এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : রাতে বাড়িতে পানি উঠছে। ছৈল-পৈল নিয়ে পাশের উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছি। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ঘর-বাড়ি সব পানিতে ভেসে গেছে। কিছুই আটকাতে পারিনি।
এখন স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে কি খাব? কোথায় থাকব? আমার আর যাওনের কোনো জায়গা নেই, আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম। কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের আব্দুর রশিদ (৪৫)।
আব্দুর রশিদের বাড়ি ওই ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদবেষ্টিত ফকিরের চরে। চার ছেলে ও এক মেয়ের জনক রশিদ পেশায় দিনমজুর।
জানা গেছে, গত চারদিন ধরে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি হু হু করে বেড়েই চলছে। পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার উলিপুর ও চিলমারী উপজেলায় অন্তত ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যার সঙ্গে গবাদিপশুর খাবারের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি এসব মানুষ বাঁধ রাস্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে তাদের গৃহপালিত পশু কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
শুক্রবার (৫ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ফকিরের চরে গিয়ে দেখা যায়, পানির তোড়ে ভেসে গেছে আব্দুর রশিদের ঘরবাড়ি। স্থানীয়দের সহযোগিতায় অবশিষ্ট সরঞ্জামাদি আটকানোর চেষ্টা করছেন। তবে শেষ পর্যন্ত কয়েকটি টিন ছাড়া কিছুই আটকানো সম্ভব হয়নি।
আব্দুর রশিদ বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি।
এ পর্যন্ত ছয়বার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছি। এক বছর আগে ফকিরের নতুন চরে বসতি গড়ে তুলেছি। রাতে পানি বাড়ার কারণে পাশের চরের উঁচু স্থানে আশ্রয় নিই। কিন্তু হঠাৎ পানির তীব্র স্রোত শুরু হয়। ওই চরে সদ্য নির্মিত একটি বাঁধ ভেঙে যায়। শুক্রবার সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি দুটি টিনের ঘর, বিছানা, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, কাপড়সহ সব ভেসে গেছে। পরনের লুঙ্গিটা ছাড়া আর কিছুই রইল না।’
আব্দুর রশিদের স্ত্রী হাছিনা বেগম বলেন, এক বস্তা চাল, ১৫ কেজি আটা, কাউন, রান্না করার হাড়ি-পাতিল কিছুই নেই। সব পানিতে ভেসে গেছে।
ফকিরের চর এলাকার বাসিন্দা মোজাফ্ফর আলী জানান, পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র স্রোত শুরু হয়। পানির স্রোতে তার একটি ঘর ভেসে গেছে। পরে অন্য ঘরের বেড়া খুলে দেওয়া হলে কিছুটা রক্ষা পান তিনি।
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান বলেন, আমরা তাকে (আব্দুর রশিদ) খাদ্য সহায়তা করেছি। এ ছাড়া পরিবারটির নিরাপদ বাসস্থানের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।