মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০১:০২:২৯

জানেন হঠাৎ চাঁদপুরে ইলিশের কেজি কত হলো?

জানেন হঠাৎ চাঁদপুরে ইলিশের কেজি কত হলো?

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ভারতে রফতানির খবরে চাঁদপুরের পাইকারি বাজারে ইলিশের দাম বেড়ে গেছে। কেজিতে দাম বেড়েছে দেড় থেকে ২০০ টাকা।

রসনায় তৃপ্তি মেটাতে রূপালি ইলিশের স্বাদ কে না পেতে চান। কিন্তু উচ্চমূল্যের বাজারে ইলিশের সেই স্বাদ আর গন্ধ সত্যি এখন অনেকেরই কাছে অধরা। 

বিদ্যুৎ বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী কামরুল হাসান। একসময় চাঁদপুরেই পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। বেতন পেয়ে সোজা চলে যেতেন পাইকারি মাছ বাজার বড়স্টেশনে। তখন মৌসুমের এই সময় নিজের পছন্দের ইলিশ কিনতেন। কারণ, ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকায় একাধিক ইলিশ বাজার থেকে নিয়ে বাসায় ফিরতেন। তবে, সেই সবই এখন অতীত।

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুদাফরগঞ্জ থেকে পুরানো কর্মস্থল চাঁদপুরে ইলিশ কিনতে আসেন প্রকৌশলী কামরুল হাসান। পকেট ভরে টাকা নিয়ে এসেও বড় আকারের এক হালি ইলিশ কিনতে হিমশিম খেতে হয়েছে তাকে। বললেন, ‘ভারতে ইলিশ রফতানি হবে এবং ৩ সপ্তাহ পর মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে। তাই চলে আসছি ইলিশ কিনতে। কিন্তু আগের সেই দিন আর নেই।’
 
শুধু প্রকৌশলী কামরুল হাসানই নন, বড়স্টেশনের পাইকারি বাজারে ইলিশ কিনতে আসা আরও অনেকেরই একই অবস্থা। ভারতে ইলিশ রফতানি হবে, এমন খবরে চাঁদপুরে পাইকারি বাজারের সঙ্গে ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা বাজারেও তার প্রভাব পড়েছে। এতে সাধারণ মানুষ ইলিশের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দূরদূরান্ত থেকে আসা অনেকেই মাছ না কিনে শূন্য হাতে ফিরে যান। আবার কেউ কেউ দরদামও করছেন। সোমবার চাঁদপুর বড়স্টেশন ইলিশের পাইকারি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

রসনায় স্বাদের ভিন্নতা আনতে ইলিশের বিকল্প নেই। আর সেই স্বাদ ও গন্ধের জন্য চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনার রূপালি ইলিশের জুড়িই আলাদা। তবে এখন সেই আগের মতো চাঁদপুরের এই দুই নদীতে ইলিশ মিলছে না। কিছু মিললেও সাগর ও উপকূলে ধরা ইলিশের চেয়ে স্থানীয় এসব নদীর আকারভেদে ইলিশের দরদামও বেশ চড়া।
 
বড়স্টেশনের মাছ ব্যবসায়ী সুমন খান জানান, পদ্মা ও মেঘনায় ধরা বড় আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ২১০০-২২০০ টাকা। ঠিক একই আকারের সাগর ও উপকূলের ইলিশ ১৮০০-১৯০০ টাকা।

সম্রাট বেপারী নামে আরেক ব্যবসায়ী জানান, ছোট, মাঝারি এবং বড় আকারের প্রতিমণ ইলিশ ৪০ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। নোয়াখালীর চেয়ারম্যানঘাট, লক্ষ্মীপুরের রামগতি, ভোলার চরফ্যাশন থেকে বেশকিছু ইলিশের চালান নিয়ে বেপারীরা চাঁদপুরে আসেন।

তাদের সাফ বক্তব্য, এখানে দরদাম করে ভালো পাওয়া যায়। তার জন্যই মূলত বড়স্টেশন পাইকারি বাজারে তারা আসছেন ইলিশের চালান নিয়ে। এই মাছ বাজারের পাশে নদীরঘাটে মাছ ধরার ইঞ্জিনচালিত কিছু নৌকাও দেখা গেছে। যেগুলোতে স্থানীয় জেলেরা পদ্মা ও মেঘনায় ধরা ইলিশ নিয়ে ফিরেছেন। তবে তা পরিমাণে তেমন নয়।

এদিকে, ভারতে ইলিশ রফতানির সিদ্ধান্তকে ভালোভাবে নেননি ক্রেতারা। বড়স্টেশনে ইলিশ ক্রয় করতে আসা অনেকেই। তাদের কথা, ‘আমরাই তো ইলিশ খেতেই পারি না। তার ওপর আবার রফতানি।’

ইলিশ ব্যবসায়ী শামীম জমাদার বলেন, দেশের ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না। এরমধ্যে ভারতে রফতানি! তাই সঙ্গত কারণে, আকারভেদে দরদামও বেড়েছে।

চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সভাপতি আব্দুর বারী জমাদার মানিক বলেন, চাঁদপুর থেকে এক যুগ আগে সরাসরি ভারতে ইলিশ রফতানি করা হতো। কিন্তু এখন আর তা হচ্ছে না। তবে ঢাকার কিছু ব্যবসায়ী চাঁদপুর থেকে ইলিশ কিনে ভারতে রফতানি করছে। এতে চাঁদপুরে মাছ ব্যবসায়ীদের তেমন কাজে আসেনি। এমন পরিস্থিতিতে বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলে এবং চাঁদপুর থেকে সরাসরি ইলিশ ভারতে রফতানি হলে, মাছ ব্যবসায়ীরা লাভবান হতো। 

তিনি আরও জানান, এখন ইলিশের ভরা মৌসুম। কিন্তু বাজারে সরবরাহ সবমিলিয়ে প্রতিদিন ৬শ’ মণ হবে। অথচ ৩-৪ বছর আগেও আড়াই থেকে ৩ হাজার মণ ইলিশ বেচাকেনা হতো চাঁদপুর বড়সেটশনে।

অন্যদিকে, সোমবার চাঁদপুরের বড়স্টেশন পাইকারি বাজার থেকে একমণ পরিমাণ প্যাকেজ করে প্রায় ৬০০ মণ ইলিশ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে এসব ইলিশ দেশের বাজারের জন্য নাকি ভারতে রফতানির জন্য পাঠানো হয়েছে; তার কোনো তথ্য দেননি মাছ ব্যবসায়ীরা।

বর্তমানে সাগর, উপকূল এবং নদনদীতে ইলিশের সঙ্কট এবং প্রাচুর্য নিয়ে কথা বলেন দেশের বিশিষ্ট মৎস্য বিজ্ঞানী ও ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘মৌসুমের এই সময় মরাকাটাল চলছে। সঙ্গত কারণে ইলিশের বিচরণ কমে গেছে। তাছাড়া নদনদীতে চর ডুবোচর এবং পানি দূষণ তো রয়েছেই।’

তবে হতাশ হওয়ার কারণ নেই বলেও আশার বাণী শোনান এই ইলিশ গবেষক। তিনি বলেন, দ্রুত পরিভ্রমণশীল বিচিত্র স্বভাবের এই মাছ ঝাঁক বেঁধে সাগর ও নদীতে ছুটে বেড়ায়। আর পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলে অবশ্যই এই মাছ জেলেদের জালে ধরা দেবেই। এতে জেলেদের হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই।

মা ইলিশ সংরক্ষণে আগামী ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ বিচরণ করে- দেশের এমন ৬টি অভয়াশ্রমে সবধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। ওই সময় ডিমওয়ালা মা ইলিশ ধরা, বিক্রয়, মজুদ ও পরিবহনও আইনত নিষিদ্ধ থাকবে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে