদনে ফিরতে পারলে ডিমের দাম আবার কমে আসবে।’

কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের মেসার্স মা আয়েশা ব্রয়লার হাউসের ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন  বলেন, ‘গত সপ্তাহে সোনালি মুরগির দাম বাড়লেও ব্রয়লার মুরগির দাম অপরিবর্তিত ছিল। এবার ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মূলত খামারে মুরগি কমে যাওয়ায় বাজারে সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এতে দাম বাড়তি।’

রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা টিসিবির দৈনিক বাজারদর প্রতিবেদনেও মুরগি ও ডিমের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি দেখা গেছে। গতকালের বাজারদরের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাজারে এখন ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকায়, গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ১৮৫ থেকে ২০০ টাকায়। ফার্মের মুরগির প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৭ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা।

বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) গত বছরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সাধারণত প্রতিদিন চার কোটি ডিম উৎপন্ন হয়। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে, উৎপাদনের পরিমাণ আরেকটু বেশি।

পেঁপে ৮০ টাকা কেজি
রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে সরবরাহ কমার অজুহাতে সব ধরনের সবজির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা। টমেটো ৬০ টাকা, বেগুন মানভেদে ৮০ থেকে ১০০ টাকা, পেঁপে ৮০ টাকা, পটোল ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১২০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চালকুমড়া প্রতিটি ৫০ টাকা।

বাড্ডা বাজারের সবজি বিক্রেতা আবুল খায়ের বলেন, গত দুই সপ্তাহের প্রচণ্ড তাপমাত্রার কারণে কৃষকের  ক্ষেতের সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে ঢাকার বাজারে সবজির সরবরাহ কিছুটা কমেছে। মূলত এ কারণেই সবজির দাম বেড়েছে।

হিলিতে ওঠানামা করছে পেঁয়াজের দাম
ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার খবরে রাজধানীর বাজারে পেঁয়াজের দরে কোনো প্রভাব নেই। আগের বাড়তি দামেই দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি রসুন প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা এবং আমদানি করা রসুন প্রতি কেজি ২৪০ টাকায় খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

আমদানি পাঁচ মাস বন্ধ থাকার পর ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে। তবে রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় বন্দরের আমদানিকারকরা পেঁয়াজ আমদানি করেননি।

পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর আমদানি হবে—এমন খবরে বাংলাহিলি বাজারে দেশীয় পেঁয়াজের দাম ওঠানামা করেছে। গতকাল দুপুরে হিলি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারকরা জানান, ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর এরই মধ্যে ২০ জন আমদানিকারক নতুন করে ২৭ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি পেয়েছেন। পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারত সরকারের আরোপ করা ৪০ শতাংশ শুল্ক এখনো অব্যাহত আছে। ৪০ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার না করলে পেঁয়াজ আমদানি করা সম্ভব হবে না। ৪০ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করে প্রতি কেজি পেঁয়াজ আমদানিতে অতিরিক্ত ২৫ টাকা গুনতে হবে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে