শুক্রবার, ০৫ জুলাই, ২০২৪, ০২:৩৭:০৫

বাবার খুঁজে পথে পথে ঘুরছেন রূপা, কাঁদতে কাঁদতে যা জানালেন

বাবার খুঁজে পথে পথে ঘুরছেন রূপা, কাঁদতে কাঁদতে যা জানালেন

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ‘বাবার চেহারা আবছা আবছা মনে আছে, পরিষ্কার মনে নাই। বাবার কথা যখন কেউ জিজ্ঞেস করেন তখন কলিজাটা ফেটে যায়। সব সময় বাবার কথা মনে পড়ে। বিভিন্ন সমস্যার কারণে খুঁজতে বের হতে পারিনি।

ইদানীং বাবার কথা খুব বেশি মনে পড়ছিল। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে বাবার প্রসঙ্গ উঠলে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মুখে কটু কথা শুনতে হয়েছে। কিন্তু আমি তো জারজ সন্তান নই। আমার তো বাবা আছে।

বাবা তো কত বছর আমাদের সাথে ছিলেন, আমার নানা বাড়ি এলাকায় থেকে ব্যবসা করেছেন। কত মানুষ চেনে তাকে। বাবাকে খুঁজতে এই প্রথম চাটমোহরে এসেছি।’

কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন নড়াইল থেকে পাবনার চাটমোহরে বাবাকে খুঁজতে আসা রূপা খাতুন (২৫) নামের এক তরুণী।

তিনি চাটমোহরের বিভিন্ন এলাকায় খুঁজে বেড়াচ্ছেন তার বাবাকে। গতকাল চাটমোহর উপজেলা গেট এলাকায় দেখা যায় তাকে। রুপা নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার ছোট কালিয়া এলাকার বাসিন্দা। তার বাবার নাম নুর ইসলাম মোল্লা।

কাঁদতে কাঁদতে রুপা জানান, মা ও মামাদের কাছ থেকে জেনেছেন, এখন থেকে প্রায় ৩০-৩৫ বছর আগে তার বাবা চাটমোহরের নুর ইসলাম মোল্লা নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার শুক্তগ্রামে যান।

শুক্তগ্রামের গফফার আলী নামক এক ব্যক্তির সঙ্গে ভাইয়ের সম্পর্ক স্থাপন করে তার আশ্রয়ে বসবাস শুরু করেন। দুই-তিন বছর গফফার আলীর বাড়িতেই বসবাস করেন নুর ইসলাম। এ সময় ছোট কালিয়া গ্রামের আলতাব মোল্লার মেয়ে রহিমা বেগমকে (রুপার মা) বিয়ে করেন। বিয়ের পর আলতাব মোল্লার বাড়িতে স্ত্রীসহ বসবাস করতে থাকেন। এলাকায় একটি সবজির দোকান দেন তিনি। বড় কালিয়া এলাকায় ছয় শতাংশ জায়গাও কেনেন। নুর ইসলাম মোল্লা এবং রহিমা বেগমের সংসারে রুপা খাতুন এবং নুরজাহান নামে দুই কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। ভালোই কাটছিল তাদের দিন।

শুক্তগ্রাম, ছোট কালিয়া ও বড় কালিয়া এলাকায় ১৪-১৫ বছর বসবাসের পর রুপার বয়স যখন চার বছর এমন সময় একদিন পাতা কপি বিক্রি করতে খুলনায় যান নুর ইসলাম মোল্লা। এটি প্রায় ২০ বছর আগের কথা। পাতা কপি বিক্রির পর আর বাড়িতে ফেরেননি তার বাবা। সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজ-খবর করেও তার মা, মামারা তার বাবার সন্ধান পাননি।

অভিমানে রহিমা বেগমও কখনও স্বামীকে খুঁজতে আসেননি চাটমোহরে। তারা শুধু এটুকু শুনেছেন নুর ইসলাম মোল্লার বাড়ি চাটমোহরের দিয়ার বা দিয়ারা বা এমন নামের কোনো গ্রামে। রহিমা বেগম তার মেয়ে রুপা ও নুরজাহানকে নিয়ে ভাইয়ের আশ্রয়ে রয়েছেন। দুই মেয়েকে বিয়েও দিয়েছেন।

রুপা জানান, বাবার বয়স এখন ৫০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হবে। পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চির মতো লম্বা হবে। মুখে ছোট ছোট হালকা চাপ দাড়ি ছিল। বাবার কোনো ছবিও নেই তাদের কাছে। বাবা আমার মা ও মামাকে চাটমোহরে তার বাড়ি বলেছে এটা সত্য না মিথ্যা তাও আমাদের জানা নেই। বাবা বেঁচে আছেন না মরে গেছেন তাও আমরা জানি না। যতদূর শুনেছি আমার দাদার নাম আব্দুল মোল্লা। বাবাকে খুঁজে না পেলে মনে হচ্ছে আমিই মরে যাই। রুপা তার বাবাকে খুঁজে পেতে সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে